শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
ভৌতিক বিদ্যুৎবিল আর ঘনঘন লোড শেডিংয়ে অতিষ্ঠ মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির নব্বই হাজার গ্রাহক। কমলগঞ্জ জোনাল অফিস ভৌতিক বা অনুমাননির্ভর বিল দিয়ে প্রতিমাসে কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা একাংশের প্রায় ৯০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের হয়রানি করছে। প্রতিদিন বিদ্যুৎ অফিসে নিজে গিয়ে বিল ঠিক করাতে হচ্ছে। এছাড়াও লোডশেডিং ও ঝড়বৃষ্টি না থাকলেও ভ্যাপসা গরমে ভোর রাত, সন্ধ্যাসহ দিনে অন্তত ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
কমলগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক আকাশ আহমেদ, তানভীর এলাহী,সালাহ্উদ্দিন শুভ, নজমুল ইসলাম, বাবু মিয়া, নিমাই মালাকার, ছাদেক মিয়া প্রমূখ অভিযোগ করে বলেন, ”বিদ্যুৎ অফিসে বসে ও বাড়িঘরের মিটার ঠিকমতো রিডিং না করেই অনুমাননির্ভর অস্বাভাবিক অঙ্কের বিল তৈরি করে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।” পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে কেউ কেউ ভৌতিক বিল সংশোধন করে আনতে পারলেও অধিকাংশের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়না। অফিসের লোকজন অনেককে পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছেন। ফলে সংযোগ বিচ্ছিন্নের ভয়ে বাধ্য হয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত এসব গ্রাহকরা ধার দেনা করে বিল পরিশোধ করছেন। অনেকেই জানান, সাধারণভাবে প্রতি মাসে তারা যে বিদ্যুৎ বিল পান গত এপ্রিল থেকে প্রায় দ্বিগুণ টাকার বিল হয়েছে মে-জুন মাসে। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের অধীনস্থ ২৫ মেগাওয়াট সাবস্টেশনটিকে ছয়টি ফিডারে ভাগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পৌরশহর ফিডারে অল্প ভোগান্তি হলেও বাকি ফিডারের আওতায় থাকা ইউনিয়নের গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। গত মে মাস থেকে তা চরম আকার ধারণ করেছে। বেশ কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়,সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট ছাড়াও বিদ্যুৎ বিলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতি মাসে দশ টাকা হারে মিটার ভাড়া ও নেওয়া হচ্ছে। অথচ টাকা দিয়ে মিটার কিনে নেওয়ার পরও মাসে মাসে আজীবন মিটার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে সঠিকভাবে তদারকি করারও কেউ নেই। তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে ২ ঘন্টা পর চালু হয়। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টি না থাকলেও রোজ অন্তত দুই-তিনবার বিদ্যুৎ চলে যায়। ভ্যাপসা গরমে বিদ্যুতের এমন ভোগান্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জরুরি মোবাইল নম্বর ছাড়াও ডিজিএম, এজিএম কমসহ অনেকের ফোনে কল দিলে কেউ তা রিসিভ করেননা। বিদ্যুৎ বিলের নামে গ্রাহকদের ধোঁকা দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। করোনা ভাইরাসের অজু হাতে আমাদের কাছ থেকে দুই মাসে দেড় থেকে দ্বিগুণ বিল বেশি নিচ্ছে। এমন ভৌতিক বিল এর আগে কখনো হয়নি। আমাদের মতো সহজ, সরল ও নিম্ন আয়ের লোকেরা অফিসে আসা যাওয়া করতে যাতায়াত খরচ ও একদিনের রোজ নষ্ট হয়ে যায়।”
বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে আয় রোজগার না থাকায় এমনিতেই সংঙ্কটে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তার উপর একসাথে ২/৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়ায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রাহকরা অনুমান নির্ভর বিল সংশোধন ,বিলম্ব মাশুল মওকূফ ও বিল পরিশোধের সময় বর্ধিত করার দাবি জানান।ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ সম্পর্কে সাবস্টেশনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্ব পালনরত একাধিক লাইন টেকনিশিয়ান বা লাইনম্যান জানান, মাঝে মধ্যে লাইনে ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘প্রত্যেক গ্রাহকের মিটার দেখে বিদ্যুৎ বিল তৈরির জন্য আমাদের ৪২ জন মিটার রিডার রয়েছেন। মাঝে মধ্যে বিল রিডিংয়ে সমস্যা হতে পারে। তবে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ নিয়ে কেউ অফিসে আসলে তাৎক্ষণিক তা সংশোধন করে দেন অথবা পরের মাসের বিলে সমন্বয় করে দেয়া হয়।তবে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ব্যাপারে আমাদের সময়কে বলেন, এক মাসের মধ্যে এ সমস্যা থাকবে না।’
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply