সংবাদ শিরোনাম
আজি দুয়ারে দাঁড়ায়ে বর্ষাদূতের আষাঢ় ; এইচ.এম. সিরাজ

আজি দুয়ারে দাঁড়ায়ে বর্ষাদূতের আষাঢ় ; এইচ.এম. সিরাজ

বৃষ্টি নামুক, আর নাই-বা নামুক। কদম নিজেকে মেলে ধরুক, আর নাই-বা ধরুক। আজকেই পহেলা আষাঢ়।গোটা আকাশজুড়ে মেঘমেলা আর বৃষ্টির নিক্কনে ঘিরে ধরেছে ‘বর্ষাদূত’ আষাঢ়কে। দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আবারো দুয়ারে দাঁড়িয়ে আষাঢ়। বাংলা ক্যালেণ্ডারের পাতায় আজ পহেলা আষাঢ়। বাঙালি জীবনে ঋতু বর্ষার গুরুত্ব অনেক। ষড়ঋতুর বৈচিত্রতার এই দেশে দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। আর এই বর্ষার প্রথম মাসই আষাঢ় এবং দ্বিতীয় মাস শ্রাবণ। এই সময়ে বাংলার প্রকৃতি অবগাহন করবে সজীবতর বারিধারায়। কাব্য কথায় এসেছে, ‘আষাঢ়স্য’ প্রথম দিনেই কদমের বনে হলদে-সাদা মঞ্জুরীর উচ্ছ্বাস নাবকা বইতে শুরু করে। বাংলা প্রকৃতিতে দৃশ্যমান হতে থাকে স্নিগ্ধতার এক অন্যরকম আবেশ।
                “মেঘে আঁধার হল দেখে
                  ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
                  শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
                  কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
                  আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
                   শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
                   কালো? তা সে যতই কালো হোক, 
                    দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।”
কবি এখানে আষাঢ়কে এক মানবীর চিত্রকল্পেই অঙ্কিত করতে হয়েছেন সক্ষম। বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত একটি জারি গানে আছে-
                     “আইলোরে আষাঢ় মাস
                       লাগাইলো চারা গাছ
                       গাছে গাছে ঝগড়া করে
                        মূল্য বেশি কার?” 
বর্ষণসিক্ত পরিবেশ বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময়। এই বিবেচ্য বিষয়টি স্মরণাতীতকাল থেকেই চলে আসছে আমাদের এই শ্যামল বাংলায়। সারাদেশে বৃক্ষমেলার আয়োজন হয়ে থাকে এ মাসেই।
বঙ্গাব্দের অপরাপর সকল মাসের মতো আষাঢ় মাসের নামকরণও হয়েছে তারার নামে। আর সে তারার নাম হচ্ছে ‘আষাঢ়া’। অথৈ পানিই তার বৈভব। ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’সহ নিসর্গ চেতনা প্রত্যেকটি প্রকৃতি প্রেমিক মনকেই করে আলোড়িত। আর শিল্পীর বেলায় এর আবেদন হয়ে থাকে ঢের বেশি। এই সময়ে আরো ফোটে শাপলা, পদ্ম, চালতা, কেতকী ফুল। বাংলা সাহিত্যে ‘কবি শেখর’ নামে খ্যাত কালিদাস বর্ষা ঋতুকে নিয়েই লিখেছেন কমপক্ষে ত্রিশটি কবিতা। আবার ‘ছন্দের জাদুকর’ নামে খ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বর্ষাকেন্দ্রিক কবিতার সংখ্যাও কম নয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো ‘বর্ষা’, ‘ইলশে গুঁড়ি’ এবং ‘বর্ষা নিমন্ত্রণ’। আর আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ষাপ্রীতি তো রীতিমতো প্রবাদতুল্যই বটে। এছাড়াও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীম উদ্দীন তাঁদের সৃষ্ট সাহিত্যকর্মে এই বর্ষাকে উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন রকম আঙ্গীকে।
চিত্রশিল্পীরাও তাঁদের ক্যানভাসে বর্ষাকে আঁকতে করেন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পটুয়া কামরুল হাসানের ‘বৃষ্টির দিনে খেয়া ঘাট’ শীর্ষক চিত্রকর্মটি আজ অবধি অনন্য হিসেবেই স্বীকৃত। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের ফলের সমাহার এই আষাঢ় মাসেও বেশ লক্ষণীয় থাকে। যেমন আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লুকলুকি, লটকন, জামরুল, লিচুসহ আরো কতো রকমের দেশীয় ফল।
আষাঢ়ের আরেক পরিচয় উৎসবের মাস। উৎসবের এই দেশে উৎসবের মাস বলেই আষাঢ় খ্যাত। বিশেষ করে ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’, পালনকারীদের কাছে বড়োই আরাধ্য এই মাসটি। কেই-বা না জানে, এই আষাঢ় মাসে রথযাত্রা উৎসব হয়! হিন্দু শাস্ত্রমতে, পুরীর জগন্নাথের স্মরণে এই উৎসব। রথকে টেনে টেনে নিয়ে যায় এবং স্নান করিয়ে ফিরিয়ে অাবার আনে। এই প্রত্যাবর্তনই ‘উল্টো রথযাত্রা’ নামে পরিচিত।
লেখক- এইচ.এম. সিরাজ। কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নির্বাহী সম্পাদক – দৈনিক প্রজাবন্ধু, পাঠাগার ও ক্রীড়া সম্পাদক- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com