রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে মুসলিম মিল্লাতের মাঝে চলছে পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারকের প্রথম দশক।বিশ্বের সকল মুসলমান পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হওয়ার এক মহা সুবর্ণময় সুযোগ।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। [সুরা বাকারা : ১৮৫]।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রমজান সে মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা আদ্যোপান্ত হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন এ সময় অবশ্যই রোজা রাখে। [সুরা বাকারা : ১৮৫]।
হাদিসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দেব। [সহিহ বুখারি]।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজান মাসে যে একটি নফল আদায় করলো সে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করলো(হাদিস শরিফ)।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহতাআলা তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। [সহিহ বুখারি]
রমজান শব্দের অর্থ দহন,প্রজ্জ্বলন,জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা।মানুষের যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি, অহংকার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে বান্দাহ আল্লাহর একনিষ্ঠ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পবিত্র মাহে রমজানের ভূমিকা ব্যাপক।রমজানের প্রস্তুতি কল্পেরাসুল (সাঃ)রজব এবং শাবান মাস থেকে ই আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতেন যে, হা আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রজব ও শা’বান মাসের বরকত দান করুন, এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন।
হজরত সালমান ফারসি (রাঃ) হতে বর্নীত তিনি বলেন,রাসুল(সাঃ) শা’বান মাসের শেষ তারিখে সাহাবাদের বলতেন, হে লোক সকল তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে এক মোবারকময় মাস।যে মাসে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা ও মুল্যবান ও শ্রেষ্ট। যে ব্যাক্তি এ মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে একটি নফল এবাদত করবে সে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায়ের সওয়াবের অধিকারী হবে।আর যে ব্যাক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সওয়াবের অধিকারী হবে।
এ মাস ধৈর্যের মাস।আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।এ মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।যে ব্যাক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ও ঐ রোজাদার ব্যাক্তির সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে অথচ রোজাদার ব্যাক্তির সওয়াবে কম হবে না।উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!আমাদের তো এমন সামর্থ নেই যা দ্বারা রোজাদার ব্যাক্তিকে আমরা ইফতার করাতে পারব।রাসুল (সাঃ) উত্তরে বললেন এ সওয়াব ঐ ব্যাক্তি ই লাভ করবে যে রোজাদারকে এক চুমুক দুধ অথবা একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা ইফতার করাবে।
আর যে ব্যাক্তি কোন রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে ইফতার করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করাবে যার পর জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত পুনরায় সে আর পিপাসিত হবে না।
এই মাস এমন মাস যার প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের, আর শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির।এ মাসে যে তার অধীনস্থদের কার্যভার কমিয়ে দিবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (মিশকাত শরিফ)।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র মাহে রমজানের সীমাহীন কল্যান ও বরকত আমাদের সকলকে দান করুন।
লেখক- মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান,যুগ্ম সম্পাদক, ইসলামী ঐক্যজোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা।
Leave a Reply