সংবাদ শিরোনাম
খুনি দাঙ্গাবাজ ও মাদককারবারীসহ সকল অপরাধীদের দমনে জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে : নবাগত পুলিশ সুপার শাহ্ মোঃ আবদুর রউফ বিজয়নগরে স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ। দোকানপাট ও ব্যাংকে ভাংচুর লুটতরাজ।। আহত-২০ যারা এনেছিলেন মৃত্যুহীন প্রাণ।। আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী বিজয়নগরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অটোচালককে পিটিয়ে হত্যা কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন।। সভাপতি শাওন, সাধারণ সম্পাদক আলম জেলার পুলিশ অফিসার ও ফোর্সদের কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি দিলেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার কসবায় হোন্ডা কোম্পানির বাইকারদের জন্য দিনব্যাপী ফ্রী সার্ভিস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত সংস্কৃতিতে রাজনীতি নয়, রাজনীতিতে সংস্কৃতি চাই- প্রবর্তকের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে বক্তারা ধর্ষনের সাজানো অভিযোগের প্রতিবাদে কমলগঞ্জে ইউপি সদস্যের সংবাদ সম্মেলন শ্রীমঙ্গলে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ
যারা এনেছিলেন মৃত্যুহীন প্রাণ।। আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী

যারা এনেছিলেন মৃত্যুহীন প্রাণ।। আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"border":1,"transform":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্যাতিমান শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমান। যিনি ছিলেন একাধারে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, তুখোড় ছাত্রনেতা, আদর্শ শিক্ষক, দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক ও অনলবর্ষী বক্তা। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী ও মানবদরদি মানুষ। তঁার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক ও একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী।
অধ্যাপক এ. কে লুৎফর রহমান-এঁর পূর্বপুরুষদের বাড়ি নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে হলেও পিতার কর্মস্থলের সুবাদে তঁার পরিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা শহরের কাউতলীতে বসবাস করতেন। তঁার পিতা কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই. এ ও মোক্তারি পাস করে কলকাতাতেই কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে এসে দীর্ঘদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোর্টে আইন ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৩৭ সালের ১১ অক্টোবর পিতা কাজী আবু জামাল ও মাতা নজিবুন্নেছার কোল আলোকিত করে কাউতলীতে জন্মগ্রহণ করেন লুৎফর রহমান। তিনি ছিলেন চার ভাই, ছয় বোনের মধ্যে তৃতীয়। অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের বাবা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং তঁার নানা বাড়ি সদর উপজেলার ভাদেশ্বরা গ্রামেরও আত্মীয়রাও ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চপদস্থ। তাই শিক্ষা অর্জনের জন্য পারিবারিক অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় লুৎফর রহমান ছোটোবেলা থেকেই একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে বেড়ে ওঠেন।
তিনি স্থানীয় খ্রিষ্টান মিশনারী স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৫৪ সালে অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগে পাস করেন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে তঁার রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। তিনি ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষা-বর্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্র রাজনীতিতে জড়ালেও লেখাপড়ায় ছেদ ঘটাননি তিনি। অধ্যাপক লুৎফুর রহমান দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে বি. কম (অনার্স) এবং এম. কম ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরবর্তীতেও তিনি কলেজ পরিচালনা পরিষদে শিক্ষক প্রতিনিধি এবং শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের উন্নয়নে তিনি ভূয়সী ভূমিকা রাখেন। নিজ সহকমর্ীদের নিয়ে তিনি স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কলেজের উন্নয়নে ভূমিকার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। তৎসময়ে যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কলেজের গভর্নিং বডি গঠন করতে সমর্থ হন। ফলে দ্রুত সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের উন্নয়ন তড়ান্বিত হয়। তিনি নিজ অথার্য়নে অনেক গরিব মেধাবী শিক্ষাথর্ীদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। অনেক গরীব পিতার মেয়ের বিয়ের খরচ জুগিয়েছেন। তাই অল্প দিনেই সকল শিক্ষক-ছাত্র ও অভিভাবকদের কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি পরিচিত ও মযার্দা লাভ করেন। নানা কারণে তঁার বাড়িতে প্রায়ই নানা শ্রেণী পেশার লোকের আনাগোনা ছিল।
অধ্যাপক লুৎফুর রহমান ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন। ফলে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ, সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ছয় দফা আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন কিংবা উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত প্রায় সকল সভা-সমাবেশেই তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে দেশ ও জনগণের পক্ষে সোচ্চার থেকেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অধ্যাপক লুৎফুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনবল গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। তিনি স্থানীয় তরুণদের মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ কাজে জড়িয়ে পড়েন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গোপনে চঁাদা সংগ্রহ করতেন। নিজের অসুস্থ বাবা-মার সেবা করার জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও যে-সব মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শেষের দেশের অভ্যন্তরে এসে নানা ধরনের তৎপরতা চালাতেন- তাদের সাথে তিনি গোপনে যোগাযোগ রাখতেন। তাদের আর্থিক সহায়তাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। এসব নানা কারণেই তিনি স্থানীয় রাজাকার ও পাকিস্তান বাহিনীর রোষানলে পরেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রু কবলিত হলে তিনি কিছুদিন নাসিরনগর উপজেলায় আত্মগোপনে থাকেন এবং সেখানে থেকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তৎপরতা চালাতে থাকেন। কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পরে তিনি আবার অসুস্থ বাবা-মার সেবা করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাক বাহিনীর সদস্যরা অধ্যাপক লুৎফুর রহমানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারা লুৎফুর রহমানকে নানা ধরনের নির্যাতন করে তার কাছ থেকে অনেক তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া তঁার দুই ভাতিজা কাজী মনির হোসেন ও কাজী আনার হোসেন সম্পর্কে তথ্য নিতে ব্যর্থ চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা ব্যর্থ হয়ে ১১ দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে বন্দি রাখার পর ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয় অ্যান্ডারসন খাল (কুরুলিয়া খাল)-এর শিরা টিলা নামক স্থানে ৩৫জন বাঙালিসহ অধ্যাপক লুৎফুর রহমানকেও নির্মমভাবে হত্যা করে। পরদিন পরিবারের সদস্যরা তাঁর লাশ তুলে এনে কাউতলী কবরস্থানে দাফন করে।
১৯৬৮-৬৯ সালে তিনি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলাপকালে প্রায়ই বলতেন, ‘ছয় দফা দিয়ে কিচ্ছু হবে না, পূর্ণ স্বাধীনতা চাই’। মুক্তিযুদ্ধের প্রক্কালে তিনি বলছেন- “দেশ হয়তো এমন ব্যক্তির রক্ত চায় যার রক্ত এখনো দেওয়া হয়নি। যে দিন দেওয়া হবে সেদিনই দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে।’ শহীদ লুৎফুর রহমানের রক্তই যেন সেই রক্ত। তাঁর আত্মবলিদানের মাধ্যমইে তিনি যেন এই দেশের স্বাধীনতা নিশ্চত করেছিলেন। তাঁর শাহাদতের একদিন পরেই ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুমুক্ত হলেও তাঁরা তা দেখে যেতে পারেনি। সেদিন তাঁর সাথে কুরুলিয়া খালে আরো যারা শহিদ হন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল আলম, আইনজীবী সৈয়দ আকবর হোসেন, সৈয়দ আফজাল হোসেন (সরাইল আন্নদার দশম শ্রেণির ছাত্র), কার্তিক ভট্টাচার্য (সমাজসেবী), সুরন আলী, (কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা), বীর মুক্তিযোদ্ধা আশুরঞ্জন দেব (ছাত্র, ভৈরব)।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার কতর্ৃক অধ্যাপক লুৎফুর রহমান শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। একই বছর তঁার স্মরণে কাউতলীতে ‘শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে তঁার নামে একটি ‘স্মারক ডাকটিকিট’ প্রচলন করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান ভবন ‘শহীদ লুৎফুর রহমান বিজ্ঞান ভবন’ নামে নামকরণ করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের একটি ছাত্রাবাসও ‘শহীদ লুৎফুর রহমান ছাত্রাবাস’ নামে নামকরণ করা হয়। সরকারি কলেজের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়ার মানসে লুৎফর রহমান-এঁর নামে একটি ‘স্মৃতি তহবিল’ গঠন করা হয়েছিল।
এছাড়াও কুরুলিয়া খালের অদূরে কাউতলী গোল চত্বরে পাকিস্তানের বাহিনীর হাতে লুৎফর রহমানসহ সকল নিহতদের স্মরণে ১৯৯৯ সালে ‘সৌধ হিরন্ময়’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করা হয়। ১৯৮৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যম-এর উদ্যোগে লুৎফর রহমান স্মরণে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল বলে জানা যায়। সে অনুষ্ঠানে দেশখ্যাত লেখকগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই মহান ব্যক্তির অমর স্মৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তঁার অমর কৃর্তি ও আত্মত্যাগের স্মৃতিকে স্মরণ করেছে। ২০০১ সালে সাহিত্য একাডেমির ১৮তম বার্ষিক সভা লুৎফুর রহমান স্মরণে তঁারই বাড়ির সংলগ্ন নিয়াজ পার্কে অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর দীর্ঘদিন ধরেই মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক- এই বুদ্ধিজীবী নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা ছিল না। নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না এই মহান বুদ্ধিজীবীর সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা। সেই অভাবটির পূরণ করতে এবার প্রকাশ করা হয়েছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমান স্মারক গ্রন্থ’। যদিও এই মহৎ উদ্যোগটি নতুন নয়, বহু বছরের পুরোনো। ধারাবাহিক কার্যক্রমের প্রচেষ্টা থেকেই ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের রজত জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সাহিত্য একাডেমি শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমান স্মরণ-সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। একাডেমির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান সভাপতি কবি ও গবেষক জয়দুল হোসেন উক্ত সংকলনের জন্য অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের বন্ধু, সহকর্মী, প্রাক্তন ছাত্র এবং শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করেন। অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনির হোসেন এই স্মরণিকা প্রকাশের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৯৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে স্মরণিকাটির প্রকাশ একরকম অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
দীর্ঘদিন পর এই স্মরণিকা প্রকাশ দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাংলা একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মামুন সিদ্দিকী। কবি জয়দুল হোসেন ও মামুন সিদ্দিকীর যৌথ সম্পাদনায় সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থটি প্রকাশে এগিয়ে আসে শহিদ অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র অ্যাডভোকেট আহম্মদুন নবীর রানার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কমর্ী ওয়াহিদ শামীম। সকালের সম্মিলিত প্রয়াসেই গ্রন্থটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে। এখানে উল্লেখ যে অধ্যাপক লুৎফুর রহমান ছিলেন অবিবাহিত। তাই উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ তার আদর্শের অনুসারী হয়ে গ্রন্থটি প্রকাশে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখেন।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ-এর লেখা রয়েছে আলোচ্য স্মারক গ্রন্থে। আর অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের সহকর্মী ও ছাত্রদের লেখাতো রয়েছেই। এছাড়াও এতে রয়েছে পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যদের স্মৃতিচারণমূলক লেখা। উৎসর্গিত কবিতা রয়েছে বেশ কয়েকটি। সব মিলিয়ে ৫৩ জনের লেখা স্থান পেয়েছে আলোচিত এই স্মারক গ্রন্থে। রয়েছে অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের বেশ কিছু রঙিন ছবি। প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থের লেখাগুলো প্রায় ৩০ বছর আগে সংগ্রহ করা। ফলে ইতোমধ্যে স্মারক গ্রন্থের অনেক লেখক মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯২ পৃষ্ঠার মূল্যবান এই গ্রন্থটির প্রকাশ করেছে দেশের সুনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘সুবর্ণ’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন দেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মাসুক হেলাল। বইটির ছাপা মূল্য রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা মাত্র। স্মারকগ্রন্থটি অচিরেই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগ্রহী পাঠকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানা যায়।
গ্রন্থটির সম্পাদক কবি জয়দুল হোসেন বলেন- শহীদ অধ্যাপক লুৎফুর রহমান একটি স্মরণীয় নাম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিশেষত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য উচ্চারণ। কাউতলী কবরস্থানে তঁার সমাধি ফলকে লেখা রয়েছে অমর পঙ্ক্তি – “নয়ন সম্মুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছে যে ঠঁায়।” কেননা তঁার শিক্ষা, আদর্শ, চেতনা, সততা ও দেশপ্রেম জনমানুষের মনে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। গ্রন্থটির অন্যতম সম্পাদক গবেষক মামুন সিদ্দিকী বলেন- “অধ্যাপক লুৎফুর রহমান এমন এক নাম- এই নামের সূত্রে জানা যায় একটি জনপদের মুক্তিসংগ্রামের গাথা। এই নামে জেগে থাকে জনসমাজের কত না দিক। সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার কাব্য হয়ে যে-নাম মিশে আছে মানুষের অন্তরে। তিতাস পাড়ের এই অমৃতসন্তানের কথা মানুষ কি কোনো দিন ভুলে যাবে? যতদিন বাঙালি-সমাজ মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তৃষিত থাকবে ততদিন তিনি স্মরিত হবেন। মনুষ্যত্বের সাধনা ছিল যার জীবনব্রত তিনি বিস্মৃত হন কী করে? জীবনকে ক্ষয় করে তিনি তো মূলত অক্ষয়ের মর্যাদা লাভ করেছেন। এজন্যই তিনি চিরঞ্জীব।”
স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর দায় পরিশোধ হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় লেখ-সংস্কৃতিসেবীগণ। মৃত্যুর ৫৪ বছর পর হলেও নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমান সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার এই মহান চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। আজ ১১ অক্টোবর এই মহান বুদ্ধিজীবীর ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। আমরা তঁার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা : শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক লুৎফুর রহমান স্মারকগ্রন্থ-এর সম্পাদক মামুন সিদ্দিকী লিখিত পূর্বলেখ ও জয়দুল হোসেন লিখিত জীবন-পরিচয় অংশ।
লেখক: মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ, সংস্কৃতি কর্মী।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com