শফিকুর রহমান,সরাইল উপজেলা প্রতিনিধি
ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের চুন্টা এসি একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণ কাজ দীর্ঘ তিন বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেতু এন্টারপ্রাইজ। গত ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করেন সেতু এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশ পাওয়ার ২শত ৭০দিনে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কত দিনে কাজ শেষ হবে তাও জানেন না কেউ।
ভবন নিমার্ণ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ভবন নির্মাণের কারনে গত তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা পাঠদান না করে ঘুড়ে বেড়াতে দেখা যায়। বিদ্যালয়ের ৩টি শ্রেণী কক্ষে নতুন ভবনের আসবাবপত্র রাখার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করতে পারছে না।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের চুন্টা উচ্চ বিদ্যালয় ভাটিক্যাল প্রজেক্টে ৩য় তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু ইন্টারপ্রাইজ। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি ২শত ৭০দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিলো। শুরুর দিকে কাজ দ্রুত চলছিল। পরে এসে কাজ ধীরগতিতে রূপ নেয়। পরে উপজেলা শিক্ষা দফতর ও উপজেলা প্রকৌশল দফতরের চাপে কাজ শুরু হয়। ধীরগতির কাজের জন্য চলতি ৩ বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি তারা। বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানান সেতু ইন্টারপ্রাইজ টিকাদার তৈয়মুর ও স্থানীয়রা।
চুন্টা এসি একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী দেবাযর্য দেব জানান, আমি যখন ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ে ৬শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলাম তখন বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছিল। আমি এখন ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ৩ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। এতে করে আমাদের একই রুমে ৩টি সেকশনের শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে আমাদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রত্না আক্তার ও নদী দেব জানান, নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ সময় মতো শেষ না করায় আমাদের লেখাপড়া ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ক্লাশ রুমে নতুন ভবনের আসবাবপত্র রাখার কারণে ৩টি ক্লাশ রুম বন্ধ থাকায় আমরা একসঙ্গে গাধাগাধী করে ক্লাশ করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে চুন্টা এসি একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল কাইয়ূম জানান, বিদ্যালয়ের ৩টি শ্রেনীকক্ষে নতুন ভবনের নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণে ছাত্রছাত্রীদের নতুন বছরের ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না। প্রতি ক্লাশে শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ভাটিক্যাল প্রজেক্টে গত (২০১৯,২০২০ ও ২০২১ ইং) ধরে নির্মাণকাজ চলছে। তিন বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ ভাগ কাজ হয়েছে। ঠিকাদারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেছি দ্রুত কাজ শেষ করতে। নতুন বছর শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসেও ক্লাশ শুরু করতে পারছিনা। ইতি মধ্যে নতুন ভবনের আসবাবপত্র চলে এসেছে। আসবাবপত্র রক্ষনাবেক্ষণের জন্য পুরাতন ভবনের তিনটি কক্ষ ব্লক হয়ে আছে। এতে করে ক্লাশ রুমের আরো সংকট হয়ে পড়েছে। ভবন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু ইন্টারপ্রাইজ এর প্রতিনিধি তৈয়মুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, কোভিড-১৯ এর কারনে আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুজন মাহমুদ ও এনামুল হক জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ২শত ৭০দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু ইন্টারপ্রাইজের মালিক মহিউদ্দিন নিজে কাজ না করে তৈয়মুরের নিকট কাজ বিক্রি করে দিয়েছে। সেতু ইন্টারপ্রাইজের মালিক মহিউদ্দিন নিজে কাজ করছে না। আমরা তৈয়মুরকে চাপ দিচ্ছি দ্রুত কাজ শেষ করে দেয়ার জন্য। সে কাজ না করে টালবাহনা করছে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply