স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পারিবারিক চলাচলের রাস্তা দখলসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরের পুকুর থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও মন্দির পরিচালনা কমিটির মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। পাশাপাশি রাস্তা দখল করায় চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার দুটি পরিবারের সদস্যরা। বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের মেরাশানী (আলগাবাড়ির) গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর ছেলে মজিদ আলীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন তার আপন ভাতিজার ও মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সরজমিন ঘুরে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বুধন্তী ইউনিয়নের কেনা গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর ৫ ছেলের মধ্যে ৪ ছেলে পৈত্রিক বাড়িতে জায়গার স্বল্পতা থাকায় একই ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামে এসে জায়গা কিনে বসবাস শুরু করেন। তাদের মধ্যে মনু মিয়া ও আজিদ আলী মারা যান ও বর্তমানে আইয়ুব আলী ও মজিদ আলী জীবিত আছেন। চার ভাই একই জায়গায় পাশাপাশি বসবাস করেন। তাদের বাড়ির দক্ষিণ পাশে ধানি জমির হাওয়র ও উত্তর পাশে সরকারি রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে বাজারে ও শহরে যাতায়ত করেন এলাকাবাসী। মজিদ আলীর বড় ভাই প্রয়াত মনু মিয়া ও আরেক ভাই আয়ুব আলী বসবাস করেন বাড়ির দক্ষিণ পাশে ও মজিদ এবং তার আরেক ভাই আজিদ আলী বসবাস করেন উত্তর পাশে। চার ভাইয়ের পরিবারের লোকজন চলাচলের জন্য বাড়ির মাঝখান দিয়ে প্রত্যেকের অংশ থেকে ৩ ফুট করে ৬ ফুট প্রস্তের একটি রাস্তা রাখা হয়েছে সকলের সম্মতিতে। যে রাস্তা দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সকলেই চলাচল করে আসলেও গত ৫/৬ মাস আগে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মজিদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের অংশের ৩ ফুট রাস্তার উপর খর কাঁটা ও ইটশুরকি দিয়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে মজিদ আলীকে তার অন্য ভাই ও ভাতিজার জিজ্ঞেস করলে সে তার জায়গা দিয়ে রাস্তা দিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে সামাজিক একটি শালিস বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে রাস্তাটি বন্ধ করা হবেনা মর্মে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি হয়। পরে শালিসকারকদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সম্প্রতি মজিদ আলী রাস্তা বন্ধ করে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে অন্য তিন ভাইয়ের পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে সরকারি রাস্তায় যাতায়াত করতে পারছে না।
এ ব্যাপারে মজিদ আলীর ভাতিজা ও প্রয়াত মনু মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া বলেন,আমাদের বাবা চাচারা চলাচল করার জন্য প্রত্যেকের জায়গা থেকে ৩ ফুট করে বাড়ির মাঝখান দিয়ে একটি রাস্তা রাখা হয়েছে। যে রাস্তা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমরা সকলেই মিলেমিশে চলাফেরা করছি। কিন্তু গত ৪/৫ মাস ধরে আমার চাচা মজিদ আলী এ রাস্তা দিয়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এ নিয়ে আমাদের সাথে তর্কবিতর্ক হলে আমার বাড়িঘরে হামলা করে রান্না করার মাটির চোলা ভেঙ্গে দিয়ে আমার স্ত্রীকে ও মাকে মারধরও করেন। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে সম্প্রতি মজিদ আলী ও তার ছেলেরা রাস্তার উপর দেওয়াল নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সে আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশে বাসন্তী মন্দিরের পুকুর থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় বৃষ্টিপাত হলে আমাদের বাড়ি ভেঙ্গে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ঘটনার সত্যতা জানতে অভিযুক্ত মজিদ আলীর বড় ভাই হাজী আব্দুর রশিদ জানান, আমরা ৫ ভাই। এর মধ্যে আমি মাধবপুরে বসবাস করি ও বাকি ৪ ভাই মেরাশানিতে একই সাথে বসবাস করেন। তাদের বসবাসের জায়গাটিও আমার কিনা। আমার কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে ৪ ভাই জায়গাটি কিনেন। সে সময় সবার উপস্থিতি ও সম্মতিতে সবার প্রয়োজনে বাড়ির মাঝখান দিয়ে ৬ ফুট রাস্তা রেখে যারযার জায়গা বুঝিয়ে আমি দলিল করে দিয়েছি । এরমধ্যে আমার দুই ভাই মারাও গেছেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে আমার ছোট ভাই মজিদ আলী ও তার ছেলেরা রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়ে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে ফেলে । এতে আমি বাঁধা দিলেও সে কোন কথা না শুনে অন্যায়ভাবে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করেন। যা সে অন্যায় করেছে।
এ ব্যাপারে মজিদ আলী জানান, দলিলে বাড়ির মাঝখান দিয়ে রাস্তার কথা উল্লেখ নাই। আমার জায়গায় আমি বাউন্ডারি দেয়াল দিয়েছি। তারা কেমনে চলাফেরা করবে সেটা তাদের বিষয় । মন্দিরের পুকুর থেকে কেন মাটি কেটে নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা মন্দিরের পুকুর না , এটা আমার কিনা পুকুরের কিছু অংশ। কার কাছ থেকে কিনেছেন জিজ্ঞেস করলে বলেন দুর্গাচরণ নামে এক হিন্দু লোকের কাছ থেকে কিনেছেন। দুর্গাচরণ কিসের মালিকানায় বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে মজিদ আলী বলেন, পুকুরের ৫৭ শতক জায়গা সরকারি খাস খতিয়ানের। দুর্গাচরণ লিজ এনে বিক্রি করেছেন। লিজের জায়গা বিক্রি কিংবা ক্রয় করা যায় কিনা জিজ্ঞেস করলে মজিদ আলী কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে এড়িয়ে যান।
অপরদিকে, একই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসন্তী মন্দিরের একটি পুকুরের পানি শুকিয়ে পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া ও পুকুর থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ মজিদ আলীর বিরুদ্ধে।
Leave a Reply