বিশেষ প্রতিবেদক//সময়নিউজবিডি
মোঃ আছকান উল্লাহ। বয়স ৭০ বছর। এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচং এলাকার বাসিন্দা। বয়সের বাড়ে শারীরিক সক্ষমতা না থাকলেও জীবিকার তাগিদে সানদানি (সান মেশিন) নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন তিনি।
আজ শনিবার (২৫ জুলাই) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দৌলতবাড়ী এলাকায় সানদানি কাঁধে নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় আছকান উল্লাহকে। এসময় এ প্রতিবেদকের সাথেন কথা হয় বৃদ্ধ আছকান উল্লাহ’র। পাশেই একটি দোকানের সামনে বসে আছকান উল্লাহকে কেমন আছেন জানতে চাওয়া হয়। খুব ভালো নেই জানিয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বাজান গায়ে শক্তি নেই। তারপরও বউ (স্ত্রী) বের করে দিয়েছে রোজগারের জন্য।
আছকান উল্লাহ জানান, সামনে কুরবানির ঈদ। দা-বটি ও ছুরি সান দেওয়ার এখন মৌসুম। এ মৌসুমে ঈদের এক মাস আগে থেকে এই কাজ শুরু হয়। এ জন্য গত সাতদিন আগে বানিয়াচং নিজ বাড়ি থেকে বের হন তিনি। সেখান থেকে বাসে ও ট্রেনে করে আখাউড়া স্টেশনে এসে নামেন। সারাদিন বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে দা-বটি ও ছুরি কেঁচি সান দেন। রাত হলে আখাউড়া বা আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে প্লাটফর্মে রাত্রিযাপন করেন। এভাবেই সাতদিনে খেয়েপড়ে ১৫শত টাকা জমিয়েছেন আছকান উল্লাহ। কুরবানির ঈদের একদিন আগে তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন জানিয়ে তিনি আরো জানান, গত প্রায় ৪০ বছর যাবৎ এ কাজটি তিনি করছেন।
তিনি আরো জানান, সারা বছর অনেকটা অবসর সময় কাটাতে হয়। তবে মাঝেমধ্যে অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবেও কাজ করেন। আর কুরবানির ঈদ আসলেই এক মাস এ কাজ বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরী করেন। সান মেশিনে দা, বটি, ছুরি, কেঁচি সান দেন। দা বটি ছুরি ও কেঁচি সান দিয়ে পান ১০/২০ টাকা করে। তবে গরীব মানুষ হলে কমও নেন তিনি।
এক ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে ছেলে সবার বড়। সেও বিয়ে করেছেন। তারও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এদিকে, তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অভাবের সংসারে তিন বেলাও খেতে পারেন না ছেলে মেয়েদের নিয়ে। বাকী দুই মেয়ের মধ্যে একজনকে কোরআন শরিফ পড়িয়েছেন। ছোট মেয়েকে আরবি শিক্ষার পাশাপাশি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াচ্ছেন। কিন্তু তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে বৃদ্ধ বাবার।
আছকান উল্লাহ জানান, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরণের ভাতা ও সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও কোন সুযোগসুবিধা তিনি পাননি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে কাজ করার শারীরিক সক্ষমতাও না থাকায় তিনি সরকারের ভাতা সুবিধা পেতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply