স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে নিয়ে কি যেন খোঁজে বেড়াচ্ছিলেন ৫০ উর্ধ্ব এক ব্যক্তি। মানুষের চেহারার দিকে তাকাচ্ছিলেন তিনি। বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘না না এমুন লোক না’। আগ্রহ নিয়ে ঐ সংবাদকর্মী জানতে চাইলে, শহীদ মিয়া নামে ওই রিকশা চালক জানালেন, সারাদিনের আয়ের সাড়ে চারশ’ টাকা ছিনতাই হয়েছে।
রবিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ ভাষা চত্বরে ঐ সংবাদকর্মীর কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গোকর্ণঘাটের বাসিন্দা শহীদ মিয়ার।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে হালদারপাড়া এলাকায় যাওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি রিকশায় উঠেন। সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেনের সামনে রিকশা আসার পর ওই যাত্রী ১০০ টাকার ভাংতি দেয়ার কথা বলে। শহীদ মিয়া পকেট থেকে খুচরা টাকা বের করতেই নজরে আসে ওই যাত্রীর। তখন বলে ১০০ টাকা নয় ৫০০ টাকার নোটের ভাংতি দিতে হবে। ৫০০ টাকার ভাংতি হবে না বলা মাত্র ওই ব্যক্তি তার কাছ থেকে টাকাগুলো নিজের হাতে নিয়ে নেয়। আসছি বলে ওই ব্যক্তি আর ফেরেনি।
কাঁদতে কাঁদতে শহীদ মিয়া সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘আমি গেরামের (গ্রাম) দিকে বেশি রিকশা চালাই। মাঝে মইদ্যে শহরে আসি। দুপুর বেলা ওই লোক সাড়ে চাইরশ’ টেহা লইয়া গেলে ৫০০ টেহার নোট লইয়া আইব মনে কইরা আমি অনেকক্ষণ দাঁড়াই আছিলাম। কিন্তু তাইনে আর ফিরা আইছে না। আমার সারাদিনের রুজি লইয়া গেছে গা। আমি কেমনে ঘরের খরচ চালামু। রিকশা চালক মো: শহীদ মিয়ার ছয় কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। চার মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়ায় এখন মোট ছয় জনের সংসার। রিকশা চালানাের আয় থেকেই তার সংসার চলে। ছেলে দুটির বয়স ছয়-সাত বছর। রিকশাটি তার নিজের।
পুরাতন কাচারী এলাকায়র মাঝ বয়সি এক লোক কান্না করতে দেখে স্থানীয় সংবাদকর্মী ইফতেয়ার রিফাত এগিয়ে যান। এ সময় তিনি সব ঘটনা শুনেন। পরে রিকশা চালক শহীদ মিয়াকে নিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় যান ওই যাত্রীকে খোঁজার জন্য। কিন্তু না পেয়ে তিনি সহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই রিকশা চালককে দিয়ে দেন। টাকা পেয়ে ওই রিকশা চালকের মুখে যেন রাজ্য জয়ের হাসি ফুটে উঠে।
চা দোকানী মাসুম মিয়া জানান, ওই রিকশা চালক বেশ কিছু সময় তার দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু কিছু বলেননি। অনেকক্ষণ পর জানতে পারি এক ব্যক্তি পাঁচশ’ টাকার নোট দেয়ার কথা বলে রিকশা চালকের কাছে থাকা সব টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কালের কন্ঠের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন,” ছিনতাইকারীর কৌশল বুঝতে না পারায় গ্রামের সহজ সরল খেটে খাওয়া এই রিক্সা চালকের সারাদিনের উপার্জন ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারি। রিক্সাচালকের কান্না দেখে আমরা টাকাটা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করি। এরমধ্যে সময়টিভির চিত্র সাংবাদিক জুয়েল রহমান, সহ অপর সংবাদকর্মী মিলে টাকা তার হাতে তুলে দেন। এসময় স্বস্থির হাঁসি ফুটে উঠে ওই রিক্সা চালকের মুখে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply