ইসলামের নবী বিশ্বনবী, যাকে সৃষ্টি না করিলে আল্লাহতায়ালা কিছুই সৃষ্টি করিতেন না, এই আসমান, জমিন, লোহ কলম, আরশ, জান্নাত জাহান্নাম জ্বীন ইনসান, ফেরেশতা তথা কুল মাখলুকাত যার জন্য আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন সেই মহামানব সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) দুঃখ কষ্ট অভাব অনটনে সারাটা জীবন অতিবাহিত করে গেছেন শুধু উম্মতের দরদ আর চিন্তা ফিকির করে।তিনি চাইলে ফেরেশতারা তার জন্য পাহাড়কে স্বর্ন বানিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন সেই নবীর অভাব অনটন কি পরিমাণে ছিলো তা জানা আমাদের জন্য অতীব জরুরী বিষয়। আসুন, আমরা আমাদের নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের অভাব অনটনের কিছু ঘটনা জেনে নেয়।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ( সাঃ) এর খাদেম হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবীজী (সাঃ)এর অফাত (ইন্তেকাল) এমন অবস্থায় হয়েছে যে, তিনি কখনো পেট ভরে যবের রুটি খেয়ে দেখেননি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবন সঙ্গিনী প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং তার পরিবারবর্গ কখনোই একাধারে দুইদিন পেটভরে যবের রুটি খেতে পারেনি।
হজরত আয়েশা (রাঃ) তার আপন ভাগ্নে হজরত উরওয়াকে বলেন, কোন কোন সময় এমন ও অতিবাহিত হয়েছে যে,আমরা পরপর তিন মাসের চাদ দেখতে পেয়েছি। অর্থাৎ দুইমাস অতিক্রান্ত হলেও আমাদের ঘরে চুলা গরম করার সুযোগ আসতো না।তখন হজরত উরওয়া জিজ্ঞেস করলেন খালাজান! তাহলে ওই দিন গুলো কি খেয়ে বেচে ছিলেন? উত্তরে নবী পত্নী আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুধু খেজুর আর পানি দিয়েই দিন কাটিয়ে দিতাম।
হজরত আনাস (রাঃ) বলেন, একবার হজরত ফাতেমা (রাঃ) এক টুকরো রুটি নিয়ে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হন। রাসুল (সাঃ) জিগ্যেস করলেন এটা কিসের টুকরো?
হজরত ফাতেমা (রাঃ) আরজ করলেন এটা রুটির টুকরা। আপনাকে না দিয়ে আমি (ফাতেমা) এই টুকরাটি একা খাই তা সহনীয় ছিল না। তখন হুজুর (সাঃ) বলেন, তুমার পিতার মুখে তিনদিন পর এই প্রথমবার খাদ্য প্রবেশ করছে। বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) এরশাদ করে বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ক্ষুধার দরুন পেটে পাথর বেধে রাখতেন, যেন পাকস্থলী ভারী বলে অনুভূত হয়। হজরত আনাস (রাঃ) একবার শপথ করে বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তৈল দিয়ে বানানো নরম রুটি স্বচক্ষে কোনদিন দেখেননি। ইসলামের বিজয় যখন বিস্তৃত হলো এবং দলে দলে মানুষ ইসলামের শান্তির ছায়াতলে এসে মুসলমান হতে লাগলো তখন একবার হজরত উমর (রাঃ) তার ভাষণে বললেন, আমি একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ক্ষুধায় খুব কাতর দেখেছিলাম, তার কাছে তখন এমন কিছু ই ছিলনা যা দ্বারা তিনি ক্ষুধা নিবারণ করতে পারতেন।
লেখকঃ মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান। যুগ্ম সম্পাদক- ইসলামী ঐক্যজোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা।
Leave a Reply