সংবাদ শিরোনাম
নাসিরনগর নির্বাচন অফিসে টাকা ছাড়া মিলে না সেবা

নাসিরনগর নির্বাচন অফিসে টাকা ছাড়া মিলে না সেবা

মোঃ আব্দুল হান্নান,নাসিরনগর প্রতিনিধি
অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী আর পাঁচ দালালে মিলেই চালাচ্ছে নাসিরনগর নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। দালালরা চাইলেই তৈরি করে দিতে পারেন নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)! ভুল সংশোধন কিংবা স্থান পরিবর্তনসহ নির্বাচন অফিসের যে কোন সেবা দিতে পারেন তারা। এমন কাজ তারা গোপনে নয়, প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েই করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। আপনি যদি সচেতন নাগরিক হোন, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে যদি কোন সেবার আবেদন করেন, তাহলে পোহাতে হবে চরম ভোগান্তি। কাগজে সমস্যা,কাগজে ক্রটি এমন নানা অজুহাতে আপনার কাজ আটকে থাকবে দিনের পর দিন। তবে দালালের হাতে তাদের চাহিদা মত টাকা ধরিয়ে দিলে বা চুক্তি করলেই মিলবে সেবা। এমনই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের।
নির্বাচন অফিসের দালাল জাকারিয়া আহমেদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আইডি কাডের্র সকল সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন। তার দেওয়া স্ট্যাটাস গুলো নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো। “কারো যদি জরুরী আইডি কার্ড লাগে তবে যোগাযোগ করুন। অপর আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখেন, আইডি কার্ড সংশোধন করে দিতে পারি, যাদের সমস্যা তারা যোগাযোগ করবেন।
ভোক্তভোগীদের অভিযোগ, নাসিরনগর নির্বাচন অফিসের নির্বাচন কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী থেকে শুরু করে এমএলএসএস এর সাথে আর্থিক চুক্তি ছাড়া মিলে না সেবা। তাদের সহযোগী স্থানীয় বদ পাঁচ দালালও রয়েছে। ওই দালালরা অফিসের আশপাশে সকাল ৯টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত বসে থাকে। তাদের কাজ হল সেবাগ্রহীতাদের সাথে চুক্তি করে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানো। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি নতুন এনআইডি কার্ড করতে ২০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৩/৪ হাজার টাকা। সংশোধনের জন্য ক্যাটাগরি বেঁধে পাঁচ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন তারা। দালাল ছাড়া সরাসরি নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসরণ করে অফিস আসলে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। তবে দালালের মাধ্যমে গেলেই মেলে প্রশান্তি।
সরেজমিনে উপজেলা নির্বাচন অফিস ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের দিকে নির্বাচন অফিসের সামনে ও বিভিন্ন কক্ষের ভেতর সেবা প্রার্থীদের প্রচুর ভিড়। এখানে সর্বত্রই উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। কারোরই মুখে নেই কোন মাস্ক। নির্বাচন কর্মকর্তা ভিড় ঠেকাতে অফিসের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। নতুন আইডি কার্ড করতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা প্রায় শতাধিক সেবাগ্রহীতাকে দেখা গেছে। এদের মধ্যে থাকা ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রোকন উদ্দিন ভূইঁয়া অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার ছেলের আইডি কার্ড করতে নির্বাচন অফিসে আসি। নির্বাচন কর্মকর্তা শতশত সেবাগ্রহীতার জন্মনিবন্ধন আটকে রেখে টাকা আদায় করে হয়রানি করছে। ঢাকা থেকে আসা গোয়ালনগর ইউনিয়নের লালুয়ারটুক গ্রামের গ্রাফিক্স ডিজাইনার জোহাম জানায়,সে ভোট উঠানোর পর প্রিন্টিং কপির জন্য অনেক দিন অফিসে ধর্না দিলেও কোন কাজ হয়নি। কিন্তু অফিসের ইমরান সাহেব কে ৪ হাজার টাকা দেয়ার ২৪ ঘন্টার ভিতরেই পেয়ে যান প্রিন্টিং কপি। ডাঃ রোকন উদ্দিন বলেন, হয়রানির কারণ জানতে চাইলে নির্বাচন অফিসার তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
এদিকে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় চোখে পড়ে সেবাগ্রহীতা সালামের সাথে অফিসের দালাল পারভেজের টাকা লেনদেনের চিত্র। সেটি মোবাইলে ধারণ করা হয়। তখন পারভেজ এসে এ প্রতিবদেককে বলেন, আমি সালামের কাছে টাকা পাইতাম সেই টাকাই ফেরৎ নিচ্ছি। ভলাকুট ইউনিয়নের বাঘী গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল ভৌমিক অভিযোগ করে বলেন, আমি বিদেশ যেতে দ্রুত আইডি কার্ড করতে অফিসে আসি। কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তা আমার সকল কাগজপত্র দেখে বলেন, তোমার বয়স কম। আইডি কার্ড হবেনা। পড়ে একজন দালাল অফিসের পেছনে নিয়ে আমায় বলল স্যারকে (নির্বাচন কর্মকর্তা) কিছু খরচপাতি দিলে বয়স কোন সমস্যা হবেনা। তখন নির্বাচন অফিসারকে আমি ৩ হাজার টাকা দেই। কবে কার্ড পাব ভগবানই ভাল জানেন। একই ইউনিয়নের কুটুই গ্রামের উদ্ভব দাস বলেন, আমার আইডি কার্ডে নামের ভুল সংশোধনের জন্য অফিসে আসি। কিন্তু অফিসের কেউ আমার সাথে কথাই বলতে চায় না। পরে একজন দালাল আমাকে বলে ১ সপ্তাহের মধ্যে ঠিক করে দিবে, বিনিময়ে তাকে ৩ হাজার টাকা লাগবে। আমি বাধ্য হয়ে ৩ হাজার টাকা দেই। কিন্তু প্রায় দুই মাস হলেও কার্ড পাচ্ছি না। হরিপুর ইউনিয়নের মিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন আইডি কার্ড করতে অফিসে সকল কাগজপত্র জমা দেই। কিন্তু টাকা ছাড়া করবেনা বলে ফিরিয়ে দেয়। পরে ৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর চার মাস পর কার্ড হাতে পাই। কে টাকা নিয়েছে জানতে চাইলে বলেন, অফিসের আউট সোর্সিং-এ নিয়োগ পাওয়া ইমরান তার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দালাল বলেন, এ অফিসের বিকাশ, রইস খান, মিজান, রুস্তম ও পারভেজই বেশি কাজ করে। তারাই নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সেবাগ্রহীতাদের সাথে কন্ট্রাক করে অফিসে নিয়ে আসে।
অনিয়ম ও হয়রানির বিষয়ে জানতে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কোন সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নেয়নি। কাউকে হয়রানিও করিনা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আপনি নিজে টাকা নিয়ে কাজ করেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com