শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত,লাললমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা খাদ্য গুদামের ধান চাল ক্রয়ে গুদাম কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার অপসারণ চেয়ে বুড়িমারী মহসড়কের খাদ্য গুদামের সামনে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী কৃষকরা।
বুধবার (৭ আগষ্ট) বিকালে আদিতমারী উপজেলার লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহসড়কের খাদ্য গুদামের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানবন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসুচী পালন করে উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক ভুক্তভোগী কৃষকরা। এর আগে উপজেলার ভুক্তভোগী কৃষকরা উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক হয়ে গুদামের সামনে এসে মানববন্ধন করেন।
এ সময় মহাসড়কে ধান ফেলে অর্ধঘন্টা লালমনিরহাট – বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। গুদামের দারোয়ান চঞ্চল বিভিন্ন অযুহাতে হয়রানী করে টাকা দাবি করেন। ৪৮০ কেজি ধান বিক্রি করতে গুদামে ৫শত থেকে হাজার টাকা ঘুষ গুনতে হয়। টাকা না দিলে ধান গুদামে যায় না। এমন কি ধান গেলেও বিল দেন না গুদাম কর্মকর্তা। কৃষকদের গেটের বাহিরে বের করে দিয়ে ব্যাবসাীয়দের ধান ক্রয় করে গুদাম কর্মকর্তা।
মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কমলাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কারি হেলাল উদ্দিন, ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক মিনহাজ উদ্দিন, সারপুকুরের কৃষক আব্দুল বাকী, মহিষখোচার কৃষক নজরুল ইসলাম মেরাডোনা ও আব্দুল কাহার প্রমুখ । মানবন্ধন শেষে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ঐ ভুক্তভোগী কৃষকরা।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, উপজেলার ৮টা ইউনিয়নের কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি বিভাগের তালিকা অনুযায়ী প্রতি কেজি ২৬টাকা মুল্যে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রতি কৃষক ৪৮০ কেজি হারে ধান বিক্রির সুযোগ পায়। এ উপজেলার জন্য ৯০৬ মেঃটন বরাদ্ধের ইতোমধ্যে ৩৬০ মেঃ টন ক্রয় করে খাদ্যগুদাম। আগে থেকেই লটারীর মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা চুড়ান্ত করে উপজেলা প্রশাসন। সেই তালিকা অনুযায়ী খাদ্যগুদাম সরকারী মুল্যে ধান ক্রয় করার কথা। কিন্তু উপজেলা খাদ্য গুদাম সাধারন কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের ধান ক্রয় শুরু করে। কৃষকরা ধান নিয়ে গেলে ধানের আদ্রতা, চিটাসহ বিভিন্ন অযুহাতে হয়রানী করে ফেরায়ে দেয়। টাকা না দিলে কোন কৃষকদের ধান ক্রয় করেন না বলে কৃষকদের অভিযোগ। তালিকায় নাম থাকার পরেও অনেক কৃষক গুদামে ধান নিয়ে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে ধান আগেই গুদামে ক্রয় হয়েছে। ফলে তাদেরকে পুনরায় পরিবহন খরচ গুনে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা হয়রানী বন্ধে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চান। এমন অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস গুদামে গিয়ে কৃষকদের ভোগান্তি দেখে প্রতিবাদ করে গুদাম কর্মকর্তাকে কৃষকদের হয়রানী না করতে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ধান ক্রয়ে কৃষকদের হয়রানী করায় কৃষকদের অভিযোগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করায় খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে যায়। গত মঙ্গলবার দুপুরে থেকে হঠাৎ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লাঞ্চিতের অভিযোগ তুলে ধান চাল ক্রয় বন্ধ করে দেন উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কাণিজ ফাতেমা।
আদিতমারী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) কাণিজ ফাতেমা কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে ঘুষের টাকা ও ধান ক্রয় বন্ধ এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply