সংবাদ শিরোনাম
সাহেদ, সাবরিনার পর এবার করোনা রিপোর্ট প্রতারণায় নাম আসলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’র

সাহেদ, সাবরিনার পর এবার করোনা রিপোর্ট প্রতারণায় নাম আসলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’র

স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি 

রাজধানী ঢাকার সাহেদ করিম, আরিফ চৌধুরী ও ডাঃ সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর করোনা রিপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তদের আটক করতে না করতেই এবার করোনা রিপোর্ট প্রতারণায় নাম এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। এ নিয়ে পাবনার রূপপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত চলছে আলোচনা সমালোচনা। তবে কি করোনা মহামারির এ দূর্যোগে রাজধানী ঢাকার জেকেজি, রিজেন্ট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার “ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মতো সারাদেশেই করোনা রিপোর্ট কেলেঙ্কারির কারসাজি হচ্ছে এমনই প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।                 

মহামারি করোনা ভাইরাস (কুভিড-১৯) সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় অবৈধভাবে জনগনের পকেট কাটতে মড়িয়া হয়ে উঠেছে কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। যা ইতিমধ্যেই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এসেছে এবং এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 
এদিকে করোনা রিপোর্ট প্রতারণায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট চিকিৎসক নেতা ডাঃ আবু সাঈদ এর নাম আসায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এ ঘটনার পর একে একে বেরিয়ে আসছে ডাঃ আবু সাঈদ এর আরো অজানা ঘটনা। ইতিমধ্যে করোনা রিপোর্ট প্রতারণার ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদী থানায় তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার এক নম্বর আসামী হিসেবে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার দুই নম্বর আসামী হিসেবে এজাহারে নাম রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডাঃ আবু সাঈদ’র।      
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের শ্রমিক-কর্মচারী হিসেবে চাকুরি করতে হলে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ সার্টিফিকেট জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এ বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান ডাঃ আবু সাঈদ ও তার সহযোগীরা। এর অংশ হিসেবে ঈশ্বরদীর পাকশী রূপপুরে মেডিকেয়ার নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক রূপপুর প্রকল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের করোনা রিপোর্ট করতে মাঠে নামেন। রূপপুরে অবস্থিত মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নমুনা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 
গত ১৭ জুন ২০২০ ইং তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মোঃ শফিকুল স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে করোনা পরীক্ষার নমুনা নেওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু এমন অনুমোদন দেওয়ার বৈধতাও নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কতৃপক্ষের। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে অবৈধভাবে অনুমতি দিয়েছেন কেবল অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। যার ফলে ইতিমধ্যেই তারা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 
এদিকে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগের তথ্য প্রমাণ নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আবদুল ওহাব রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গত ৮ জুলাই ঈশ্বরদী থানায় আবদুল ওহাব রানাকে প্রধান আসামী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ আবু সাঈদকে দুই নম্বর আসামী ও রানার সহযোগী সুজন আহমেদকে তিন নম্বর আসামী করে ঈশ্বরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ ফিরোজ হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত রানা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।  
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারি অনুমোদন না নিয়ে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে কর্মরত ৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করে গত ৬ জুলাই মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জমা দেয়া হয়। কিন্তু নিয়মানুযায়ী নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদান করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান। সিভিল সার্জনের অনুমতিতে নমুনাগুলো নির্ধারিত পিসিআর ল্যাবে যাবে এবং রিপোর্টগুলোও সিভিল সার্জন কার্যালয় বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু সরকারী এ নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করেই রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অবৈধভাবে করোনা নমুনা সংগ্রহ ও মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
অপরদিকে মেডিকেয়ারের মালিক আবদুল ওহাব রানা করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫/৬ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তবে হতাশার ব্যাপার হলো – করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করার জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকার পাশেই একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় তাঁবু টানিয়ে বুথ স্থাপন করেন মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নমুনাদানকারীদের মেডিকেয়ারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হতো নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতো অনলাইনে। সেখান থেকে কপি প্রিন্ট করে দেওয়া হতো নমুনাদানকারীদের। অনলাইনে আসা রিপোর্টগুলোতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পক্ষে চেয়ারম্যান ডাঃ আবু সাঈদ এর স্বাক্ষর রয়েছে।   
একটি সূত্র জানায়, করোনা রিপোর্ট প্রতারণার ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদী থানায় গত ৮ জুলাই মামলা হওয়ার তিনদিন পর গত ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। 
মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক গ্রেপ্তারকৃত আবদুল ওহাব রানা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, নমুনা গুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানোর বিষয়টি পুরোপুরি সাজানো ছিলো। মূলত রূপপুর প্রকল্পে শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকুরি করতে হলে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট জমা দেয়া বাধ্যতামূলক থাকায় মেডিকেয়ার ভুয়া নেগেটিভ করোনা সার্টিফিকেট দিয়ে বিশাল অর্থবানিজ্যের পরিকল্পনা করেন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পুলিশ অভিযান চালায়।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, করোনা রিপোর্ট প্রতারণা চক্রের একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন। এই চক্রের বাকি দুই সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ আবু সাঈদ ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নাটাবাড়িয়ার আরশেদ আলী সরকারের ছেলে সুজন আহমেদ। তাদের দুজনের সাথে যোগসাজশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ১৭০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন মেডিকেয়ারের মালিক আবদুল ওহাব রানা। ইতিমধ্যে ৫০ জনের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাধ্যমে পাওয়া গেছে।  
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডাঃ আবু সাঈদ বলেন, মেডিকেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ৫০ জনের নমুনা আমরা পেয়েছি এবং গত ৬ জুলাই নমুনা পরীক্ষার সঠিক রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তবে প্রতিষ্ঠানটির সরকারি অনুমোদন আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। 

ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।   

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com