সংবাদ শিরোনাম
বিজয়নগরে মোবাইল চুরিরের অপবাদে শিশুকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার- ৩ 

বিজয়নগরে মোবাইল চুরিরের অপবাদে শিশুকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার- ৩ 

স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে একটি মোবাইল চুরির অপবাদে ইয়াকুব মিয়া (১৩) নামে এক শিশুকে নির্যাতনের ঘটনায় মান্না মিয়া (২৫), মান্না ওরফে শাহী (২২) ও বাবুল মিয়া (৫৫) নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ।
গতকাল রবিবার (১৬ মে) রাতে উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করেন পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার শিশু ইয়াকুব মিরাশানী কবলাছড়া মহল্লার মৃত মজনু ভুইয়ার ছেলে। ইয়াকুবের বয়স যখন এক বছর তখনই তার বাবা মজনু ভুইয়া মারা যান। এর পর থেকে শিশু ইয়াকুব তার মার সাথে পশ্চিম মেরাশানীতে তার নানার বাড়িতে বসবাস করছেন। তার আরেকটি ছোট বোনও রয়েছে। শিশু ইয়াকুব ও তার ছোট বোনের ভরণপোষণের জন্য তার মা রেজিয়া বেগম দুই বছর ধরে প্রবাসে রয়েছেন।
জানা যায়, গত ১৫ মে শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরাশানী মোড় থেকে আব্দুল আলিমের ছেলে রুবেল মিয়া একই এলাকার ইয়াকুব (১৩) নামে এক পিতৃহীন শিশুকে ধরে নিয়ে রুবেল তার ভগ্নিপতির বাড়িতে বেঁধে রাতভর অমানুষিক নির্যাতন চালান। পরে গতকাল রবিবার সকাল ৭ টায় স্থানীয় এক রিক্সা চালক শিশুটিকে নির্যাতন করতে দেখে শিশুটির নানি আরুজা খাতুন ও নানা সোলেমান মিয়ার বাড়িতে গিয়ে অবগত করলে শিশু ইয়াকুবের নানা নানি ঘটনাস্থলে এসে ইয়াকুবের নাকে মুখে রক্ত ও সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে রুবেল গংদের কাছে নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে রুবেল ও রুবেলের ভগ্নিপতিসহ তার সহযোগীরা জানান, ইয়াকুব তাদের একটি মোবাইল চুরি করেছে সন্দেহে শিশুটিকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করছে। কিন্তু শিশু ইয়াকুব কোন মোবাইল চুরি করেনি বলে অস্বীকার করছে এ কারণে তাকে মারধোর করা হচ্ছে। এখন তাকে নিতে হলে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে নিতে হবে বলে শিশুটির নানা নানিকে হুমকি ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন রুবেল ও স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আব্দুল মজিদের ছেলে এনামুল বাবু গংরা। পরে বিকেল ৩ টায় শিশুটির খালাম্মা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাকুতি মিনতি করে তাদেরকে জানান, আমার বোনের ছেলে যদি মোবাইল চুরি করে তাকে তাহলে আপনারা প্রমাণ দেন। প্রমাণ দিতে পারলে আমরা মোবাইলের জরিমানা দেব। অন্যথায় আমরা পুলিশের কাছে মামলা করবো। এসময় রুবেল গংরা গুরুতর আহত অবস্থায় শিশু ইয়াকুবকে তার খালাম্মার কাছে তুলে দেন। পরে সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। বর্তমানে শিশুটি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, রবিবার বিকেলে মোবাইল চুরির অপবাদে শিশু ইয়াকুবকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। শিশুটির নির্যাতনের ভিডিও দেখে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকে। যেখানে নির্যাতনকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।
অপরদিকে, শিশুটিকে নির্যাতনের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে উপজেলা প্রমাসন, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের নির্দেশে বিজয়নগর থানা পুলিশ রবিবার সন্ধ্যার পর নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামেন। পরে রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ চারজনকে আটক করেন। আটককৃতরা হলেন- আব্দুল মজিদ চৌকিদার (৫৫) পিতা- মৃত মিজান মিয়া, মান্না মিয়া (২৫) পিতা- মৃত মিন্টু মিয়া, মান্না ওরফে শাহী (২২) পিতা- আনার মিয়া, বাবুল মিয়া (৫৫) পিতা- মৃত ধনু মিয়া সর্ব সাং- মেরাশানী। আজ সোমবার সকালে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে তিনজনকে কারাগারে পাঠান পুলিশ ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকায় গ্রাম পুলিশ আব্দুল মজিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ইয়াকুবের নানি আরুজা খাতুন বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা হলেন- রানা মিয়া (২২) পিতা – বাবুল মিয়া, কাউছার মিয়া (২২) পিতা -মৃত আব্দুল আহাদ, এনামুল বাবু (২২) পিতা – মজিদ চৌকিদার, রুবেল মিয়া (২৫) পিতা- আব্দুল আলিম, রুবেলের বোন জামাই নাম অজ্ঞাত (৪০), মান্না মিয়া (২৫) পিতা- মৃত মিন্টু মিয়া, মান্না ওরফে শাহী (২২) পিতা- আনার মিয়া, সর্ব সাং- পশ্চিম মেরাশানী থানা – বিজয়নগর ও জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তাদের মধ্যে -মান্না মিয়া , মান্না ওরফে শাহী ও বাবুল মিয়াকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, একই ঘটনায় একই ইউনিয়নের খিরাতলা গ্রামের মৃত মাহফুজ মিয়ার ছেলে মুস্তাফিজুর রহমানকেও আটক করে হাত পা বেঁধে মারধর করেন রুবেল গংরা।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় শিশুটির নানি বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি মামলা দায়ের করেছেন। এদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকীদের গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com