স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
যথাযোগ্য মর্যাদায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ‘বিটঘর গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর গতকাল শনিবার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়েছেন সরাইল উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের উদ্যোগে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ৮০ শহীদের স্বজনদের। অনুষ্ঠানে অঝোরে কাঁদলেন শহীদ জায়া মালেকা খাতুন।
শনিবার বেলা ১১টায় উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এস.এম মোসা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা প্রিয়াংকা, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাররা ও এলাকাবাসী বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তক অর্পন করেন।
এ সময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শহীদ পরিবারের সদস্যগন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন। এ সময় শহীদ জায়া মালেকা খাতুনসহ শহীদদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে. সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামটি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারণ্য। এই গ্রামে আশ্রয় নিয়ে ছিলো শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
বিটঘরের স্থানীয় লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগী করতেন।এই গ্রাম থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্নস্থানে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গেরিলা হামলা চালাতো। সরাইল থানাও আক্রমণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বিটঘর গ্রামের পার্শ্ববর্তী বেড়তলা গ্রামে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের (রাজাকার) সাথে ঘন্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এদিন সন্ধ্যার পর পার্শ্ববর্তী দূর্গাপুর গ্রামবাসী পাকিস্তানি এক সেনাকে আঘাতে হত্যা করে। সেই সাথে মনু মিয়া নামে সরাইলের এক রাজাকারকে পিটিয়ে আহত করে। এসব ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ৩১ অক্টোবর দুই শতাধিক পাকিস্তানি সেনা সদস্য বিটঘর গ্রামের ৬১টি জনসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের ৮০ জনকে একত্র করে নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লাশগুলো বিটঘর গ্রামের ছোটখালে ফেলে দেয়।
গণহত্যায় শহীদ সামসু মিয়ার স্ত্রী মালেকা খাতুন তার স্বামীসহ সকল শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ৪৮ বছর ধরে আগলে রাখা ১৫ শতক জমি বিটঘর বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য দান করেন।
২০১৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খঁানের উদ্যোগে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। সেখানে ৮টি স্মৃতিফলকে ৮০ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ওই বছরই প্রথম উপজেলা প্রশাসন বধ্যভূমিতে ফুল দিয়েছিল।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply