বিশ্বব্যাপী পুলিশিং এর ধরন বদলেছে, বদলেছে চিরচেনা কর্মপদ্ধতি। এজন্যই বর্তমান সরকারের সুহৃদয় মাননীয় প্রধামমন্ত্রী পুলিশিং কার্যক্রমকে উন্নয়ন কার্যক্রম হিসাবেই অভিহিত করে থাকেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসাবে টেকসই আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। সরকারের অপ্রতিরোধ্য এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পুলিশে জনগনের অর্থের অর্থায়ন মানেই দেশমাতৃকার টেকসই উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগ।
উপনিবেশিক লাঠিয়াল বাহিনীর পরিবর্তে পেশাদারিত্ব সম্পন্ন মানবিক পুলিশ, জাতির পিতার স্বপ্নের জনগনের পুলিশ-ই একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়নমুখী পুলিশিং। অনেকেই আবার এটিকে বলেন ডেমোক্রেটিক পুলিশিং।
প্যান্ডেমিককালিন পুলিশিং কার্যক্রম নিয়ে পৃথিবীব্যাপী বেশ কিছু গবেষণা বিদ্যমান। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাতেও আইনের প্রয়োগ ও পুলিশিং বিষয়ক পদ আছে। বর্তমানে কর্মরত আছেন কার্ল রবার্টস। তিনি পুলিশের জন্য ১৯ মার্চ ২০২০ এ একটি বিশ্লেষণ ‘ পুলিশিং দ্য পান্ডেমিকঃ ম্যানেজিং দ্য পুলিশ রেসপন্স টু কোভিট-১৯ করোনাভাইরাস’ শিরোনামে তুলে ধরেছেন। তিনি জাতীয় কর্মপরিকল্পনার সাথে পুলিশকে সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। পুলিশের বহুমাত্রিক কাজসমুহের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ‘ আ নিউ প্যারাডাইম ইন পুলিশিং’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৬ সালে ‘প্যান্ডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সিম্পোজিয়ামে’ পুলিশের ব্যাপক ভুমিকা, কার্যক্রম নিয়ে ‘ পুলিশ প্ল্যানিং ফর আন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিকঃ কেইস স্টাডিস এন্ড রিকমেন্ডেশনস ফর ফিল্ড’ শিরোনামে গবেষণায় পুলিশের বহুমাত্রিক কাজের (আপাত চোখে মনে হতে পারে, এটি পুলিশের কাজ নয়-যেমন খাদ্য সাহায্য বিতরন) প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এই গবেষণার মুখবন্ধে কেন পুলিশ, এই প্রশ্নটির চমৎকার উত্তর দিয়েছেন, বলেছেন, যখন প্যান্ডেমিক আসে, তখন মানুষ চিকিৎসক আর পুলিশকেই খোঁজ করেন।
বাংলাদেশের বাস্তবতা বিশ্ববাস্তবতা থেকে ভিন্ন নয়। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতে করোনায় যখন কোন নাগরিকের মৃত্যু হয়, তার দাফনের জন্য কাউকে পাওয়া না গেলেও, পাওয়া যায় বাংলাদেশ পুলিশকে। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের পাশে সরকারি ত্রান সহায়তার বাহিরে থেকে স্ব স্ব উদ্যোগে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সম্মানিত নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।উপনিবেশিক ইতিহাসের দায় শুধরানোর জন্যও পুলিশের মানবিক কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো একবিংশ শতাব্দীর দাবি, স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার সম্পূরক।
মানুষ কালের পরিক্রমায় পুলিশের হাতে শুধু লাঠিই দেখেছে, ভালোবাসা দেখেনি। দু’শো বছরের অধিককাল লাঠি দেখতে দেখতে আমাদের এই ভূ-খন্ডের মানবমনে পুলিশের হাতে লাঠি মানায়- এই ‘বোধ’ মনলোকের কলোনিতে স্থায়ী বাসা বেধেছে। সেজন্যই এখন প্রশ্ন উঠে, করোনায় পুলিশ খাদ্য সাহায্য দিবে কেন?
‘স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের পুলিশ’-এটি জাতির পিতার স্বপ্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘উপনিবেশিক বলয় থেকে বেরিয়ে আসা উন্নয়নমুখী পুলিশিং’ এর জন্য মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পুলিশের থাকতে হবে মানুষের প্রতি ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে পুলিশ দেশের দূর্যোগময় মুহুর্তে শুধুই সাড়াই দিবে না,বরং সামর্থ্যের সবটুকু উজার করে দিবে দেশের মানুষের কল্যাণে। প্রবাদে আছে,”শাসন করা তারেই সাজে, সোহাগ করে যে”। আমাদের দেশের মানুষ পুলিশকে যতটা শাসন করতে দেখতে অভ্যস্ত, সোহাগ করতে দেখতে ততটা নয়।
কিন্তু শাসন ও সোহাগ করার সক্ষমতা পুলিশের হাতে দেওয়াই যেমন প্যান্ডেমিককালিন পুলিশের যেমন বৈশ্বিক বাস্তবতা, তেমনি জাতির পিতার স্বপ্নের “জনগনের পুলিশ” হওয়া এবং টেকসই উন্নয়ন রূপকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত। সর্বদাই জনগণের পাশে, বাংলাদেশ পুলিশ।
সৌজন্যে- মীর সোহেল রানা।এআইজি মিডিয়া, পুলিশ সদর দপ্তর সমুহ। বাংলাদেশ পুলিশ। সূত্রঃ বাংলাদেশ পুলিশ মিডিয়া, পিএইচকিউ[01 এপ্রিল 2020]
Leave a Reply