শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে টিসিবির উপকার ভোগীর তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নে ৯২৫ জন কার্ডধারীর তালিকায় এক উপ-সচিবের বাবা, ব্যবসায়ী, বিপুল পরিমান জমির মালিক, দ্বিতলা পাকা ভবনের মালিক, বিত্তশালী ও প্রবাস ফেরত ব্যক্তির নামও রয়েছে। এছাড়াও ইউপি সদস্যদের বাবা, ছেলে, বোনসহ সচ্ছল আত্মীয় স্বজনের নামও তালিকায় আছে। যাদের পরিবারের অনেকেই প্রবাসে থাকেন। স্বল্প আয়ের জনগোষ্টিকে উপকারভোগী হিসেবে তালিকায় অগ্রার্ধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হয়নি কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নে। বঞ্চিতদের অভিযোগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাদের নিজেদের ইচ্ছামাফিক আত্বীয়-স্বজন ও নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে টিসিবির ফ্যামেলী কার্ড করেছেন।
জানা যায়, সরকারের ভিজিডি, ভিজিএফ প্রাপ্ত ও করোনাকালীন অসহায়দের তালিকা থেকে টিসিবি পন্য বিতরনের জন্য উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্তির সরকারী নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি আদমপুর ইউনিয়নে। এখানে ৯টি ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান তাদের স্বজন ও আস্থাভাজন লোকজনকে তালিকাভুক্ত করেছেন। শুধু তাই নয় হতদরিদ্রদের পরিবর্তে নাম দিয়েছেন গাড়ি, বাড়ির মালিক সরকারের এক উপ-সচিবের বাবা, এলাকার বিত্তশালী, দ্বিতল ভবনের মালিক ও ব্যবসায়ীদের নাম। যাদের পরিবারে নেই কোন অভাব। আবার অনেক পরিবারের সদস্যরা থাকেন প্রবাসে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক টিসিবি পন্য বিতরণে নামের তালিকায় রয়েছেন ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর ভানুবিল গ্রামের বসবাসকারী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব পদে কর্মরত প্রদীপ কুমার সিংহের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার সিংহ। তার পাকা বাড়ি, গাড়ি ও বিস্তর জমিজমার মালিক কৃষ্ণ কুমার প্রথম কিস্তির পন্য নিয়েছেন।
একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের ছেলে ধান ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, পিতা জহুর উল্যা ও ভাই এরফান আলীর নামও রয়েছে টিসিবির তালিকায়। অথচ ইউপি সদস্য গফুর মিয়ার দুই ছেলে ফ্রান্স ও দুবাই প্রবাসী। আদমপুর বাজারে বড় ঔষধ ব্যবসায়ী কীর্তিজিত সিংহ, নইনারপার বাজারের মতিউর রহমান, উত্তর ভানুবিল গ্রামের বিত্তশালী মো: গনু মিয়ার নামও রয়েছে টিসিবির এ তালিকয়। যার দ্বিতলা বাড়ি ও তিন ভাই প্রবাসে, ইউপি সদস্য আব্দুল আজিমের ছেলে ফাহাদ আলী, মেয়ের জামাই জুবের মিয়া ও নিকটাত্মীয় সাহেদা আক্তারের নামও রয়েছে টিসিবির তালিকায়। স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে যাননি সংরক্ষিত নারী সদস্য গুল নাহার বেগম।তার ভাই ও স্বজনদের নামও রয়েছে তালিকায়। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরো অর্ধশতাধিক স্বচছল ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায় যারা বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত বা তাদের স্বজনরা প্রবাসে আয় রোজগার করছেন। দরিদ্রদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা টিসিবি কার্ড পাওয়া বঞ্চিতদের মধ্য দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
স্থানীয় সমাজকর্মী তাজউদ্দিন আহমেদ তাজু, সাদেক হোসেন ও জসিম উদ্দিন বাদশা বলেন, তালিকা তৈরীতে আরও যাচাই বাছাই ও স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিলো। দরিদ্ররা পেলে উপকার হতো।
এদিকে উপকারভোগী ও উপ-সচিবের বাবা কৃষ্ণ কুমার সিংহ এর কাছে নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় মেম্বারে সাথে কথা বলার উপদেশ দেন।
ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর টিসিবির তালিকায় উপ-সচিবের পিতার নাম,নিজের ছেলে, পিতা ও ভাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয় স্বীকার করে বলেন, আসলে আমি এতো সব বুঝিনি, আমার ভূল হয়েছে জানিয়ে আরো বলেন, এ রকম আর হবে না। চেয়ারম্যানকে বলে তালিকা থেকে নাম কেটে দিব। আরেক ইউপি সদস্য আজিম মিয়া বলেন, দরিদ্র অনেকে টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় স্বচ্ছলদের নাম দিতে হয়েছে। এ বিষয়ে আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন মেম্বারদের স্বজন প্রীতির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি অনিয়ম পছন্দ করি না, মেম্বারদের তালিকায় কিছুটা স্বজনপ্রীতি হয়েছে, আমি স্বচ্ছলদের নাম কেটে দিবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, আমি জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুয়ায়ী কার্ডে স্বাক্ষর করেছি, সেখানে কারা স্বচ্ছল তা জানি না, এ রকম হলে চেয়ারম্যানকে বলে দিবো কেটে দেয়ার জন্য। উপসচিবের বাবা নাম টিসিবির তালিকায় রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি সঠিক জানি না, আপনার মাধ্যমে শুনলাম,তবে এরকম হলে কার্ড বাতিল করা হবে।
- ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply