সংবাদ শিরোনাম
রেল যাতায়াত, যানজট ও লোডশেডিং সমস্যা সমাধানের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাগরিক ফোরামের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কক্সবাজারে লেফটেন্যান্ট তানজিম হত্যার ঘটনায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ৬ জন আটক গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের খসড়া তালিকায় ৭০৮ জন সিডস ফর দ্য ফিউচারের আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিতে চীনে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা সরাইলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।। আহত-৫০ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু রাঙামাটিতে পর্যটন ভ্রমণে তিন দিনের নিষেধাজ্ঞা ইবির সাবেক শিক্ষক ড. নকীব নসরুল্লাহ হলেন ইবির নতুন উপাচার্য নবীনগরে গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূর আত্মহত্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভুয়া সাংবাদিক ও অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে কমিটি গঠন।। আহ্বায়ক আরজু ও সদস্য সচিব আল আমিন শাহীন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডব- ৫৬ মামলায় ৪৮৭ জন গ্রেপ্তার।। এখনো অধরা হেফাজতের দুই শীর্ষ  নেতা।। এমপির আল্টিমেটাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডব- ৫৬ মামলায় ৪৮৭ জন গ্রেপ্তার।। এখনো অধরা হেফাজতের দুই শীর্ষ  নেতা।। এমপির আল্টিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত ৫৬টি মামলায় এ পর্যন্ত ৪৮৭ জন গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো অধরা রয়ে গেছেন  হেফাজেতের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর ও জেলা হেফাজতের সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মুফতি মোবারক উল্লাহ।
মাওলানা সাজিদুর রহমান গত ২৬ মার্চের  ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকার সহিংস ঘটনায় রজুকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তান্ডবের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত ৫৬টি মামলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়।
এ সকল মামলায় ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩০/৩৫ হাজার লোককে আসামী করা হয়। এ সব মামলায়  পুলিশ এ পর্যন্ত মোট  ৪৮৭জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশের দাবি গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই হেফাজতের নেতা-কমর্ী ও সমর্থক। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জামাত ও বিএনপির নেতা-কমর্ীও রয়েছেন। তবে হেফাজতের শীর্ষ এই দুই নেতা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মোবারক উল্লাহসহ হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বাদি হয়ে জমা দেয়া মামলাটি আগামী ২৪ মে’র মধ্যে নথিভুক্ত করতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।
গত শনিবার (২২ মে) রাতে র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাসে এই সময় বেঁধে দেন। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে ইংরেজিতে স্ট্যাটাসটি দেন। এতে তিনি লিখেন, ‘আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলার আবেদনটি নথিভুক্ত করতে চাই। এটি নিয়ে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। আগামী ২৪ মে’র মধ্যে এটি নথিভুক্ত না করলে আমি আদালতে মামলাটি দায়ের করব। এটি আমার আলটিমেটাম।’
এর আগে গত ১মে হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোবারক উল্লাহসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১ থেকে দেড়শ জনকে আসামি করে মোকতাদির চৌধুরী এমপি বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তান্ডবের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৭ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এদের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগী মাওলানা আব্দুর রহিম কাসেমীও রয়েছেন।
মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী তান্ডবের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে গত ২৩ এপ্রিল হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন মর্মে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, গত    ২৬ থেকে ২৮ মার্চের ঘটনাবলীর সাথে তিনি জড়িত ছিলেন না। হেফাজতের এ ধরণের সহিংস ঘটনা ইসলাম সম্মত নয়। লিখিত বক্তব্যে তিনি তান্ডবের ঘটনায় জড়িতদের বিচারও দাবি করেছিলেন। গত ৪ মে মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী গ্রেপ্তার হন। গত ৯ মে মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী তান্ডবের ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জবানবন্দীতে তিনি গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চের হেফাজতের সহিংসতার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে বলেন, গত ২৬ মার্চ তিনি শহরের কাউতলী মোড় থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সহিংসতার নেতৃত্ব দেন।
জবানবন্দীতে তিনি তান্ডবের ঘটনায়  নেতৃত্ব ও নির্দেশ দেয়া ১২ জন হেফাজত নেতার নামও বলেছেন। তবে কাসেমীর জবানবন্দীর বিষয়ে জেলার দায়িত্বশীল কোন পুলিশ কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি।
এদিকে তান্ডবের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের ইসলামের দুই শীর্ষ নেতা মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মোবারক উল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন  জেলার  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি জহিরুল ইসলাম স্বপন বলেন, হেফাজতের দুই শীর্ষ নেতার উস্কানিমূলক বক্তব্যে উদ্দীপিত হয়েই গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ হেফাজতের কমর্ী সমর্থকরা জেলা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। তিনি হেফাজতের এই দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
তান্ডবের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন খঁা সঙ্গীতাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মনজুরুল আলম বলেন, তান্ডবের সময় উল্লেখিত হেফাজতের দুই শীর্ষ নেতা স্ব-শরীরে উপস্থিত না থাকলেও তারা মিছিলে বক্তৃতা দিয়েছেন। তারা দায় এড়াতে পারেন না।
এ ব্যাপারে জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি কবিও গবেষক জয়দুল হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে হেফাজতের তান্ডবের ঘটনার যদি বিচার হতো তাহলে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ঘটতো না। তিনি এই হেফাজতের দুইনেতার গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া  জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম বলেন, তান্ডবের ঘটনার দায় অবশ্যই হেফাজত নেতাদেরকে নিতে হবে।  তিনি জেলার দুই শীর্ষ হেফাজত নেতার গ্রেপ্তার দাবি জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ আহমেদ বলেন, মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতী মোবারক উল্লাহকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি তিনি তান্ডবের ঘটনায় জড়িত জড়িত সকলকে দ্রুত আ্ইনের আওতায় আনারও দাবি জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার  জেলার হেফাজতের শীর্ষ দুনেতার গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন,  সর্বশেষ গত ১৭ মে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের  সভা থেকেও তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য সর্ব সম্মতভাবে পুনরায় দাবি জানানো হয়েছে ।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে আল্টিমেটামের বিষয়টি স্বীকার করে  সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি আল্টিমেটাম দিয়েছি। যদি আগামী ২৪ মে তারিখের মধ্যে আমার মামলা নথিভুক্ত না করা হয় তাহলে  আমি আদালতে মামলা করব।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ রইছ উদ্দিন বলেন, আমরা ঘটনার সাথ জড়িত হেফাজতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি। এমনকি একাধিক আসামিকে বিভিন্ন জেলা থেকেও ধরে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে সে যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে ।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, উনার (এমপি) এজাহারটি আমরা মতামতের জন্য সিআইডিতে পাঠিয়েছি। উনি যে তারিখে এজাহার দিয়েছেন, তার পরদিনই আমরা পাঠিয়েছি। একটি মতামত এসেছে। আবার কয়েকটি কোয়েরি দিয়ে পাঠিয়েছে। সেগুলোও আমরা পাঠিয়েছি। এগুলো দেখে আবার মতামত দেবে। আমার মনে হয় শিগগিরই মতামত দিয়ে দেবে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com