ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে পুলিশের বিরুদ্ধে রজব আলী নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে ৯ হাজার টাকায় মধ্যস্ততা করে ছাড়া পান মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী।
জানা যায়, উপজেলাার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীর সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার প্রয়াত ছেলে আলী মাসুদের স্ত্রী রিক্তা আক্তারের মনোমালিন্য চলছিল। সৌদি আরবে স্ট্রোক করে গত আড়াই বছর আগে মাসুদ মারা যান। এরপর রিক্তা তাকে নিজের মেয়ে বানিয়ে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাইসহ বাড়িতে রাখার জন্য রজব আলীকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কিন্তু রজব আলী এতে সাড়া না দেয়ায় রিক্তা মাসুদের ভাগের বাড়ির জায়গা দখল নিতে ও ঘরের মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। এ নিয়ে রিক্তা আদালতে মামলাও করেন।
এসব ঘটনার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে রিক্তা তার বাবা ও স্বজনদের নিয়ে রজব আলীর বাড়িতে এসে মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা রজব আলী ও তার স্ত্রী রাহিমা আক্তারকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় রজব আলী লিখিত অভিযোগ নিয়ে বিজয়নগর থানায় গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আউলিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসানের কাছে পাঠান।
পরে একইদিন দিবাগত রাত ২টায় পুলিশ নিয়ে রিক্তা তার বাবা ও স্বজনসহ আবারও রজব আলীর বাড়িতে আসেন। এ সময় পুলিশের সামনেই রজব আলী ও তার স্ত্রী রাহিমা আক্তার এবং মেয়ে সালমা আক্তারকে মারধর করে জোরপূর্বক রিক্তা ঘরের মালামাল নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন রজব আলী। এ ঘটনার পর পুলিশ উল্টো রজব আলীকেই আটক করে টেনেহিঁচড়ে আউলিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী বলেন , পুলিশ প্রথমে তাকে হাজতখানায় ঢোকান। পরে আবার তাকে একটি আলাদা কক্ষে নিয়ে রাখেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামের ইউপি সদস্য নাসির মিয়া ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব হোসেন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ছুটে যান। পরবর্তীতে রজব আলীকে ছাড়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই হাসান। রাত সাড়ে ৩টায় ইউপি সদস্য নাসির সাত হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন রজব আলীকে। পরে সকালে রজব আলী নিজে গিয়ে হাসানকে আরও দুই হাজার টাকা দিয়ে আসেন। বর্তমানে রজব আলী, স্ত্রী রাহিমা আক্তার এবং মেয়ে সালমা আক্তার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য নাসির মিয়া জানান, রজব আলীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমি ও ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুব রাত সাড়ে ৩টায় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যায়। এসময় এসআই হাসান অভিযোগ করে বলেন, রজব আলী পুলিশকে মারধর করেছেন। পরে তাকে ছাড়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। রাতেই আমি সাত হাজার টাকা দেই এসআই হাসানকে। পরে সকালে রজব আলী নিজে গিয়ে আরও দুই হাজার টাকা দিয়ে আসেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীকে হেনস্তা করার ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিজয়নগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তারা মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়পুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফুল মিয়া। বৈঠকে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে এ ঘটনার প্রতিকার চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আউলিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আবুল হাসান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীকে ছাড়ার অভিযোগ সত্য নয়। রজব আলীর পুত্রবধূ রিক্তার অভিযোগে পুলিশ রিক্তা ও তার বাবার সঙ্গে ওই বাড়িতে গেলে রজব আলীর স্ত্রী ও মেয়ে ডাকাত-ডাকাত বলে বাড়ির গেট লাগিয়ে পুলিশকে মারধর করে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে ঘটনা জানার জন্য রজব আলীকে নিয়ে আসি। তার কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে ইউপি সদস্যকে ডেকে ছেড়ে দেই।
Leave a Reply