স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে মোঃ আক্কাস মিয়া-(৪২) নামে এক কৃষক নিহত এবং অন্তত ৪০জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) সকালে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জেলার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের মহিষবেড় গ্রামে এবং শিশুদের মধ্যে ঝগড়াঝাটির জের ধরে একইদিনে জেলার বিজয়নগর উপজেলার চর-ইসলামপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে পৃথক এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ তিন দাঙ্গাবাজকে আটক করেছে। নিহত আক্কাস আলী মহিষবেড় গ্রামের মারাজ মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, পাওনা টাকা ও রাস্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মহিষবেড় গ্রামের টোকাই গোষ্ঠীর হোসেন আলীর সাথে একই এলাকার ক্বারী গোষ্ঠীর ইমাম হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ইতিপূর্বে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আদালতে উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলা-মোকদ্দমা চলমান।
এই বিরোধের জের ধরে গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে ক্বারী গোষ্ঠীর কৃষক আক্কাস মিয়া জমিতে কাজ করতে যাবার পথে টোকাই গোষ্ঠীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তার উপর হামলা করে।
খবর পেয়ে ক্বারী গোষ্ঠীর লোকজনও  দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের আক্কাস মিয়াসহ ২০জন আহত হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন দাঙ্গাবাজকে আটক করে।
গলায় টেটাবিদ্ধ অবস্থায় আহত আক্কাস মিয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
আহতদের মধ্যে ১৪ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়। বাকীরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়াদের মধ্যে ৮জনের অবস্থা গুর“তর। এরা হলেন, নূর আলম মিয়া-(৪৫), মনোয়ার মিয়া-(৫০), শাহজাহান মিয়া-(৬০), ইমাম হোসেন-(৩৮), ফাতেমা বেগম-(২২), মাহাবুব-(৪২),আব্দুস সামাদ-(২৮) ও শাহ্ আলমগীর-(২৯)। তাদের মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুল হক বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তিন দাঙ্গাবাজকে আটক করা হয়েছে। নিহত আক্কাস মিয়ার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোন মামলা হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ এনামুল হাসান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই আক্কাস আলী মারা গেছেন।
এদিকে  শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে বিজয়নগর উপজেলার চর-ইসলামপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ২০জন আহত হয়েছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে ইসলামপুর গ্রামের একটি বিলের পাড়ে শিশুরা খেলা করার সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে সেখানে গ্রামের উত্তরপাড়ার চৌধুরী বাড়ির তোরাব আলীর স্ত্রী আরজিনা খাতুন-(৩৫) উপস্থিত হয়ে দক্ষিণ পাড়ার জামাল মিয়াকে নাম ধরে গালাগালি করেন। দক্ষিণপাড়ার কয়েকজন নারী আরজিনার গালি শুনে বাড়িতে গিয়ে জামাল মিয়াকে জানালে জামাল মিয়ার বাড়ির লোকজন উত্তরপাড়ায় তোরাব আলীর বাড়িতে হামলা করে। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। 
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারীসহ ২০জন আহত হয়।
আহতদের মধ্যে ইয়াকুব আলী-(৩০), তোরাব আলী- (৪০), নোয়াজ আলী-(৪৫), বাবুল মিয়া-(১৯), আশিক মিয়া-(৩৭), অন্তর আলী-(১৫), গোলাম আলী-(৩৫), হুমায়ুন কবির- (২৫) ও তানিয়া বেগম-(২৫) কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।