স্টাফ রিপোর্টার, সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডেঙ্গু আতঙ্ককে পুঁজি করে জেলা সদর হাসপাতালের এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জ্বরে আক্রান্ত মিলন মিয়া (১৬) নামে এক রোগী গত ৯ দিন যাবৎ নানাভাবে হয়রানীর শিকার হয়েছে।
জানা যায়, বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরার বাহার মিয়ার ছেলে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাইকপাড়ার বাসিন্দা ১৬ বছরের মিলন মিয়ার জ্বর হলে তার খালা আনুরা বেগম তাকে গত ৩০ জুলাই ২০১৯ ইং তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আসলে আনুরা বেগম দালালের খপ্পরে পড়ে। দালালরা ভাল চিকিৎসার এবং ভাল ডাক্তারের নাম করে মিলনকে পার্শ্ববর্তী একটি মেডিকেল সেন্টারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসাপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ। মোঃ ফাইজুর রহমান ফয়েজ এর বেসরকারী চেম্বারে নিয়ে যায়। সেখানে ডাঃ ফাইজুর রহমান ফয়েজ মিলনকে দেখে ডেঙ্গুর হতে পারে বলে নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা দেয়। এবং জেলা সদর হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নয় , ভালো চিকিৎসা হবে না বলে ঐ ডাক্তারের অংশীদারিত্বের বেসরকারী হাসপাতাল শহরের মৌলভীপাড়ার হিউম্যান জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি হতে বলেন। সেই হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শে মিলন ভর্তি হয়। ভর্তিকালীন বেডভাড়া পরীক্ষার খরচ বেশী আসতে থাকায় আনুরা বেগম রোগীকে সদর হাসপাতালে ভর্তির জন্য বারবার অনুরোধ করে। আনুরা বেগম জানায়, প্রায় ২০ হাজার টাকা বেসরকারী হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও থাকা বাবদ হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ডাঃ ফইজুর রহমান ফয়েজ রোগীর অবস্থা খারাপ, বাঁচাতে হলে ঢাকা নিতে হবে বলে ৪ আগষ্ট হিউম্যান জেনারল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে রেফার করে দেয়। তখন রোগীর খালা আনুরা বেগম মিলনকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ৪ আগষ্ট পুনরায় নিয়ে আসে। তখন হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট ডাঃ এম এ ফায়েজ মিলনের ব্যবস্থা পত্র দেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতর বলেন।
এদিকে ঐদিন হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মোঃ ফাইজুর রহমান ফয়েজ মিলনকে সদর হাসপাতালে দেখতে পেয়ে বলেন, এই রোগীর অবস্থা খারাপ ঢাকা নিতে হবে এখানে ভর্তি করা যাবে না বলে রোগীর আত্মীয়কে শাসিয়ে বিদায় করে দেয়। পরে মিলন পাইকপাড়ার বাড়িতে চলে যায়।
হাসপাতালে ভাল চিকিৎসা নেই অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন বেসরকারী হাসপাতালে ভাল চিকিৎসার ব্যাপারে ডাঃ ফাইজুর রহমান ফয়েজ এর মন্তব্য সহ ঘটনাটির অভিযোগ সোস্যাল মিডিয়ায় জানাজানি হয়ে যায়। বিষয়টি অবগত হন সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ শওকত হোসেন। পরে আজ ৯ আগষ্ট শুক্রবার তত্বাবধায়ক রোগী মিলনের বাড়ির খোঁজ খবর নিয়ে উনার তত্বাবধানে সদর হাসপাতাল নিয়ে আসেন এবং পেয়িং ওয়ার্ডে দুপুরে ভর্তি করান। এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ শওকত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার সহ নানা ব্যবস্থাপনা রয়েছে, দরিদ্র রোগীদের জন্য কোন প্রকার ফি ছাড়াই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সদর হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নয় এ কথা ঠিক নয়। তিনি জরুরী বিভাগের ডাঃ ফাইজুরের বিরুেদ্ধ অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, এমন হলে তা দুঃখজনক। তবে মিলনকে এখন যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডাঃ ফাইজুর রহমান ফয়েজ বলেন, মিলন তার তত্বাবধানে হিউম্যান জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি ছিল। তবে আমার বিরুদ্ধে মিলনের আত্মীয় যে অভিযোগ করেছে তা সত্য নয়।
এদিকে আজ দুপুরে মিলনের খালা আনুরা বেগম বলেন, মিলন এতিম ছেলে, তার বাবা নেই। আমার কাছে সে থাকে। আমি বাসাবাড়িতে কাজ করি। কম খরচে বারবার সদর হাসপাতালে মিলনকে চিকিৎসা করতে চেয়েছি। কিন্তু ডাঃ ফাইজুর রহমান ফয়রজ আমাকে তার বেসরকারী হাসাপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়েছে। এবং সদর হাসপাতালে ভাল চিকিৎসা হবে না আমার মিলন মাথা ও পেট মোটা হয়ে মারা যাবে বলে ভয় দেখায়। পরে ঢাকা রেফার করে । এই হয়রানীর শিকার হয়ে আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে , সুদী কর্জা করে এনে আমি সেই টাকা পরিশোধ করেছি। আমি এই ডাক্তারের বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত ডাঃ ফইজুর রহমান ফয়েজ এর মুঠোফোন নাম্বার ০১৭১১৩২১৩১৯ এ চারবার কল দেয়া হলে তিনি কলটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply