বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯, যা পুরো পৃথিবীব্যাপি শক্তি-মহাশক্তি, উন্নত-অনোন্নত ও উন্নয়নশীল সকল রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের নাড়া দিয়ে চলেছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছে পুরো বিশ্ব। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ সহ সকল দেশেই সরকার লকডাউন ও কারফিউসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) আবিষ্কৃত হয়েছে এবং টিকা গ্রহণও চলছে। এর মধ্যেই করোনা ভাইরাস তার রূপ পাল্টিয়ে আবারও সংক্রমণ করছে। যা প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গত ৫ মে ২০২১ ইং থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে যান চলাচল, ব্যবসা-বানিজ্য ও অফিস আদালত পরিচালনা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনজীবনে বিভিন্ন রকম দূর্ভোগ, ঘাতপ্রতিঘাত সহ নানান বাস্তবতার কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। যা নিচে তুলে ধরেছি।
“আমি যখন মোটামুটি ভাল একটা চাকরি করি, তিন বেলা পেট ভরে খেয়ে আরামে বেঁচে থাকার মত অবস্থা আমার আছে। তখন আমার মাথায় চিন্তা আসে, লকডাউন দেয়া উচিত । কারণ এই লকডাউনে আমার তেমন কোন ক্ষতি হবে না, যেহেতু আমার খেয়েপরে বাঁচা নিয়ে সমস্যা নাই, করোনার সংক্রমণ আমার জন্য টপ প্রায়োরিটি।
অপরদিকে এই আমিই যখন শপিংমলে একটা কাপড়ের দোকান চালাই কিংবা টিউশনি করি কিংবা পাঠাও-উবার চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করি সেক্ষেত্রে লকডাউন আমার জন্য বিভীষিকার মতো। কারন আগামীকাল আমার ভাতের ব্যবস্থা হবে কিনা আমি জানি না, করোনার সংক্রমণ আমার জন্য অনেক পরের ভাবনা বা চিন্তা।
আমার এক ছোট ভাই ইন্টার্ন চিকিৎসক, গত রাতে হাসপাতালে বসে সামান্য অক্সিজেনের অভাবে চোখের সামনে হাসফাস করে অনেকগুলা মানুষকে মরে যেতে দেখেছে। হাসপাতালের আইসিইউ খালি নাই, এরই মধ্যে একজন তার মাকে নিয়ে এসে ডাক্তারকে বলছে, “আপনার যত টাকা লাগে আমি দিবো, আমার মাকে একটু অক্সিজেন দেন। এখানেও ডাক্তার অসহায়, এত লোকের অক্সিজেনের ব্যবস্থা নাই হাসপাতালটিতে।
আমার ছোট ভাইয়ের কাছে করোনার সংক্রমণ একটা ভয়াবহ কনসার্ন, কারণ সে চোখের সামনে করোনার ভয়াবহতা দেখেছে। যারা চোখের সামনে ভয়াবহতা দেখে নাই, যারা কাছের মানুষটাকে এই হাসফাস করতে করতে মরে যেতে দেখে নাই, তাদের কাছে এই রোগ নিয়ে সিরিয়াস চিন্তাটা আসে না। মানুষের সাইকোলজিটা এমনই।
একজন তার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে আজকে তার মাকে দাফন করে আসলো, তার কাছে টাকাপয়সা এখন ভীষণ তুচ্ছ।
তেমনিভাবে যার কপালে আজকে দুপুরে ভাত জোটে নাই, তার কাছে করোনা ঠিক সেরকমই তুচ্ছ। আসলে আমরা কে ভুল? কে-ই বা ঠিক? কোন চিন্তাটা সত্য? কোনটাই বা মিথ্যা? কাকেই বা আমি জাস্টিফাই করবো?
আমরা নিজের জীবনের গল্প দিয়ে পুরো পৃথিবীটাকে দেখি। অথচ এই এক পৃথিবীতে অসংখ্য অদেখা অজানা গল্পরা ভেসে বেড়ায়। কারো গল্পে ক্ষুধা, কারো গল্পে বিলাসিতা, কারো গল্পে দীর্ঘশ্বাস, কারো গল্পে হাহাকার — যার যার গল্প, তার তার কাছে ধ্রুব সত্য। এতকিছুর পরেও আমাদের সবার জীবনের একটা ধ্রুব সত্য কি জানেন?
আমরা বাঁচতে চাই, আমরা ক্ষুধাহীনভাবে বাঁচতে চাই, আমরা চিন্তামুক্ত হয়ে বাঁচতে চাই, প্রিয় মানুষটাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, সুস্থভাবে বাঁচতে চাই, হাসিমুখ নিয়ে বাঁচতে চাই। বেঁচে থাকার তাগিদেই আমাদের এতো সব যুদ্ধ, এত সব গল্প ও পাওয়া না পাওয়ার যাতনা।
লেখকঃ মোঃ এনামুল হক খোকন।
সম্পাদকঃ সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর ডটকম।
Leave a Reply