স্টাফ রিপোর্টার //সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে বটি দা দিয়ে মাকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ে নিহত চানতাঁরা বেগমের মেয়ে তানিয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবার (০৪ নভেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ২ নভেম্বর ২০১৯খ্রিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানাধীন সুলতানপুর ইউপি’র বিরামপুর দক্ষিণপাড়াস্থ আবু ছিদ্দিক ভুইয়ার মালিকানা পুকুরের উত্তর-পূর্ব কোনার টিনসেট ঘরে বসবাসরত চাঁনতারা বেগম(৪৫), স্বামী-মোঃ খলিল মিয়া, সাং-সেমন্তঘর, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর গলা কাটা জবাই করা লাশ ঘরে পড়ে আছে সংবাদের ভিত্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মৃত চাঁনতারা বেগমের ভাই মোঃ জাকির হোসেন (৩৮), পিতা-মোহন মিয়া, সাং-কনিকারা, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার মামলা নং-৪, তারিখ-০৩/১১/১৯খ্রিঃ, ধারা-৩০২ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
মৃত চাঁনতারা বেগম (৪৫) নবীনগর থানাধীন সেমন্তঘর সাকিনের মোঃ খলিল মিয়া এর সহিত ১৮ বছর পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মোঃ খলিল মিয়ার বাড়িতে বসবাসের কোন জায়গা-জমি না থাকায় সুলতানপুর ইউনিয়নের বিরামপুর দক্ষিন পাড়াস্থ জনৈক আবু সিদ্দিক ভূইয়া মালিকানা পুকুর পাড়ের উত্তর পূর্ব কোনায় একটি ছোট দু-চালা টিনের ঘরে পরিবারবর্গ নিয়ে বসবাস করত। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঔরষজাত বড় মেয়ে মোসাঃ তানিয়া আক্তার (১৬) এবং ছোট ছেলে আবু সাঈদ (০৮) বিরামপুর দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। তাদের আরেক ছেলে হাসান (১৪) অনুমান দেড় বছর পূর্ব হতে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছে। আর্থিক অভাব অনটনের কারনে চাঁনতারা বেগমের স্বামী মোঃ খলিল মিয়া বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালায়। মামলা রুজু পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান নিজে ঘটনা সংক্রান্তে সন্ধিগ্ধদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাবাদের এক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভিকটিম চাঁনতারা বেগমকে বটি দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করার অপরাধে তদন্তে প্রাপ্ত আসামী মোছাঃ তানিয়া আক্তারকে ০৩/১১/২০১৯খ্রিঃ তারিখ ১১.৩০ ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়। আসামী মোছাঃ তানিয়া আক্তার গত ০৩/১১/১৯ইং তারিখ বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাহিদ হোসাইন এর আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে হত্যার দায় স্বাীকার করে।
আসামী মোছাঃ তানিয়া আক্তার বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার সাথে নিজের দায় স্বীকার করে জানায়, “ঘটনার রাতে তানিয়ার আক্তারের বাবা মোঃ খলিল মিয়া, মা চাঁনতারা বেগম, ভাই আবু সাঈদসহ চার জন মিলে একঘরে ছিল। গত ০২ বছর পূর্বে তানিয়া আক্তারের ছোট ভাই হাসান হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার মা ভিকটিম চাঁনতারা বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সে নিজে নিজে কথা বলত, কারো কথায় জবাব দিত না। ঘটনার দিন ভোরে ফজরের আযানের পর তার বাবা মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করতে যায়, তখন তার মা চাঁনতারা বেগম ঘুম থেকে জেগে দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে চায়। এ সময় তানিয়া আক্তার তার মাকে ঘরের ভিতর নিয়ে আসে। সে তার মাকে বিছনায় শোয়াতে চেষ্টা করে। চাঁনতারা বেগম বিছনায় না শুয়ে ঘরে থাকা বটি দা নিয়ে এসে তানিয়াকে বলে “নে আমারে মাইরালা” তখন তানিয়া আক্তার রেগে গিয়ে তার মায়ের হাতের বটি দা দিয়ে গলায় টান দেয়। বটির টানে তার মায়ের গলা কেটে গিয়ে প্রচুর রক্ত বের হয়। পরবর্তীতে তানিয়া আক্তার ভয় পেয়ে তার বাবাকে ডাক দিলে মসজিদ থেকে তার বাবা ও অন্যান্য মুসল্লিরা ঘরে এসে দেখে চাঁনতারা বেগম মারা গেছে”।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সহ জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply