স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে নৌ-দূর্ঘটনায় মা ও মেয়েসহ একই পরিবারের ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার পরিজন, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি সহ পুরো এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম।
নিহতরা হলেন – রৌশনারা বেগম ওরফে কমলা (৬৫), ফরিদা বেগম (৪২), মুন্নি আক্তার (১০) ও রিনা বেগম ওরফে মনজু (৫৫)। এদের মধ্যে রৌশনারা ও ফরিদা মা- মেয়ে, আবার নিহত ফরিদা ও মুন্নি আক্তার মা -মেয়ে এবং অপর নিহত রিনা বেগম ওরফে মনজু ফরিদার আপন চাচি।
নিহত ফরিদার স্বামী জজ মিয়া এ প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, নৌকার মাঝির অদক্ষতা ও নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে আজকে আমি স্ত্রী, সন্তান, শ্বাশুড়ি ও চাচি শ্বাশুড়িকে চিরতরে হারিয়েছি। আমি চাইনা ভবিষ্যতে আর কারো স্বজনকে হারাতে। শোকে বিহ্বল কন্ঠে জজ মিয়া আরো জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিজে গিয়ে স্ত্রী সন্তান ও শ্বাশুড়িকে নৌকায় উঠিয়ে দিয়ে আসি। তিনি বলেন, শনিবার সকালে তার স্ত্রী ফরিদা বেগম কোমরে ব্যথার ডাক্তার দেখানোর কথা ছিলো। সেজন্য আগের দিনই জেলা শহরের পৈরতলা এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো।
জজ মিয়া আরো জানান, তার চাচি শ্বাশুড়ি মনজু বেগমের অসুস্থ মাকে দেখতে আমার শ্বাশুড়িকে নিয়ে যাচ্ছিলেন মনজু বেগম। মনজু বেগমের বাবার বাড়ি জেলা শহরের উত্তর পৈরতলা গ্রামে। সে জন্য আমার স্ত্রীও আমার মেয়েকে নিয়ে চাচির সাথে আগেরদিনই চলে যেতে রওয়ানা হয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে স্ত্রী সন্তানকে হারাবো তা আমি ভাবতেও পারছিনা।
নিহত রৌশনারা বেগমের বড় ছেলে সেলিম মিয়ার সাথে এ প্রতিবেদকের কথা বলার সময় বুক ছাপড়িয়ে জানান, আমার মা চাচির সাথে চাচির অসুস্থ মাকে দেখতে জেলা শহরের পৈরতলা যাচ্ছিলেন। সাথে ডাক্তার দেখাতে আমার বোন ও ভাগ্নিও গিয়েছিলেন। কিন্তু এ দূর্ঘটনায় মা-চাচি ও বোন -ভাগ্নিকে চিরতরে হারিয়েছি। তিনি দূর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে অপরাধীদের সনাক্ত করে তাদের শাস্তি দাবী করেন।
এদিকে, রিনা বেগম ওরফে মনজু বেগমের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় শোকের মাতম। পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে আছে পরিবেশ। এসময় কথা হয় নিহত মনজু বেগমের মেয়ে মৌসুমি আক্তার এর সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমার মা অসুস্থ নানীকে দেখতে আমার চাচিকে নিয়ে পৈরতলা যাওয়ার জন্য চম্পকনগর নৌকাঘাট থেকে সোনা মিয়া মাঝির নৌকায় উঠেন। নৌকাটি বিকেল ৪ টা ৪৫ মিনিটে চম্পকনগর নৌকাঘাট থেকে ছেড়ে যায়। এর ঘন্টাখানেক পরেই আমরা জানতে পারি নৌকা ডুবির ঘটনাটি। কিন্তু এভাবে মা, চাচি ও বোন ভাগ্নিদের একসাথে হারাবো তা ভাবতেই পারছিনা। তিনি এ দূর্ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবী করেন।
এ ব্যাপারে চম্পকনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক হামদু মিয়া শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে এ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনাটি শুনে আমরা খুব ব্যতীত হয়েছি। আল্লাহ এ নৌদুর্ঘটনায় নিহতদের বেহেশত নসিব করুক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা এ শোক সহ্য করতে পারেন সে শক্তি যেন দান করেন। তিনি এ দূর্ঘটনার জন্য যারাই দায়ী হবেন তাদের কঠোর শাস্তির দাবী জানান।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৬ টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার শেখ হাসিনা সড়কের লইছকা বিল সংলগ্ন নদীতে বালুবাহী ট্রলারের সাথে যাত্রীবাহী নৌকার সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী নৌকাটি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২১ টি মরদেহ ও আজ শনিবার সকাল পৌনে ১০ টায় এক শিশুসহ এ পর্যন্ত ২২ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনায় আরো ২০/২৫ জন যাত্রী আহত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply