স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি ১২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে লাশ পড়ে আছে। পঁচনের শঙ্কায় তাড়াহুড়া স্বজনদের। অপেক্ষা স্ত্রীর জন্য। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা স্ত্রীকে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ফোন দেয়া হয় ইউএনওকে। এতো সকালে ফোন দেয়ায় রেগে যান ইউএনও। যদিও আগের রাতে ফোন করলে তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান।
শেষ পর্যন্ত ভারতের আগরতলা থেকে ফিরে কোয়ারেন্টিনে থাকা স্ত্রী ছাড়া পেলেও স্বামীকে শেষবারের মতো দেখতে পারেননি। স্ত্রীর জন্য প্রায় ১৬ ঘন্টা অপেক্ষা করে বাধ্য হয়েই স্বামীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় আক্ষেপ রেখেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে ফিরে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক হোমকোয়ারেন্টিনে ছিলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার থোল্লা গ্রাামের বাসনা রানী পাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায়ই শুনেছেন স্বামীর শারিরিক অবস্থার অবনতির কথা। তবে নিয়মের বেড়াজালে আটকে গিয়েছিলেন তিনি। কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার আগেই সোমবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন বাসনা রানী পালের স্বামী রাধেশ্যাম পাল। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে তাঁর শেষকৃত্যের কাজ এলাকাতেই করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের আগরতলায় ছেলের বাড়ি থেকে ১২ দিন আগে দেশে ফিরেন বাসনা রানী পাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ফেরার পর নিয়ম অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠান সংশ্লিষ্টরা। গত দুইদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন বাসনার স্ত্রী। কিন্তু কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিন শেষ না হওয়া ও নমুনা সংগ্রহের ফলাফল না আসায় তিনি বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে স্বামী মারা গেলে মৃত্যুর খবর জানিয়ে ওনাকে বাড়িতে পাঠানোর জন্য বিজয়নগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগারকে অনুরোধ করা হয়।
নিহতের স্বজন কালের কন্ঠের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ পাল বাবু মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ইউএনও মেহের নিগারকে অনুরোধ করেন। সে সময় ইউএনও সকালেই বাসনা রানীকে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানান।
অপরদিকে প্রয়াতের আরেক স্বজন মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ইউএনওকে অনুরোধ জানিয়ে ফোন করেন বাসনা রানীকে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য। এতো সকালে ফোন দেয়ার বিষয়টি ইউএনও ভালোভাবে নিতে পারেননি। এতো সকালে কেন ফোন করলেন সেটা বলে তিনি রাগ দেখান।
পরে অবশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহকে ফোন করা হলে তিনি ওই নারীকে দ্রুত পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছেন বলে জানান।
প্রয়াতের ওই স্বজন বলেন, ‘লাশ বেশি সময় রাখা যাচ্ছিল না বলে মানবিক কারণে ওনাকে এতো সকালে ফোন করেছিলাম। হয়তো তিনি সেহরি করে ঘুমিয়ে ছিলেন বলে এতো সকালে ফোন দেয়ায় বিরক্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নাই।’ তিনি জানান, দুপুরের পর প্রয়াতের স্ত্রী বাড়িতে পৌঁছার আগেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়ে যায়।
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার বলেন, ‘রাত তিনটায়ও তো আমাকে ফোন করে। আমি রাগ হই না। আর মানবিক কারণেই ওই নারীকে যেতে দেয়া হয়েছে। হয়তো প্রক্রিয়া করে যেতে একটু দেরি হয়েছে। তবে যতটুকু জানি ভোরেই ওই নারীর স্বামীর সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। ওনি খুব সকালে গেলেও তো কোনো লাভ হতো না।’
অপরদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মেহের নিগার বিজয়নগরে যোগদান করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে দূর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ব্যানারে আয়োজককারী প্রতিষ্ঠানের নাম না লেখা নিয়ে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সাথে দূর্ব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সংবাদ প্রকাশের জেরে সংবাদকর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ ও পরিকল্পিতভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে। ইউএনও মেহের নিগারের বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের কাছে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের এক মৎস্য সমিতির সভাপতির কাছ থেকে বিল লিজ নেওয়ার রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়েছেন। যদিও ঐ সমিতির অবস্থান বিলের খুব কাছে। চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে উপজেলার এক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির ছেলেকে পুলিশ ইয়াবা ট্যাবলেট সহ আটক করে ইউএনও মেহের নিগার এর ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে নাম মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন ইউএনও মেহের নিগার। যে ঘটনা নিয়ে জাতীয় দৈনিক “ডেইলি স্টার” পত্রিকায় প্রতিবেদনও ছাঁপা হয়েছিল।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply