স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
হতদরিদ্র জাবেদের স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ালেন মোঃ ফিরোজ মজুমদার নামে এক পুলিশ সদস্য। যার সহযোগিতা নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া জাবেদের পড়াশোনা শুরু হয়। ২০২০ ইং সনের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে জাবেদ। এতে হতদরিদ্র জাবেদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়েছে একটি ধাপ।
গতকাল রবিবার (৩১ মে) সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
হতদরিদ্র জাবেদ ২০২০ ইং সনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিদ্যানিকেতন থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে সে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। গতকাল ৩১ মে রবিবার পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে জাবেদ সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়।
এদিকে, মোঃ জাবেদ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িযার বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মৃত সায়েদুল ইসলাম ও মৃত রোমেনা বেগমের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। মা রোমেনা বেগম মারা যায় ২০১৪ ইং সনের ফেব্রুয়ারি মাসে। তার বাবা সায়েদুল ইসলাম একজন শ্রমিক। তিন বোন বিয়ে করে স্বামীর সংসার করছেন আর দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা আলাদা বসবাস করছেন। জাবেদের ভাইয়েরা নিজেদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ২০১২ সালে মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর নিজের খাবার জোগাতে পড়াশোনা বন্ধ করে ২০১৪ সনের এপ্রিল মাসে মির্জাপুর বাজারের মন্নর আলীর মুদির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেয়। দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করাকালীন ২০১৫ ইং সনের ৮ জানুয়ারি বিজয়নগর থানায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন মোঃ ফিরোজ মজুমদার নামে এক মানবিক পুলিশ সদস্য। যিনি প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে গিয়ে চোখ পড়ে হতদরিদ্র জাবেদের দিকে। পরে জাবেদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন তার কষ্টের কথা? কেন বন্ধ হয়ে গেল তার পড়াশোনা? যা শুনে হৃদয় গলে যায় ফিরোজ মজুমদারের। পরে জাবেদের পড়াশোনা সহ সকল দায়িত্ব তুলে নেন নিজ কাঁধে। যার ফলে ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন পূরণে শুরু হয় জাবেদের পড়াশোনা। পরে গত ২০১৬ ইং সনে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিদ্যানিকেতনে পুলিশ সদস্য ফিরোজ মজুমদার নিজ খরচে ৬ষ্ট শ্রেণীতে জাবেদকে ভর্তি করান। কথা বলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকের সাথে। সকল খরচ ফিরোজ মজুমদার নিজে বহন করবেন বলে শিক্ষকদের জানিয়ে বিষয়টি কারো সাথে না বলারও অনুরোধ করেন। একজন পুলিশ সদস্যের এমন মহানুভবতা দেখে অবাক হন স্কুলের শিক্ষকরা। এরই মাধ্যমে শুরু হয় জাবেদের নতুন জীবন। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে নিজের কর্মব্যস্ততার পরও সার্বক্ষণিক জাবেদের পড়াশোনার খোঁজখবর রাখেন তিনি। স্কুলের শিক্ষকদের কোচিং ক্লাসের পরও বাসায় আরো একজন প্রাইভেট শিক্ষক নিযুক্ত করা হয় জাবেদের পড়াশোনার জন্য।
পুলিশের এ হৃদয়বান সদস্যের সার্বিক সহযোগীতায় গত ২০১৭ সনে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিদ্যানিকেতন থেকে জেএসসি পাশ করেন জাবেদ ও ২০২০ ইং সনে জাবেদ ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে জাবেদের পড়াশোনার সকল ব্যয়ভার বহনকারী মানবিক পুলিশ সদস্য ফিরোজ মজুমদার চলতি বছরের ৮ মার্চ বিজয়নগর থানা থেকে বদলি হয়ে চলে যান কক্সবাজারে। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় কর্মরত আছেন।
জাবেদের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার খবর শুনে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন মানবিক পুলিশ সদস্য ফিরোজ মজুমদার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, ভালোমন্দ সবকিছুর মালিক আল্লাহ। অভাবের কারনে ছেলেটির পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর একটি মুদি দোকানে কর্মচারীর কাজ নেন জাবেদ। সেখানে কেনাকাটা করতে গিয়ে পরিচয় হয় তার সাথে। পরে ছেলেটির কথাবার্তা ও চালচলন দেখে একটি তার কাছে জানতে চাই সে পড়াশোনা না করে দোকানে কেন কাজ নিয়েছে।তখন জাবেদ তার পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা বললে আমি তাকে পড়াশোনা করার সকল খরচ বহন করলে সে পড়াশোনা পূনরায় করবে কিনা জানতে চাইলে সে সম্মতি দেয়। পরে তাকে স্থানীয় উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিদ্যানিকেতনে নিয়ে গিয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। তিনি আরো বলেন, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত পড়াশোনার সকল ব্যয়ভার বহনের চেষ্টা করেছি। আমি চাই সে মানুষের মতো মানুষ হয়ে গরীব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবে। সে যতদিন পড়াশোনা করবে আমি যেখানেই থাকি সহযোগিতা করে যাবো।
এ বিষয়ে জাবেদ মিয়া জানান, ফিরোজ মজুমদার ভাই আমার কাছে দেবদূত হয়ে এসেছেন। আমি আজও মুদি দোকানের কর্মচারীই থাকতাম। ফিরোজ ভাইয়ের জন্যই আমি এসএসসি পাশ করতে পেরেছি। আমি পুরো জীবনেও উনার ঋণ শোধ করতে পারবো না।
পড়াশোনা করে কি হতে চাও এমন প্রশ্নের জবাবে জাবেদ জানান, আমি একজন পুলিশ অফিসার হতে চাই। যাতে গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে পারি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply