স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
মহামারি করোনা ভাইরাস (কুভিড-১৯) সংক্রমণের ফলে গত কয়েক মাস যাবৎ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের কর্মহীন হয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। এর মধ্যেই আমাদের সামনে চলে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা (কুরবানির ঈদ)। কুরবানির ঈদ এলেই হাসিফোটে কর্মকারদের মুখে।
কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে কর্মকারদের (কামার) মধ্যে কর্মব্যস্তা শুরু হয়েছে। এতে তাদের মধ্যে বাড়তি আয়ের উৎস ফিরে এসেছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মকারদের এ পেশায় পরিবার নিয়ে তিনবেলা খেয়েপড়ে বেঁচে থাকাটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবু বাপ দাদার এ পেশা ছাড়তে পারেনি অনেকেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আনন্দবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কর্মকার শিল্পীদের কর্মব্যস্ততা। তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বের হয়ে আসে তাদের জীবনমানের বর্তমান অবস্থা। খুব কষ্টে তারা পরিবারপরিজন নিয়ে কষ্টের জীবনযাপনের কথা। বছরের ১১ মাস প্রায় অলস সময় কাটে তাদের। কোন রকম খেয়েপড়ে বেঁচে আছেন তারা। এরই মধ্যে এবছর বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস সংক্রমণে প্রায় তিনমাস তাদের দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। বন্ধকালীন সময়টাতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে তাদের। মাঝেমধ্যে সামান্য সরকারি ত্রাণ সহযোগিতা পেলেও তাও পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসেবে খুবই কম। তারপরও দেনাপেনা করে কোন রকম সময় কেটে যাচ্ছে। সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন কাজের চাহিদা বেড়েছে। দিনরাত সময় কাটছে কাজ করে। এতে বাড়তি আয় হওয়ায় তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
সরজমিন ঘুরে জানা যায়, টাসকাল নতুন তৈরীতে ১২ শত টাকা খরচ হয়, গরু জবাই করার ছুরি বানাতে ৮ শত টাকা খরচ হয়। নরমাল ছুরি বানাইতে ১৫০ টাকা ও রেডিমেড নিলে ১২০ টাকা খরচ হয় এবং ছোট ছুরি ছান দিলে ২০ টাকা, রাম দা কোপা দা ছান দিলে ৫০ টাকা, টাসকাল ছান দিলে ১ শত টাকা, গরু জবাই করার ছুরি ছান দিলে ৫০ টাকা।
এদিকে জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল বাজারে সরজমিনে দিখা দেখা যায় কর্মকারদের কর্মব্যস্ততা। এসময় কয়েকজন কর্মকারদের সাথে কথা হয় সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর ডটকম এর এ প্রতিবেদকের।
রাজু কর্মকার, বাড়ি আমোদাবাদ, পিতার নাম রাখাল কর্মকার। গত ১০ বছর যাবৎ এ কাজ করছেন তিনি। বাবার সাথে এ পেশায় ছোটবেলা থেকে জড়িয়ে পড়েন রাজু। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেই বাবার সাথে এ কাজে নিয়োজিত হন রাজু। রাজু কর্মকার এ প্রতিবেদককে জানান, কামারের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজও শিখিনি। যার কারনে অন্য কোন পেশায় যেতে পারছি না। এ পেশায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবে সামনে কুরবানির ঈদ থাকায় এখন কাজের চাপ বাড়ছে।
অপরদিকে দুলাল কর্মকার (কামার) নামে এক কর্মকার শিল্পী জানান, বাপ দাদার পেশা হিসেবে এ পেশাটাকে ধরে রেখেছি। কিন্তু খুব ভালো নেই পরিবার পরিজন নিয়ে। আগে সারা বছরই মোটামুটি কাজ থাকতো, এখন সারা বছর যে কাজ থাকে তা দিয়ে তিন বেলা পেটপুরে খেতে পারিনা। গত কয়েক মাস যাবৎ করোনার কারনে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। এখন ঈদকে সামনে রেখে কুরবানি পশুর জবাই ও কাটার কাজে ব্যবহৃত দা ছুরি, টাসকাল ছান দেওয়া ও নতুন করে বানানোর অর্ডার পাচ্ছি। এতে প্রতিদিনই ভালো ইনকামও হচ্ছে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply