স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
অবশেষে মায়ের কোলে ফিরলেন ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া শিশু কুদ্দুস মুন্সি। যা যে কোনো সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। এসব গল্প বা দৃশ্য আমরা কেবল সিনেমাতেই দেখি। কিন্তু কুদ্দুস মুন্সির এ গল্পটি সিনেমা নয়, এটি বাস্তব। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা এলাকার।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া শিশু আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি (যার বর্তমান বয়স ৮০) ছেলেকে সাথে নিয়ে জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের আশরাফবাদ গ্রামে বোনের বাড়িতে থাকা শতবর্ষী বৃদ্ধা মা মঙ্গলুন্নেছা বিবির সামনে এসে হাজির হন। দীর্ঘ প্রায় ৬ যুগ পর গর্ভধারিণী মাকে সামনে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন। এসময় বয়সের বাড়ে নুইয়ে পড়া বৃদ্ধা মাও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে নিষ্ফলক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এসময় উপস্থিত মানুষের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আবেগের এ সময়ে অনেকের চোখেই জল ভেসে আসে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের মৃত কালু মুন্সির দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি সবার বড়। তার বয়স যখন ১০ বছর তখন তার চাচার সাথে রাজশাহীতে বেড়াতে যান ১০ বছর বয়সী শিশু কুদ্দুস মুন্সি। বেড়াতে গিয়ে রাজশাহীতে শিশু কুদ্দুস হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসেনি বাবা-মার কোলে। শিশু বয়স থেকে বড় হয়েও অনেক চেষ্টা করেছেন পরিবারে ফিরে আসতে। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি।
এদিকে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারোইপাড়া এলাকায়। বর্তমানে তিনি ৮ সন্তানের জনক। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করলেও মা ও স্বজনদের জন্য নীরবেই চোখের জল ফেলতেন। তিনি ভেবেছিলেন মা হয়তো বেঁচে নেই।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রাজশাহীর বাগমারার বারোইপাড়ার বাসিন্দা খান মোহাম্মদ আইয়ুব বৃদ্ধ আব্দুল কুদ্দুস মুন্সির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেন। সেখানে কুদ্দুস মুন্সি তার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেন। এ ভিডিও দেখেই কুদ্দুস মুন্সির চাচাতো ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলাম আরো কয়েকজনকে নিয়ে রাজশাহীতে যান কুদ্দুস মুন্সির কাছে। সেখানে গিয়ে শফিকুল কথা বলেন কুদ্দুস মুন্সির সাথে। পরে ভিডিও কলে কথা বলান কুদ্দুস মুন্সির মা মঙ্গলুন্নেছা বিবির সাথে। কথা বলার সময় কুদ্দুস মুন্সির হাতে ছোট বেলার একটি কাটা দাগ দেখে ছেলেকে ছিনতে পারেন মঙ্গলুন্নেছা।
অপরদিকে, আব্দুল কুদ্দুস মুন্সির দুই বোন জোৎসনা আক্তার ও ঝর্ণা আক্তারের মধ্যে জোৎসনা মারা গেছেন। সে কারণে ছোট বোন ঝর্ণার সাথেই থাকেন শতবর্ষী বৃদ্ধা মা মঙ্গলুন্নেছা বিবি। যার বয়স প্রায় ১১০ বছর হবে বলে জানিয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি।
১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া শিশু আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি দীর্ঘ ৭০ বছর পর মাকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জীবন সায়াহ্নে এসে মাকে ফিরে পাবো তা কখনো ভাবিনি। আজ আমার যে কি ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
এ ব্যাপারে আব্দুল কুদ্দুস মুন্সির ছোট বোন ঝর্ণা আক্তার বলেন, ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি ভাই হারিয়ে গেছে। জন্মের পর ভাইকে কখনো দেখিনি। জীবনে দেখতে পাবো তাও কোনোদিন ভাবিনি। এতোদিন পর ভাইকে ফিরে পেয়েছি। তা যে এক বোনের জন্য কতো আনন্দের তা আমি ছাড়া কেউ বুঝবেনা। আল্লাহ আমার ভাইকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছেন এতে আমরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার মাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন হয়তো এই দিনটির জন্যই।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply