মোঃ আব্দুল হান্নান,নাসিরনগর প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আর,এম,ও ডাঃ সাইফুল ইসলাম একজন করোনা যুদ্ধা। করোনার শুরু থেকেই তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের। তিনিই সর্ব প্রথম নাসিরনগরে করোনা আক্রান্ত পূর্বভাগ ইউনিয়নের মালয়শিয়া ফেরৎ প্রবাসী শাহ আলমের চিকিৎসা করেন।এ জন্য তাকে ১৪ দিন থাকতে হয় হোম কোয়ারেনটাইনে। তিনি বলেন আমাকে সাথে থেকে শক্তি আর সাহস যোগাচ্ছেন অত্র হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অভিজিৎ রায় স্যার।
সোমবার মোবাইল ফোনে কথা হয় করোনা যোদ্ধা ডাঃ সাইফুল ইসলামের সাথে। এ সময় হাসপাতালে বসে রোগী দেখছেন তিনি। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা এক ব্যক্তি করোনায় মারা গেছেন। মারা যাওয়া ওই প্রবাসীর পরিবারের আরো ৫ সদস্যও করোনায় আক্রান্ত। সর্বশেষ হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারের সহকারী (ওটি বয়) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থাতেও বন্ধ হয়নি নাসিনরগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতায় সেখানে সাধারণ চিকিৎসাসেবা চলছে পুরোদমে। পাশাপাশি করোনার নমুনা সংগ্রহসহ অন্যান্য কাজও করে যাচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরতরা। তিনি বলেন, শুধু আমি নয়, আমার সাথে এ হাসপাতালে কর্মরত আরো অনেকেই করোনার সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।তিনি জানান, এপর্যন্ত এ হাসপাতালে ২০১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাঝে আজ ২৭ এপ্রিল ২০২০ ইং রোজ সোমবার পর্যন্ত ৭ জনের পজেটিভ রির্পোট পাওয়া গেছে।
হাসপাতালেরই আরেকজন চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম সাঈফ, মোবাইল ফোনে জানাচ্ছিলেন নিজেকে করোনায় সঁপে দেওয়ার কথা। একমাস ২০ দিন আগে জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তানকে কাছ থেকে দেখতে না পারার যন্ত্রণা ভুলে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। জন্মের পরপরই ওই সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদেরকে দেখে এসেছিলেন। বললেন, পরিবারের সবার কথা মনে পড়ে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আমি যাব না। যাওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই। নমুনা সংগ্রহসহ অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে যদি আক্রান্ত হই তবে এখানে থাকলে সেটা নিজের ভেতর থাকবে। পরিবারে গিয়ে সেটা ছড়াতে চাই না।
নাসিরনগরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম। যে কারণে প্রথমে তাঁকে ১৪ দিনের হোমা কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। ওই সময়েও মোবাইল ফোনে বিভিন্ন কাজের তদারকি করেছেন। এখন নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ, আইসোলেশন ওয়ার্ড তদারকি, সারাধণ রোগীদের সেবা দেওয়ার কাজ করতে হয়।
সাইফুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী থাকেন ঢাকার বনশ্রীর বাসায়। সাড়ে তিন বছরের বড় ছেলের নাম রাইয়াত আল ইসলাম আজরাফ। প্রায় দেড় মাস বয়সি ছোট ছেলের নাম রেখেছেন রাইয়ান আল ইসলাম আরহাম।
সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাসপাতালের সকলেই নিময়মাফিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সবাই আমাকে কাজে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সবাইকে নিয়ে আন্তরিকভাবে সার্বিক পরিস্থিতিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অভিজিৎ রায় বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যসেবার শেষ আশ্রয়স্থল হলেন ডাক্তার। মানুষের এমন বিপদে তাদের পাশে থেকে চিকিৎসা দেয়া ডাক্তারদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই এই করোনা মহামারির সময়ে ঈশ্বরকে স্বরণ করে সাধারণ অসহায় মানুষের কাছে থেকে চিকিৎসা সেবা দেয়াই আমাদের মুল লক্ষ্য। তিনি তার চিকিৎসক টিম নিয়ে যেন সবসময় মানুষের সেবা দিয়ে যেতে পারেন সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply