স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা রাতদিন মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করলেও গতকাল সোমবার (০৬ ডিসেম্বর) দুইজন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মনোনয়নপত্র করা প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ আক্রাম) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হৃদয় আহমেদ জালাল। বর্তমানে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী এ ইউনিয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন – আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান রতন (নৌকা প্রতীক), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেম্বার সামসুল আলম ভুইয়া (আনারস প্রতীক) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসাদের মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহমান খান ওমর (মশাল প্রতীক)।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তাজুল ইসলামের গণসংযোগ।
তবে পত্তন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তাজু বনাম রতনের মধ্যে হবে দ্বিমুখী লড়াই। একজন উন্নয়নকে সামনে রেখে ভোট প্রার্থনা করছেন ও আরেকজন এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্টার জন্য জীবনের শেষ বারের মতো ভোট প্রার্থনা করছেন।
পত্তন ইউনিয়নটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি উজান অপরটি ভাটি অঞ্চল। উজান এলাকার গ্রামগুলো হলো- টুকচানপুর, লক্ষীপুর, টানমনিপুর, পত্তন, জগন্নাথপুর, নোয়াগাঁও, কেশবপুর, ফুলবাড়িয়া ও আদমপুর। অপরদিকে ভাটি এলাকার গ্রামগুলো হলো- বড়পুকুরপাড়, উত্তর লক্ষীমোড়া, দক্ষিণ লক্ষীমোড়া, গোয়ালখলা, মাশাউড়া, চাউড়াখলা, আতকাপাড়া, কল্যাণপুর, মনিপুর, শাহপুর, নহারমোড়া, বঙ্গেরখলা ও পাড়েঙ্গাবাড়ি।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তাজুল ইসলাম ও ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ দুধ মিয়ার গণসংযোগ।
উজান ও ভাটি মিলিয়ে ১৯ হাজার ৪শত ৩১ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে উজান এলাকার ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৪শত ৩৬ জন এবং ভাটি এলাকার ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৯শত ৯৫ জন। ভোটের হিসেবে ভাটি এলাকার চেয়ে উজান এলাকায় ১৪৪১ ভোট বেশি।
গণসংযোগকালে একজন ভোটারের সাথে কৌশল বিনিময় করছেন সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
ভাটি এলাকার মধ্যে একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তাজুল ইসলাম দিনরাত ভাটি এলাকার ১৩ টি গ্রামে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভা করে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি এলাকার মানুষের কাছে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শেষবারের মতো ভোট, দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে যাচ্ছেন। ভাটি এলাকার সাধারন ভোটাররাও তাকে ভোট দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রচারনায় কৌশল বিনিময় করছেন কামরুজ্জামান রতন।
অপরদিকে, বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামরুজ্জামান রতন আওয়ামীলীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডকে জনগনের সামনে তুলে ধরে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পুনরায় তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে পুরো ইউনিয়ন চুষে বেড়াচ্ছেন। কামরুজ্জামান রতন টানা দুই দুই বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তৃতীয় বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এবারও যদি তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তাহলে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে হেট্রিক করবেন।
তবে উজান এলাকায় ১০৪৩৬ জন ভোটার থাকলেও প্রার্থী রয়েছেন তিন জন। কামরুজামান রতন উজান এলাকার লক্ষীপুরের বাসিন্দা, সামসুল আলম ভুইয়া একই এলাকার আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আব্দুর রহমান খান ওমর একই এলাকার নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।
অপরদিকে, ভাটি এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৮৯৯৫ জন থাকলেও দুই দুই বারের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এ এলাকার একমাত্র প্রার্থী। সে হিসেবে ভোটের পাল্লা তারই বেশী ভারী।
বিশিষ্টজনদের অভিমত – ভাটি এলাকার ১৩ টি গ্রামের জনগন যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান তাহলে তাজুল ইসলামের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত। ভোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাজুল ইসলামকে পরাজিত করা বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান রতনের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন কামরুজ্জামান রতন।
এদিকে, উজান এলাকার আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল আলম ভুইয়ারও রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। আদমপুর গ্রামের বোয়াইল্লা গোষ্ঠীর অভিভাবক সামসুল আলম ভুইয়া। বোয়াইল্লা গোষ্ঠী হচ্ছে পত্তন ইউনিয়নের উজান এলাকার মধ্যে একটি বড় গোষ্ঠী। এলাকায় রয়েছে তাদের শক্ত প্রভাব প্রতিপত্তি। সেই হিসেবে উজান এলাকার ১০৪৩৬ ভোটের একটি বিশাল ভোট চলে যেতে পারে সামসুল আলম ভুইয়ার ভোট বাক্সে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ ও ২০১৪ ইং সন থেকে ২০১৬ ইং তারিখ পর্যন্ত দুই দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে পত্তন ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করেন তাজুল ইসলাম। তাঁর বাবা আব্দুল বারী ছিলেন এ ইউনিয়নের ৪৫ বছরের চেয়ারম্যান।
একটি উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান রতন।
জাসাদ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রহমান খান ওমর এ প্রতিবেদককে জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন। তিনি বলেন, মানুষ এখন পরিবর্তন চাই। পরিবর্তনের জন্য ভোটারা তৃতীয় ব্যক্তিকেই বেছে নেবেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান রতনের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে টাকার ছড়াছড়ির মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করছেন। পাশাপাশি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাস মাস্তানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দেওয়ারও অভিযোগ করছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান রতন এ প্রতিবেদককে জানান, উন্নয়নের মার্কা নৌকা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া -৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মার্কা নৌকা। দল যেহেতু আমাকে মনোনীত করেছেন দলের সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আমার পক্ষে কাজ করবে। পাশাপাশি আমি টানা দুই বার চেয়ারম্যান হিসেবে এ ইউনিয়নের সকল জনগনের কল্যাণে কাজ করে আসছি। বিজয়নগর উপজেলায় যে পরিমাণ উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে এর মধ্যে আমার ইউনিয়নে অধিকাংশ উন্নয়ন করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ হলো শেখ হাসিনা সড়ক (সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া)। এছাড়াও বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। সুতরাং উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে এ ইউনিয়নের জনগন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন।
কর্মী সমর্থকদের বহর নিয়ে ভাটি এলাকার এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তাজুল ইসলাম।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশিষ্ট শালিসকারক ও দুই দুই বারের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, আমি আওয়ামীলীগের একজন কর্মী। আমার এলাকার ১৩ টি গ্রামের আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। কিন্তু আমার ১৩ গ্রামের আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষের অনুরোধে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। ভাটি এলাকার ১৩ গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ নিজ নিজ গ্রামে মিটিং করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাকে কথা দিয়েছেন, তারা আমাকে ভোট দেবেন। সবাই কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে কাজ করে বিজয়ী করবেন। আমার বিশ্বাস, আমার ভাটি এলাকার মানুষ বিগত সময়ের মতো এবারও তাদের কথা রাখবেন। আমি এ এলাকার সন্তান। সুতরাং নিজের সন্তানকে কেউ বিতারিত করবে না সেই বিশ্বাস আমার আছে। এই ভাটি এলাকার মানুষ আমার মরহুম পিতা আব্দুল বারীকে ৪৫ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী করেছেন, আমাকেও দুই বারের ১০ বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন। এবারও সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আমি ভাটি এলাকার একমাত্র প্রার্থী।নির্বাচনে আমি জয়ী হবো ইনশাল্লাহ।
এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সাধারন সদস্য (মেম্বার) পদে ৪৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য (নারী মেম্বার) পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply