সংবাদ শিরোনাম
ভয়কে করতে হবে জয় ; এইচ.এম. সিরাজ

ভয়কে করতে হবে জয় ; এইচ.এম. সিরাজ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি। তিনিও স্কুল পালিয়েছেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, তিনি পড়তেই পারলেন না দারিদ্রতার জন্য। ফকির লালন শাহ্, ওনিতো বুঝলোইনা স্কুল কি। অথচ আজ মানুষ তাদেরকে নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করছে। এই পৃথিবী নিতান্তই বৈচিত্র্যময়। তার চাইতেও অধিক বৈচিত্র হচ্ছে এই পৃথিবীর মানুষ। দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মতো বৈচিত্রতার অন্ত নেই এই গোটা দুনিয়াতে। তথাপিও আমরা কদাচ হতাশার মাঝে গা ভাসাই! আর এজন্য মূলত দায়ী আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী।

ময়লা পোষাকের জন্য অ্যাণ্ড্রু কার্ণেগীকে পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়নি। শেষতক ৩০ বছর পর ওই পার্কটিকে তিনি কিনে ফেলেন আর এতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’ লিখে। স্টিভ জব শুধুমাত্র একদিন ভালো খাবারের আশাতেই সাত মাইল দূপরবর্তী গীর্জায় পায়ে হেঁটে হেঁটেই যেতেন। ভারতের সংবিধানের প্রণেতা বাবা আম্বেদকর নিম্নবর্ণের হিন্দু হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে ক্লাশ করতে হতো। কোনো গাড়িই তাঁকে নিতেন না। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ডক্টর আতিয়র রহমান বাজার থেকে উত্তোলনকৃত চাঁদার টাকাতেই পড়াশোনা করে বড় হয়েছেন। নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘সকলের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হলেও বাজার থেকে উত্তোলিত ওই চাঁদার টাকা শোধ করতে আমি কোনোদিন সাহসও পাইনি।’
অাপনি সুন্দর চেহারার কথা ভাবছেন? মহাকবি শেখ সাদী (রহ.)’র চেহারা যথেষ্টই কদাকার ছিলেন। ভালো পোষাক পরিধান করে এক অনুষ্ঠানে যাবার পর প্রদত্ত খাবার তিনি নিজে না খেয়ে পুরছিলেন জামার পকেটে। আয়োজকরা এমনটির কারণ জানতে চাওয়ার জবাবে বলেছিলেন, ‘এই খাবার তো আমাকে নয়,আমার ভালো পোষাককে দেয়া হয়েছে! তাই এসব তাকেই দিলাম।’ এই গল্পটি আমাদের অনেকেরই জানা। ভারতের জীবন্ত কিংবদন্তী শিল্পী লতা মুংগেশকরের চেহারা তো মোটেই সুশ্রী নয়। পৃথিবীর অর্ধেকাংশ বিজয়কারী তৈমুর লঙ খোঁড়া ছিলেন। বিশ্ববিখ্যাত বীর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট দেখতে বেটে ছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন’র মুখ-হাত যথেষ্ঠ বড় ছিলো। উত্তম স্মৃতিশক্তির কথা ভাবছেন? বিজ্ঞানী আইনস্টাইন নিজের বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নম্বরটিও মনে রাখতে পারতেন না। অথচ সময়ের আবর্তে তিনিই পরিণত হন জগদ্বিদিত বিজ্ঞানী। আজ অবধি তিনি গোটা দুনিয়ার মানুষের কাছে আইকন হয়েই আছেন। 
নিকোলাস ভুজিসিক ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে হাত-পা বিহীন জন্ম নেন। ক্রমান্বয়েই বেড়ে ওঠাকালে চারপাশের মানুষের কাছে উপহাসের পাত্র ছিলেন। কিন্তু তার বাবা তাকে বলতেন-“ভুজিসিক, তুমি বিধাতার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য উপহার। শুধু একটু ভিন্ন মোড়কে। তুমি কখনোও হতাশ হয়ো না।” বাবার উৎসাহ-অনুপ্রেরণায় সে থেমে থাকেনি। একটা পর্যায়ে  ‘অ্যাকাউন্টিং’ এবং ‘ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং’ এই দু’টি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করলেন যা হয়তোবা আমাদের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষের পক্ষেই খুব একটা সহজতর নয়। সময়ের আবর্তে সমগ্র বিশ্বজুড়ে তিনি হন অত্যন্ত সুপরিচিত একজন মোটিভেশনাল স্পিকার। হাজার হাজার মানুষ নিজেদেরকে মোটিভেটেড হস তাঁরই শিক্ষনীয় বক্তৃতা শুনে। ভুজিসিক ভাবতেন, হয়তোবা তিনি কভু বিয়ে করতে পারবেন না! তার অঙ্গহীনতার জন্য হয়তোবা কোনো নারী তাকে পছন্দই করবেন না! অার বিয়েতো বহুদূরের কথা! কিন্তু ভুজিসিকের সেই ধারণাটি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণভাবেই ভুল প্রমাণ করে দেন জাপানী বংশোদ্ভুত আমেরিকান ‘ক্যানা মিহারা’। তিনি ভুজিসিকের প্রেমে মত্ত হয়ে ভালোবাসলেন এবং বিয়েও করলেন।
আমরা প্রায় অনেকেই পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করি। কেবল ভাবি, এটা পাইনি-ওটা পাইনি। এমনকি এজন্য কদাচ সৃষ্টিকর্তাকেও দোষারোপ করে ফেলি! আসলে মহান অাল্লাহ্ সবাইকে সবকিছু দেয় না। কিন্তু তাই বলে আমরা যদি আমাদের না পাওয়াগুলো নিয়েই সদায় আফসোস করি! দুশ্চিন্তা করি! তবে দেখবো জীবনটাই বড়ো বিষাদময়। জীবনকে কখনো উপভোগ করতে পারবো না। না পাওয়ার শূণ্যতা সদা সর্বদায়ই অামাদের তাড়িয়ে বেড়াবে। তবে অামাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করলেই আমাদের যা আছে তা নিয়েই সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারি। শিক্ষা, সৌন্দর্য কোনোকিছুই আপনার উন্নতি এবং সাফল্যের পিছনে বাঁধা হতে পারে না। যদি কোনোকিছু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা কেবল আপনার ভিতরকার ভয়। তাই ভয়কে দূরে রেখে জয় করাটাকে শিখতে হবে, তখন উন্নতি-সাফল্য ধরা দিবেই দিবে।                                   

এইচ.এম.সিরাজ : কবি, সাংবাদিক, শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, নির্বাহী সম্পাদক- দৈনিক প্রজাবন্ধু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com