ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের কর্মসূচী চলাকালে শহরজুড়ে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত ৫৬টি মামলায় এ পর্যন্ত ৫০৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের দাবি গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই হেফাজতের নেতাকর্মীরা ও সমর্থক। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপি-জামাতের নেতা-কর্মী রয়েছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের মধ্যমসারির নেতাকর্মীসহ ৫০৬ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও এখনো অধরা রয়ে গেছেন জেলা হেফাজতের দুই শীর্ষ নেতা মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতী মোবারক উল্লাহ।
মাওলানা সাজিদুর রহমান হেফাজতের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হেফাজতের সভাপতি এবং মুফতি মোবারক উল্লাহ জেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক। মাওলানা সাজিদুর রহমান গত ২৬ মার্চের ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকার সহিংস ঘটনায় রজুকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। হেফাজতের শীর্ষ এই দুই নেতা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রহস্যের ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। কেনইবা পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছেন না। তাহলে কি পুলিশ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টকারী ও সাধারন জনগনের বাড়িঘর ধ্বংসকারী ও চলমান শান্তি নষ্টকারী ও সমাজের বিনষ্টকারী হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সাথে গোপনীয় কোন আতাত হয়েছে এমন অঢেল অভিযোগ করছেন শান্তিপ্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৭ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। এদের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগী মাওলানা আব্দুর রহিম কাসেমীও রয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ মে) দুপুরে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়।
এ সকল মামলায় ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ হাজার লোককে আসামী করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৫০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইওয়ান) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, তান্ডবের ঘটনার সময়ের প্রাপ্ত স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়।
এসময় হামলাকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পৌরসভা কার্যালয়, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, মাতৃ সদন, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের বাসভবন, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরালসহ তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, একই চত্বরে থাকা শহর সমাজসেবা প্রকল্পের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের অফিস, পৌর মেয়রের বাসভবন, সার্কিট হাউজ, হাইওয়ে থানা ভবন, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্যাম্পাস, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ব্যক্তিগত চেম্বার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা, সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ সরকারি, বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরিতে পরিনত করে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply