সংবাদ শিরোনাম
নাসিরনগরে নায়েব উল্লাহ খুনের মামলায় সাংবাদিক হান্নানসহ ৬ জনের নাম প্রত্যাহার করে আদালতে পুলিশের চার্জসীট প্রেরণ

নাসিরনগরে নায়েব উল্লাহ খুনের মামলায় সাংবাদিক হান্নানসহ ৬ জনের নাম প্রত্যাহার করে আদালতে পুলিশের চার্জসীট প্রেরণ

নাসিরনগর উপজেলা প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল ও শ্রীঘর দুই গ্রামের লোকের মাঝে লঙ্গন নদীরপাড়ে সংঘর্ষের দিন সংঘর্ষের ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩ কিঃমিঃ দুরে গ্রামের ভেতর মসজিদের বারান্দায় মাথা ঘুড়ে পরে গিয়ে মারা যাওয়া মৃত সানু মিয়ার ছেলে নায়েব উল্লাহ খুন হয়েছে মর্মে প্রচারনা চালিয়ে একটি সংঘবদ্ব চক্র তাদের বাণিজ্যিক পায়দা হাসিল, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটানো ও মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার হীন উদ্দেশ্যে এশিয়ান টেলিভিশন ও দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার নাসিরনগর উপজেলা প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম নাসিরনগর উপজেলা শাখার সভাপতি সংঘর্ষের লাইভ ধারণ করা সাংবাদিক মোঃ আব্দুল হান্নান,তার দুই ভাই সহ আশুরাইল গ্রামের অনেক নিরাপরাধ লোকসহ ৪৯ জনের নামে নিহত নায়েব উল্লার ভাই সাজু মিয়া বাদী হয়ে নাসিরনগর থানার একটি মিথ্যা খুনের মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৯, জি আর ৬৮, তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২২ইং।
মামলার পর নিহতের মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য পাঠানো হলে বাংলাদেশ পুলিশের চট্রগ্রাম বিভাগের সিআইডির সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন।সিআইডির ভিসারার রিপোর্টে বলা হয়েছে নায়েব উল্লার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং প্যাথলজি বিভাগের আরেক রিপোর্টে বলা হয়েছে নিহত নায়েব উল্লাহর হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে। তাছাড়াও ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ও সুরতহাল রিপোর্টেও এ সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে।
মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে নায়েব উল্লার খুন প্রমানিত না হওয়ায় মিথ্যা খুনের মামলার দায় থেকে সাংবাদিক মোঃ আব্দুল হান্নান সহ আরো ৬ জনের নাম বাতিলের প্রস্তাব করে সম্প্রতি নাসিরনগর থানা পুলিশ মারামারিসহ অন্যান্য ধারায় আদালতে ১১৭/১৯ একটি চার্জসীট প্রেরণ করেন।
নায়েব উল্লার প্রতিবেশী শ্রীঘর সাচ্চার পাড়ের দুলা মিয়ার মেয়ে মাসেরা বেগম জানায়,ঘটনার সময় মাসেরা বেগম, তার মাও বোনকে নিয়ে মসজিদের পাশে ধানের খড় শুকাচ্ছিলেন। এ সময় নায়েব উল্লাহ মানুষকে অশালিন ভাষায় গালি গালাজ করতে করতে মসজিদে গিয়ে ইমামকে খোঁজাখোঁজি শুরু করে। পরে ইমাম সাহেবকে না পেয়ে নিজেই মসজিদের মাইক হাতে নিয়ে শ্রীঘর গ্রামবাসীকে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে নদীর পাড়ে ঝগড়ায় অংশ নেয়ার জন্য প্রচন্ড গরমের ভেতর স্বজোরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে তাকে। এক সময় চিৎকার করতে করতে নায়েব উল্লাহ হঠাৎ মাথা ঘুরে মসজিদের বারান্দায় পরে ছটপট করতে শুরু করে। এ সময় মাসেরা বেগম,তার মা বোন ও প্রতিবেশী আরাে কয়েকজন লোকজন দৌড়ে এসে নায়েব উল্লার মাথায় পানি দিয়ে নাসিরনগর হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য রওয়ানা দিলে হাসপাতালে যাবার আগে রাস্তাই নায়েব উল্লাহর মৃত্যু হয়। তাছাড়াও জুর মিয়া,নায়ের মিয়া সহ নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক শ্রীর গ্রামের আরো বেশকিছু লোকজন জানান, নায়েব উল্লাহ যে মসজিদে মারা গেছে তা সমস্ত গ্রামবাসী এমনকি পার্শ্ববর্তী ইছাপুর আশুরাইল গ্রামের ও অনেকেই জানেন।
শ্রীঘর সাচ্চার পাড়েরর মৃত বলাই মিয়ার ছেলে মোঃ আরিছ মিয়া সহ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো বেশ কয়েকজন এ প্রতিনিধিকে জানান,নিহত নায়েব উল্লা প্রবাসে থাকা কালে বাদী সাজু মিয়ার ছেলে নিহত নায়েব উল্লার স্ত্রী ৩ সন্তানের জননীকে পরকিয়া করে নিয়ে পালিয়ে যায়।খবর পেয়ে নায়েব উল্লাহ প্রবাসেই হার্ট এটাক করে।তারা বলেন ঘটনার প্রায় ১০/১৫ দিন আগেও নায়েব উল্লা হার্টএটাক করে একটি হাসপাতালের আই,সিও থেকে বেরিয়ে আসেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল ২০২২ রোজ মঙ্গলবার বেলা অনুমান আড়াই ঘটিকার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার লঙ্গন নদীর পাড়ে আশুরাইল গ্রামের পশ্চিম পাড়ের মৃত রাজু মিয়ার ছেলে মোঃ মারাজ মিয়া @সারাজ মিয়ার কাটা ধান ট্রাকে করে বাড়িতে নিয়ে দেয়ার জন্য শ্রীঘর গ্রামের সাচ্চার পাড়ের ট্রাক মালিক তাজুল ইসলামের ছেলে জুনাইদ মিয়ার সাথে কথা বার্তা হয়।জুনাইদ প্রতি ট্রাকের ভাড়া বাবদ ৬ শ টাকা আর মারাজ @সারাজ মিয়া প্রতিট্রাক কাটা ধান ৫০০ শত টাকা দিবে বলে জানায়।এ নিয়ে দুই জনের মাঝে দর কষাকষির এক পর্যায়ে জুনাইদ মারাজের ধান ট্রাকে না তুলে অন্যের ধান ট্রাকে ভর্তে শুরু করে।এ নিয়ে জুনাইদ ও মারাজ মিয়ার মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হলে পাশে তাকা আশুরাইল গ্রামের মৃত ইউনুছ মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া দৌড়ে এসে মারাজ মিয়ার পক্ষ নেয়। এই নিয়ে ৩ জনের মাঝের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নদীর পাড়ে থাকা দুই গ্রামের লোকজনের মাঝে সংর্ঘষ বাধে। প্রায় আধা ঘন্টা ব্যাপী সংর্ঘষে দুই গ্রামের প্রায় ২০ জন লোক আহত হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মোঃ সাজু মিয়ার সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাংবাদিক আব্দুল হান্নান ও তার দুই ভাইকে কেন এ মামলায় আসামী করা হলো জানতে চাইলে,বাদী সাজু মিয়া বলেন হান্নান লাইভ করার সময় লাইভে শুধু শ্রীঘরের লোকজনকে দেখিয়েছে আশুরাইলের কোন লোককে দেখায়নি। সে মিথ্যা সংবাদ ও লাইভ প্রচার করেছে,তাছাড়াও হান্নান একজন সাংবাদিক হিসেবে মামলাটি সমাধানের কোন চেষ্টা না করে মারামারি করার অর্ডার দেয়ার কারনে তাকে আসামী করা হয়েছে বলে জানান সাজু ।পরে সাজু আরো বলেন আমার ভাই মারা গেছে,আমাদের মাথা ঠিকছিল না,কে কিভাবে সাংবাদিক হান্নানকে আসামী করেছে আমি জানি না।বাদী আরো বলেন আমি মাত্র একদিন পুলিশ নিয়ে আসামীদের বাড়িতে গিয়ে ছিলাম। দানা,মোজাম্মেল চক্রটি আমাকে বার বার মামলা চাপাতে বলে।কিন্তু আমি তাদের কথা শুনিনি।কারন মামলা চাপাতে গেলে চক্রটি আমাকে বলে টাকা দাও আবার অন্যদিকে পুলিশ দিয়ে আসামীদের হয়রানী করে তাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করবে। আমি মামলা চাপাতে যাইনা।
মিথ্যা খুনের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক মোঃ আব্দুল হান্নান তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেন, এই মিথ্যা খুনের মামলার কারনে তার শারীরিক,মানষিক,আর্থিক, ব্যবসায়ীক সব দিকে বিরাট ক্ষতি হয়েছে।তিনি আরো বলেন আমাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদা পুরন না করতে পারা আমার দুই নিরপরাধ ভাইকে চার্জসীট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিক হান্নান আরো বলেন বর্তমানে তিনি ও তার পরিবারের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।সংঙ্গ বদ্ধ চক্রটি মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা বা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তার পরিবারের লোকজনের যে কোন সময় যে কোন ধরনের ক্ষতি সাধিত করতে পারে। সাংবাদিক আরো বলেন মিথ্যা খুনের মামলা আর তদন্তকারী কর্মকর্তার চাপে তিনি গত ১লা আগষ্ট রাতে হার্টএটাক করে নাসিরনগর হাসপাতালে ভর্তি হন। সাংবাদিক ও তার পরিবারের লোকজনের নিরাপত্তা বিধানে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ পুলিশের উর্ধতন মহলের সহযোগিতা কামনা করছেন।
মিথ্যা খুনের মামলার চার্জসীট প্রেরণের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাইল সার্কেলের সিনিয়রসহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনিছুর রহমান ও নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুল্লাহ সরকার আদালতে চার্জসীট প্রেরণের সত্যতা স্বীকার করে বলেন,খুন প্রমানিত না হওয়ায় মারামারি বা অন্যান্য ধারায় চার্জসীট প্রেরণ করা হয়েছে।অপরদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শ্রীবাস দাসের বক্তব্য রহস্যজনক মনে হচ্ছে। একই দিনে এবং একই সময়ে শ্রীবাস দাস বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন চার্জসীট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সকল সাংবাদিক ভাইদের বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে আপনাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সংবাদটি প্রকাশ করে সহযোগিতা করার জন্য।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com