স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ডাঃ ডিউক চৌধুরী পরিচালিত খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হসপিটালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা, চিকিৎসকদের বিভিন্ন ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার ও হসপিটালে সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকা সহ বিভিন্ন অনিয়ম উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যে আদালতে দাখিলের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। জেলার নবীনগর উপজেলার জালশুকা গ্রামের মোঃ আবুল খায়েরের মেয়ে গৃহবধূ পাপিয়া খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়ার ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন পাপিয়ার বাবা। পরে দায়েরকৃত মামলার সত্যতা নিশ্চিত হতে আদালত সিভিল সার্জনকে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
জানা যায়, খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হসপিটালের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়ার অভিযোগ করে গৃহবধূ পাপিয়ার বাবা মোঃ আবুল খায়ের হসপিটালের পরিচালক ডাঃ ডিউক চৌধুরী, হসপিটালের চেয়ারম্যান ডাঃ এঞ্জেলা চৌধুরী, ডাঃ অরুণেশ্বর পাল ও ডাঃ তনুশ্রী রায়কে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করলে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জনকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতের নির্দেশে জেলার সিভিল সার্জন গত বছর ৫ ডিসেম্বর ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাসুম ইফতেখারকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডা. ফৌজিয়া আখতার, ডা. মো. মাহমুদুল হাছান ও সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মো. জাহিদুল হক। কমিটি ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত শেষ করেন এবং ১২ জানুয়ারি ২০২০ ইং তারিখে সিভিল সার্জনের গঠিত তদন্ত কমিটি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়।
আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু ভুল চিকিৎসা নয়, হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবৈধভাবে বিভিন্ন ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। হাসপাতালটিতে সার্বক্ষণিক বিশেষষ্ণ চিকিৎসক এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা না থাকার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রোগী পাপিয়ার আলট্রাসনোগ্রামে সঠিক রিপোর্ট না আসার ফলে রোগ নির্ণয় সঠিকভাবে হয়নি এবং পরে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এরূপ জটিল ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ সনোলজিস্ট দ্বারা দ্বিতীয়বার আলট্রাসনোগ্রাম করার পর চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত ছিল বলে একমত পোষণ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ২ মার্চ পাপিয়াকে খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে আনা হয়। তখন তাকে ভর্তি করা হয়নি। ডিঅ্যান্ডসি অপারেশন নোটে ডাক্তার এমএ মজিদের নাম দেখা যায়, কিন্তু তার কোনো ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়নি। শুধু ডাক্তার অরুণেশ্বর পালের ব্যবস্থাপত্র দেখা যায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাসপাতালের চিকিৎসকরা এমবিবিএস ডিগ্রির পর যেসব ডিগ্রি ব্যবহার করছেন, তা বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অনুসারে বৈধ নয়। গৃহবধূ পাপিয়ার বাবা আবুল খায়েরের দায়েরকৃত মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, দেড় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পাপিয়ার তলপেটে প্রচন্ড- ব্যথা হলে খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পাপিয়ার ডিএনসি করার পরামর্শ দেন এবং ৫ হাজার ৮০০ টাকা ফি নেন। পাপিয়া ও তার স্বজনদের আপত্তির পরও ডিএনসি করেন তারা। কিন্তু ডিএনসি করার সময় তার জরায়ুর রক্তনালি কেটে ফেলা হয়। বাসায় নেওয়ার পর পরই প্রচন্ড- ব্যথা ও রক্তপাত শুরু হয়। পুনরায় ওই হাসপাতালে নিয়ে এলে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির পর পাপিয়ার জটিল অপারেশন করা হয়। ১২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। জীবন বাঁচলেও স্বাভাবিক চলাফেরা করার সক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি।
এদিকে, খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হসপিটালের ভুল চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগে স্কুল শিক্ষিকা নওশীন আহমেদ দিয়ার মৃত্যুর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাসপাতালটির পরিচালক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী, চিকিৎসক অরুণেশ্বর পাল অভি ও মো. শাহাদাত হোসেন রাসেলকে গত ১ জানুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জুন ভুল চিকিৎসায় পারভীন বেগম (২৮) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয় ওই হাসপাতালে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply