মোঃ আব্দুল হান্নান//নাসিরনগর প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় ড্রেজারের মাধ্যমে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে সেখানে অবস্থিত, বাজার, শত বছর পুরনো কবরস্থান ও চর পিয়ালাপুর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার ভাই মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
৭ সেপ্টেম্বর বালু তোলার কাজে বাধা দিলে বালু উত্তোলনকারী স্থানীয় প্রভাবশালী মো. শাহেদুজ্জামান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের দক্ষিণদিয়া এলাকার গোয়ালনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন চর পিয়ালাপুর মৌজার মেঘনা নদী থেকে খনন যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রতিদিন লাখ টাকার বালু তুলে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মো. শাহেদুজ্জামান, মিন্দি আলী ও আশিকুজ্জামান।
গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারী মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে ওই প্রভাবশালী মহল প্রতিদিন বালু তুলছে বলে জানা গেছে। ফলে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়া চরটি নদীতে বিলীন হতে চলেছে। বাধা দিলেও প্রভাবশালীরা বালু তোলা বন্ধ করছে না। যার ফলে ইউনিয়নের গোয়ালনগর বাজার, শতবর্ষী সরকারি কবরস্থান ও কৃষকদের শত শত বিঘা জমি নদীতে বিলীনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ বালু তোলা বন্ধ করতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়ে উপজেলা সহকারী কশিনারের (ভূমি) কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ৭ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। তখন ইউ,পি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে বালু তোলা হচ্ছে বলে জানান উত্তোলনকারীরা।
বালু উত্তোলনে বাধা দিলে বালু তোলায় নিয়োজিত প্রভাবশালী মো. শাহেদুজ্জামান তখন গোয়ালনগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আতিকুর রহমানসহ দুই কর্মচারীকে মাটিতে পুঁতে ফেলারও হুমকি দেন বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে তিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। এলাকায় গিযে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেঘনার পাড় ঘেঁষে গোয়ালনগর ইউনিয়নের দক্ষিণদিয়া এলাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বালু তুলছেন স্থানীয় ওই প্রভাবশালী মহল। বালু উত্তোলনকারী মো. শাহেদুজ্জামান বলেন, চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলামের নির্দেশে বালু তোলা হচ্ছে। বাজারের সামনে নদীতে চর জেগে উঠেছে। চর পড়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে পানি সরে না। তাই ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা শুরু করেছি।
গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম নিজের ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে , নদীতে ঢেউয়ের কারণে বাজারের সামনে প্রায় এক কিলোমিটার চর জেগে উঠেছে বলে দাবী করেন।
এ বিষয়ে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফীর সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সত্যতা পেয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়। বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গেলে প্রভাবশালীরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বলে জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান সাংবাদিকদের বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের আটক করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল একাধিকবার সেখানে গেলেও কাউকে পায়নি। তবে এই বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply