স্টাফ রিপার্টার//সময়নিউজবিডি
রাজনীতিতে বরাবরই ফ্যাক্টর হিসেবে খ্যাত জাতীয় পার্টির নতুন সহযােগী সংগঠন হিসেবে স্থান পেয়েছে জাতীয় তরুণ পার্টি। এই সংগঠনে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালিন নির্বাহী সদস্য মামুনুর রহিম সুমনের পরিশ্রম থাকলেও গত ১২/০২/২০ ইং নতুন সহযাগী সংগঠনের অনুমােদিত স্বীকৃত তালিকা থেকে সভাপতি/আহবায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। শুধু এতেই থেমে নেই, ১১-১২ বছর জাতীয় পার্টির নির্বাহী সদস্য থাকার পর পদোন্নতি না করে বর্তমান কমিটিতে সাধারণ সদস্য করেছে সুমনকে। এনিয়ে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে হই-চই পড়েছে। তৃণমূলের একটি বড় অংশ এবং নতুন কমিটির অনেকেই সুমনকে বাদ দেয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ। সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম মামুনুর রহিম সুমনকে তরুণ পার্টির সভাপতি করার জােড়ালাে দাবি উঠেছে। জাতীয় তরুণ পার্টির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক হয়েছেন জাকির হােসেন মৃধা। তিনি জাপার বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সহ জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, পল্লীবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জাতীয় সাইবার পার্টির নামের ঘােষিত প্রচার সংগঠনের উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। একাধিক পদের অধিকারি জাকির হােসেন মৃধাকে জাতীয় তরুণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক করায় ব্যাপক সমালােচনা শুরু হয়েছে। তবে তরুণ পার্টির সদস্য সচিব মােড়ল জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সমালােচনা নেই। তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক আহবায়ক এবং সক্রিয় সংগঠক হিসেবেই জানেন তৃণমুলের নেতারা।
প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির তৎকালিন কাে-চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান গােলাম মােহাম্মদ কাদের এমপির নির্দেশেই ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় তরুণ পার্টি সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছিল। জিএম কাদেরের পক্ষের শক্তি এই সংগঠনের সভাপতির নেতৃত্বে ছিলেন মামুনুর রহিম সুমন। তৎকালিন ওই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন কাজী রঞ্জন, যুগ্ম আহবায়ক মতিন-উদ-দৌলা, আলামিন ইসলাম, জাহাঙ্গীর হােসেন শান্ত, শামসুল আরেফিন সহ ১০১ সদস্যের কমিটি। জিএম কাদের এমপির নেতৃত্বই সাংগঠনিক কাজ শুরু করে নেতারা। তরুণ পার্টি আত্মপ্রকাশের পর প্রথমই জিএম কাদেরের হাতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে এক-এক জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালিন চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বেগম রওশন এরশাদ এবং জাপার তৎকালিন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের হাতে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে তৃণমুল সংগঠন গােছানাে শুরু করে তরুণ পার্টি। শুরুতেই জাপার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজপথে আন্দােলনে নামে এই সংগঠন। এরশাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যহারের দাবিতে জাপার কােনাে অঙ্গ সহযােগি সংগঠন রাজপথে না নামলেও তরুণ পার্টির বেশ সক্রিয়ভাবেই রাজপথে হুংকার দিতে শুরু করে। মামুনুর রহিম সুমনের অর্থ ব্যয় ও পরিশ্রমে জাপার সক্রিয় সহযােগি সংগঠন রুপ নেয় এই সংগঠন। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিটি মহানগর কমিটি সহ ৫২টি জেলা কমিটি গঠন করতে সক্ষম হন মামুনুর রহিম সুমনের নেতৃত্বে তৎকালিন তরুণ পার্টি। এছাড়াও সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, মালয়শিয়া, ওমান কমিটিও গঠন করা হয়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে অজ্ঞাত কারণে জাতীয় তরুণ পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যদিও সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, তৎকালিন জাতীয় পার্টির নেত্রী ব্যরিষ্টার দিলারা খন্দকারের স্বার্থে ব্যবহার না হওয়ায় মিথ্যা কােন কথায় তরুণ পার্টির কার্যক্রম বন্ধ করেছিলেন জাপার প্রতিষ্ঠাতা। তারপরও চলছিল তৃণমূলের সাংগঠনিক কার্যক্রম।এদিকে গত ১২/০২/২০২০ ইং তারিখে কাউকে না জানিয়ে হঠাৎই জাতীয় পার্টির অঙ্গ সহযােগি সংগঠন স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় তরুণ পার্টির কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটি ঘােষণা করা হয়। এতে একাধিক পদের অধিকারি জাকির হােসেন মৃধাকে আহবায়ক ও ছাত্র নেতৃত্বে সক্রিয় মােড়ল জিয়াউর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়। সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়েন তরুণ পার্টির সভাপতি মামুনুর রহিম সুমন। নতুন আহবায়ক জাকির হােসেন মৃধা একাধিক পদে থাকায় সমালােচনা থামছেই না। জাতীয় তরুণ পার্টির নয়া আহবায়ক কমিটির সদস্য সাচ্চু বিশ্বাস বলেন, আমি তৃণমূলের কর্মী। এই কমিটিতে আমাকে সদস্য করেছে, আমি নিজেই জানিনা। তরুণ পার্টি বলতে গেলেই সবার আগে মামুনুর রহিম সুমনের নাম আসে। সুমনের সাথে অন্যায় বিচার করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন- মামুনুর রহিম সুমনের সাংগঠনিক দক্ষতা, পরিশ্রম, অর্থ দিয়ে তরুণ পার্টি তৃণমূল সক্রিয় করেছে। সুমনকে বাদ দেয়ার বিষয়টি আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছিনা। সুমনকে কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক করার দাবি জানিয়েছেন সাচ্চু বিশ্বাস। ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টির নেতা লেহাজ উদ্দিন সরকার বলেন, মামুনুর রহিম সুমন সাংগঠনিকভাবে দক্ষ। আমি মনে করি, সুমনের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিৎ। তরুণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাকে আহবায়ক (জাকির হােসেন মৃধা) করা হয়েছে, তিনি তা প্রায় সব সংগঠনে পদ নিয়ে বসে আছেন! কােন যােগ্যতায় তাকে আহবায়ক করা হয়েছে, মাথায় আসেনা।তবে মুঠোফোনে যােগাযাগে করার চেষ্টা করা হলে ফােন রিসিভ করেননি তরুণ পার্টির নয়া কমিটির আহবায়ক জাকির হােসেন মৃধা। এ প্রসঙ্গে তরুণ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মামুনুর রহিম সুমন বলেন, এটা আমার প্রতি অবিচার। ১১-১২ বছর জাতীয় পার্টির নির্বাহী সদস্য ছিলাম। ভেবেছিলাম সাংগঠনিক দক্ষতা এবং পরিশ্রমের মূল্যায়ন পাবো। অথচ পদােন্নতি তাে দুরের কথা, বর্তমান কমিটিতে সাধারণ সদস্য করা হয়েছে। তরুণ পার্টিকে তিলতিল করে গড়ে তুলেছি, সেখানেও আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। জানিনা, আমার সাথে দফায় দফায় এমন করা হচ্ছে কেন ?মুঠােফােনে যােগাযােগ করা হলে তরুণ পার্টির নয়া কমিটির সদস্য সচিব মােড়ল জিয়াউর রহমান বলেন, সংগঠনের পূর্বের করা কমিটিগুলাের সাথে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছি। সবাইকে নিয়েই ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় বলেন, সমালােচনা আমাদের কান পর্যন্ত আসেনি। জাকির হােসেন মৃধার বিষয়ে ফেসবুকে সমালােচনা হচ্ছে, ওটা ফেসবুকের বিষয়। তবে জাতীয় তরুণ পার্টিতে মামুনুর রহিম সুমনের পরিশ্রম আছে। সংগঠনের কাউন্সিলের পূর্বের নেতাদের সমন্বয় করা হবে বলে জানান তিনি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply