আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বাবা মানে বিশাল এক বটবৃক্ষের ছায়া। আমাদের সবার জীবনে বাবাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংগ্রাম-সাধনা আর ভালোবাসার সীমা অসীম। প্রতিনিয়ত নিজেকে নিঃশেষ করে বাবাগণ আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে দিয়ে যান। তাই বাবা মানে নির্ভরতার প্রতীক। সন্তানদের আশীর্বাদের জন্য পৃথিবীর সকল বাবারই রয়েছে আশ্চর্য মোহনীয় এক শক্তি। নিজের জীবনের বিনিময়ে সন্তানের জীবন রক্ষাকারী অসংখ্য বাবার গল্প আমরা জানি। কথায় বলে- পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে কিন্তু একটিও খারাপ বাবা নেই। আসলে ব্যক্তিজীবনে মানুষ যত খারাপই হোক কিন্তু যখন তার পরিচয় একজন বাবা, তখন তিনি তার সন্তানের কাছে একজন রাজা, একজন ডাক্তার, একজন শিক্ষক, একজন বন্ধু, একজন অভিভাবক। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের বাবাই আমাদের জন্য এক পরম আশীর্বাদ ও ছায়া স্বরূপ।
সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা চিরকালের। তাই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে প্রতিটি মানুষের জীবনে তার বাবাই আসল নায়ক। কারণ বাবা শুধু আমাদেরকে জন্ম দেননি, তিনি আমাদেরকে হঁাটতে শিখিয়েছেন, বলতে শিখেছেন, বঁাচতে শিখিয়েছেন। আমাদের দিকে ধেয়ে আসা সকল বিপদ-আপদ, ঝড়-ঝঞ্ঝাকে হাসিমুখে মেনে নিয়ে তিনি আমাদেরকে আগলে রেখেছেন। ছোটবেলায় যারা বাবাকে হারিয়েছেন, যাদের জীবনে বাবার মধুর স্মৃতি নেই, অল্প বয়সে বাবা চলে যাওয়ায় যাদের জীবন হয়ে উঠেছিলো বিষাদময়, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা বাবাকে ভীষণভাবে অনুভব করেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও অনেকের চোখে বাবাকেই মনে পড়ে বারবার। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে বাবা তোমার সন্তান আজ বড় হয়েছে। দেখো চারিদিকে তোমার সন্তানের কত সুনাম। সে না বলতে পারার ইচ্ছাটি যখন কুরে কুরে খায় তখন প্রার্থনায় মহান আল্লাহতালার দরবারে দুই হাত তুলে একটি কথাই উচ্চারিত হয় “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।” সনাতন শাস্ত্রে বলা হয়েছে- ‘পিতাহী পরমং তপঃ। পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা।’ অর্থাৎ ‘পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতাই পরম তপস্যা।
বাবাদের প্রতি সম্মান জানাতে, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাতে এবং বাবাদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে প্রথম ৫ জুলাই দিবসটি পালন করা হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুনের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসাবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। তারপর থেকেই প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদ্যাপিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে দিনটি আরও আড়ম্বরভাবে উদযাপন হয়ে থাকে।
আজ বাবা দিবস। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের একটি অন্যতম দিন এই বাবা দিবস। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধারণা প্রচলিত হলেও বতর্মানে আমাদের দেশেও দিনটি জোড়ালোভাবে উদযাপন করা হয়। আজ বিশ্বের সব বাবার প্রতি ভালোবাসা জানাবেন সন্তানরা। ভালোবেসে উপহারও দিবেন। থাকবে নানা আয়োজন। যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ছবি আপলোড করবেন। আর যাদের বাবা নেই, তারা বাবার ছবি পোস্ট করে, বাবাকে নিয়ে লিখে স্মৃতিচারণ করবেন। দু হাত তুলে মহান স্রষ্টার কাছে বাবা জন্য দোয়া করবেন। আজ আমাদের সবার প্রার্থনা একটাই- বাবারা ভালো থাকুক এপারে, ওপারে।
বাবাদেরকে নিয়ে আমাদের কত স্মৃতি, কত আবেগ, কত ভালোবাসা! তারা ছোটবেলায় আমাদেরকে যেভাবে আদর করেছেন, শাসন করেছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেছেন। তেমনিভাবে বড় বেলায় তাদের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য রয়েছে। প্রতিটি সুসন্তান তার বৃদ্ধ বাবার প্রতি যত্নশীল। কিন্তু আবার অনেক এমন কুসন্তান রয়েছেন যারা বাবার প্রতি ন্যূনতম দায়িত্ব পালন দূরের কথা নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ জানায় না। তাদের সবার বিবেক জাগ্রত হোক, ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি বাবা। বন্ধ হোক বৃদ্ধাশ্রম নামে বাবাদের কারাগার।
লেখক: মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
কবি ও সাহিত্যিক
Leave a Reply