বিজয়নগর প্রতিনিধি//সময়নিউজবিডি
ভারতের আগরতলা রাজ্যের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারার পর বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে চাষীদের। ইতিমধ্যেই জেলার বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৭৬ হেক্টর জমিতে সবুজ জাতের মাল্টার চাষ করেছেন চাষীরা। মাল্টার বাম্পার ফলনও হয়েছে। এ বছর প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি বিভাগ।
সরজমিন ঘুরে চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে সবুজ জাতের মাল্টা চাষ নিয়ে চাষীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ থাকলেও ফলন ভালো হওয়ায় চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। সবুজ জাতের মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। আগামীতে উচুঁ পাহাড়ি জমিসহ খালি জমিতে আরো ব্যাপকভাবে মাল্টার চাষ করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় চাষীদের সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর উপজেলার নোয়াবাদি, মেরাশানী, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর, আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমোদাবাদ ও রাজাপুর এবং কসবা উপজেলার চরনাল, গোপীনাথপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় এ বছর সবুজ জাতের মাল্টার চাষ করা হয়েছে। প্রতিটি বাগানের মাল্টা গাছের থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে মাল্টা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬ সালে কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় প্রথমবারের মতো বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপন করেন চাষীরা। শুরুতে রসালো এই ফলটির ফলন নিয়ে চাষীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ থাকলে খরচ কম এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাল্টার প্রতি আগ্রহ বাড়ে চাষীদের। দাম ভালো পাওয়ায় চাষীরাও খুশী হন।
বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামের বাগান মালিক মোঃ সোহাগ ভূঁইয়া জানান, চলতি বছর তিনি তার ১ একর জমিতে সবুজ জাতের মাল্টার চাষ করেছেন। তার বাগানে ১২০টি গাছ আছে। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছর মাল্টার ফলন বেশি হয়েছে। খরচ কম এবং লাভ বেশী হওয়ায় এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রথম বছর বাগানে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম বছরে তিনি ২লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এবছর মাল্টার বাম্পার ফলন হওয়ায় তিনি আরো বেশী লাভ হওয়ার আশা করছেন। তিনি বলেন, তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই পেয়ারা, বেগুনের আবাদ কমিয়ে মাল্টা বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।একই এলাকার অপর একটি মাল্টা বাগানের মালিক সাজু ভূইয়া বলেন, আমাদের পাহাড়ি এলাকার মাটি লাল হওয়ায় মাল্টা চাষের জন্যে বেশ উপযোগী। তিনি বলেন, এ বছর মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিক্রিও বেশ ভাল হচ্ছে। বর্তমান বাগান থেকে প্রতি কেজি মাল্টা ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর, কুমিল্লা, নরসিংদী ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে বাগান থেকে মাল্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মাল্টা বাগানের মালিক মোঃ আবু সালেহ জানান, বিজয়নগরে এত সুন্দর মাল্টার আবাদ হবে আমরা কখনো চিন্তা করিনি। বর্তমানে আমাদের এলাকায় মাল্টা বাগানে ফলন ভাল হওয়ায় আমার মতো অনেক কৃষক মাল্টার বাগান করতে আগ্রহী হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদেরকে সহযোগীতা করেন তাহলে আগামী দিনে এলাকায় মাল্টার চাষ আরো বাড়বে। মাল্টার বাগান করতে আগ্রহী মেরাশানী গ্রামের কৃষক মোঃ কুদ্দুস মিয়া বলেন, সোহাগ ও সাজু ভ‚ইয়ার মাল্টা বাগান দেখে আমরা মাল্টার বাগান করতে অনুপ্রানিত হয়েছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও আমাদেরকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। আগামীতে এলাকায় মাল্টার বাগানের সংখ্যা আরো বাড়বে।
আখাউড়া উপজেলার আজমপুর গ্রামের আল আমিন নামে এক বাগান মালিক এ প্রতিবেদককে জানান, শখের বসে তিনি তার দুই বিঘা জমির উপর মাল্টার বাগান করেছেন। তিনি এলাকায় বিভিন্ন বাগান দেখে ও অনলাইনে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখে এ বাগান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তবে তাঁর বাগানে এখনও ফলন আসেনি। আরো দুই মাস সময় লাগবে বাণিজ্যিক ভাবে ফলন আসতে। তার বাগানে ফলন ভালো হবে বলেও তিনি আশাবাদী।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার হাদিউল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সাইট্রাস ভিলেজ প্রজেক্টের আওতায় কৃষকদেরকে বিনামূল্যে মাল্টার চারা সহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হয়। যা দেখে এলাকার কৃষকরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। বর্তমানে বিজয়নগরে মাল্টা চাষে প্রসার ঘটেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবছর বিজয়নগরে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক মোঃ রবিউল হক মজুমদার বলেন, এবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মাল্টার ভাল ফলন হয়েছে।তিনি বলেন, এলাকার ১৬৬০টি বসতবাড়ি, ১৯৮টি ব্লক বাগানসহ মোট ১ হাজার ৮৮০টি বাগানে মাল্টার আবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত বাগান থেকে মোট ১৭ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply