সময়নিউজবিডি টোয়েন্টিফোর ডেস্ক রিপোর্ট ঢাকায় এক যুবলীগ নেতার পরিচালিত ক্লাবে র্যাবের অভিযানে ক্যাসিনোর বিপুল আয়োজন পাওয়ার পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বক্তব্যে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “ক্যাসিনো যদি চালাতে হয় তাহলে তারও একটা নীতিমালা হবে, তারও একটা সিদ্ধান্ত হবে, তার পরে আমরা তাদেরকে দিব, আমরা সেই রকমই চিন্তা করি। কিন্তু আপনারা না জানিয়ে এই অবৈধ ব্যবসায় ঢুকে যাবেন, এই অবৈধ ব্যবসা তো আমরা কাউকে করতে দিব না। “
বাংলাদেশের আইনে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরের অনুমোদন দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, বরং সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
সেক্ষেত্রে সরকার আইন সংশোধন করে ক্যাসিনো বা জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার কথা ভাবছে কি না- সেই প্রশ্ন তৈরি হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আসার পর।
ক্যাসিনোর অনুমতি দিতে সরকার আইন সংশোধনের কথা ভাবছে কি না, তা পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
উত্তরে তিনি বলেন, “আইনের বাইরেতো আমরা অনুমতি দেব না, অনুমতি দিতে হলোতো আমরা আইন দেখব। যেহেতু আইন নাই, অনুমতি দেব কেন?”
ঢাকার ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব এবং ওই ক্লাবের সভাপতি যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুলশানের বাড়িতে বুধবার বিকালে একযোগে অভিযান চালায় র্যাব।
কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। পাশাপাশি ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। আর গুলশানের বাসা থেকে ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্রসহ খালেদকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব।
ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের পাশাপাশি ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেও র্যাবের অভিযান চলে।
এসব অভিযানে মোট ১৮২ জনকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে র্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম জানান।
দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও যে স্লট মেশিন, রুলেট টেবিলের মত সরঞ্জাম নিয়ে পুরোদত্তর ক্যাসিনো চলে, সে খবর সাধারণ মানুষের কাছে নতুন।
বাংলাদেশে সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদে নৈতিকতা রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, “গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷”
আর ১৮৬৭ সাল থেকে চালু ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন’ বলছে, কেউ টাকার বিনিময়ে বাজি বা জুয়ার আসর বসালে এবং কেউ তাতে অংশ নিলে তা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নারী ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, অন্যায় করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না। যারাই ‘ভুল’ করবে, ‘দুস্কর্ম’ করবে, কিংবা জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করবে, তাদের আইনের মুখোমুখি হতেই হবে; এটাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা।
“আপনারা যে ক্যাসিনোর কথা বলছেন, আমরা কোনো ক্যাসিনোর পার্মিশন দিইনি। যারা করছেন তারা অবৈধ ব্যবসা করছেন। আজকেও তিনি বলেছেন, যারা ক্যাসিনো করতে চান আপনারা পারমিশান নিবেন। কোথায় করবেন আমাদের জানিয়ে করবেন, যদি আমাদের দেওয়ার মত অবস্থা হয়, আমরা পারমিশন দেব।
“কিন্তু না জানিয়ে লুকোচুরি করে ক্যাসিনো করবেন, অবৈধভাবে করবেন, সেটা হতে দেওয়া হবে না। আমরা কিন্তু বারের লাইসেন্স দিচ্ছি, কাদের দিচ্ছি? বড় বড় হোটেলগুলোতে এবং বড় বড় ক্লাবগুলোতে আমরা দিচ্ছি…।”
অতীতে জুয়া বন্ধে পুলিশের তৎপর হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরেই শুনতে ছিলাম ঢাকা শহরে এই অবৈধ ব্যবসায় লুকিয়ে লুকিয়ে অনেকে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি প্রথম যখন শুনেছি তখন এগুলো ডেস্ট্রয় করে দেওয়া হয়েছিল।এখন এক দেড় বছরে মাথা চাড়া দিয়েছে, এমনটা আমাদের গোয়েন্দারা রিপোর্ট করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কেউ কোনো অবৈধ ব্যবসা করতে পারবে না। তারই ফলে কালকের এই অভিযান হয়েছে।”সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টোয়েন্টিফোর।
Leave a Reply