ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। এ কথাটা আমরা সবাই জানি। প্রতি বছরই মুসলমানদের জীবনের ফিরে আসে খুশির ঈদ। মা-বাবা পরিবার পরিজন থেকে অনেক দূরে। বিস্তর পথ। রাস্তায় ক্লান্তি। ব্যবধান যেন অনেক। যাঁরা কর্মজীবন ছেড়ে আপনজনদের কাছে যেতে পেরেছেন, তাঁদের জন্য ঈদ অনেক আনন্দের। হাজার কষ্টের পরও ঈদ তাঁদের জীবনে খানিকটা সময় ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়।
ক্লান্তিহীন ঈদ আসে উচ্চবিত্তদের ঘরে। তারা শপিং করতে দেশের বাইরে যান। ঈদের আনন্দ ভোগ করতে ছুটে চলেন দেশ হতে দেশান্তরে। যাঁরা লোকাল বাসে-ট্রাকে, গাদাগাদি করে ট্রেনে-লঞ্চে করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান, তাঁরা হয়তো কিছুটা স্বাদ পান। কয়েক দিন ধরে সেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা মানুষগুলো বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকে হয়তো ঈদের দিনও বাড়িতে যাচ্ছেন। একটুখানি হাসির আশায়, একটু প্রাণকে জিরিয়ে নেওয়ার ভরসায়।
এদিকে পোশাক শ্রমিকসহ বিভিন্ন নিম্বশ্রেনীর লোকেরা প্রত্যেকটি ঈদে তাদের প্রাপ্য টার জন্য রাস্তায় নামতে হয় ! তাঁদের পরিবার হয়তো কখনই প্রকৃত ঈদের স্বাদটুকুন গ্রহন করতে পারে না। এই তো সেইদিন এক অসহায় বাবা সন্তানকে তার চাহিদা মতো কিছুই দিতে না পারায় কষ্টে গলায় দিয়েছে দড়ি।আর কেউ কেউ দড়িটা গলায় না লাগালেও পরিবারের চাহিদাটুকু পূরণ করতে না পেরে প্রতিনিয়ত তাদের মনের মৃত্যু হচ্ছে। এমন গরিবদের জন্য ঈদ কখনই আনন্দ নিয়ে আসে না; বরং হাজার গুণ কষ্টই বয়ে আনে!
মনে পরে কোন এক ঈদে,এক বৃদ্ধা ছুটে আসলো আমাদের বাড়িতে সেমাই খাবে, তাকে সেমাই দেওয়া হলে সে বাড়িতে নেওয়ার বাইনা ধরলো তখন তাকে বলা হলো তুমি খেয়ে বাড়ির জন্য নিয়ে যাও, সে কিছুতেই রাজি হলো না বললো বক্সে দিয়ে দেন নাতি-নাতনি সহ খাবো! তখনই বুকটা কেঁপে উঠলো, মনে মনে বললাম হায়রে ঈদ একটা দিনও তাদের পরিবার পরিজনকে শান্তি দিতে পারো না!
রাস্তার ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলো ঠিক আগের মতোই ঈদের সকালে ঘুম থেকে উঠেন। গাড়ির হর্ন শুনে সকাল হবে তাঁদের। ছেঁড়া জামা আর নোংরা কাপড় আজও তাঁদের শরীরে। ঈদ নিয়ে তাঁদের কোনো ভাবনা নেই, কোনো বাড়তি চিন্তা নেই। তাঁরা শুধু বোঝেন, খেয়ে-না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকা।
সবার মতো ফুটপাতে ব্যবসা করা হকারের ঈদও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসত। কিন্তু এবার তাঁদের কপালে আনন্দটুকু জোটবে না। কারণ টা অজানাই থাকুক! তাদের সন্তানদের ঈদও একই।
ঈদকে যদি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বলি, তাহলে সেটা ধর্মের বাইরে সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। টানা এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ হয়তো সেটাই শেখায়। কিন্তু আমরা কজন সেই শিক্ষা নিতে পারি। আবার শিক্ষা গ্রহণ করেও এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে পারেন না অনেকেই।
কিছু মানুষের জন্য ঈদ নতুন কোনো শব্দ নয়। প্রতিদিনের মতোই একটা দিন আসবে তাঁদের মাঝে। প্রতিদিনের মতো খেয়ে-না খেয়ে পার হবে দিনটি।
মানুষকে মানুষ হিসেবে বিচার করতে না শিখলে আমরা হয়তো সঠিক শিক্ষা পাব না। ঈদকে আনন্দদায়ক করতে হলে দরকার সাম্য, যা কোনো ধর্মের একক শিক্ষা নয়।
তাই সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক এবারের ঈদ। সবাইকে ঈদ মোবারক।
Leave a Reply