স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন বলেছেন, সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে তিনি ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় একটি সমবায়ী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন, এদেশের মানুষ আমার প্রাণ, তাই সমবায়ের জাদুরকাঠির মাধ্যমে গ্রামবাংলার সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে সমবায়ের কোন বিকল্প নেই। সমাজের সকল ক্ষেত্রে সমবায় ভিত্তিক কার্যক্রম করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সকলের সার্বিক সহযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমবায় আন্দোলন বেগবান করারও আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।
শনিবার (০৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টায় স্থানীয় সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে ৫০ তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
“বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমবায় বিভাগের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগীতায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ইয়ামিন হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ এইচ মাহবুব আলম।
উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য জহিরুল ইসলাম ভুইয়া।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, বিশ্বের সব দেশেই সমবায় সমিতির মাধ্যমে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করেছেন। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। যেসব দেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলো উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ঢাকা শহরে দুধের ঘাটতি পূরণে সমবায় সমিতির মাধ্যমে “মিল্ক ভিটা” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে সামনে রেখে তা বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বলেন, মানুষ যেদিন থেকে সমাজবদ্ধ হয়েছে সেদিন থেকেই সমবায়ের সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ হচ্ছে বিশ্বের বড় সমবায় সমিতি। যে সমিতির পুরো বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পাকিস্তান আমলের একজন সিএসপি অফিসার আক্তার হামিদ নামে একজন কুমিল্লা বার্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই এদেশে সমবায় সমিতির মাধ্যমে সকল কার্যক্রম করেছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সনে বিদেশ থেকে তৎকালীন সময়ে ৯৪ হাজার টাকা করে ডিপ টিউবওয়েল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক সমিতির কাছে হস্তান্তর করেন। এর পর থেকেই দেশে খাদ্য সংকট দূর হয়েছিলেন।
৫০তম জাতীয় সমবায় দিবসে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন স্বপ্নতরী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান তাহের উদ্দিন ভুইয়া।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোঃ ইয়ামিন হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ের উন্নয়ন ” এ স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সমবায় সমিতি গঠন করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
জাতীয় সমবায় দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ নেওয়াজ শরীফ মজুমদার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ এম এইচ মাহবুব আলম বলেন, ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায় সমিতির মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য সমবায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠন করেন এবং প্রতিটি গ্রামে একটি করে কৃষক সমবায় সমিতি গঠন করে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছিল।
৫০তম জাতীয় সমবায় দিবসে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন ন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম লিমন।
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ নেওয়াজ শরীফ মজুমদার বলেন,সমবায় বাজার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আগামী এক বছরের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি সমবায় বাজার প্রতিষ্ঠা করতে জেলা প্রশাসক এর সহযোগিতা কামনা করেন।
স্বনির্ভর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী পরিচালক এসএম শাহীনের সঞ্চালনায় ও জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ নেওয়াজ শরীফ মজুমদার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপসহকারী নিবন্ধক আলমগীর হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল, গীতা পাঠ করেন বিশ্বজিৎ সাহা। এতে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন স্বপ্নতরী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর সভাপতি তাহের উদ্দিন ভুইয়া, তিতাস সমবায় সমিতির সভাপতি হালিমা মোর্শেদ।
এদিকে, অনুষ্ঠানের প্রথমেই জাতীয় ও সমবায় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণ। অনুষ্ঠান শেষে সমবায়ে বিশেষ অবদানের জন্য ৫ টি সমবায়ী প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply