সংবাদ শিরোনাম
চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার রেল যাতায়াত, যানজট ও লোডশেডিং সমস্যা সমাধানের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাগরিক ফোরামের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কক্সবাজারে লেফটেন্যান্ট তানজিম হত্যার ঘটনায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ৬ জন আটক গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের খসড়া তালিকায় ৭০৮ জন সিডস ফর দ্য ফিউচারের আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিতে চীনে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা সরাইলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।। আহত-৫০ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু রাঙামাটিতে পর্যটন ভ্রমণে তিন দিনের নিষেধাজ্ঞা ইবির সাবেক শিক্ষক ড. নকীব নসরুল্লাহ হলেন ইবির নতুন উপাচার্য নবীনগরে গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূর আত্মহত্যা
বিজয়নগরে যেসব কারনে হারলেন আ’লীগ প্রার্থীরা।। একজন হারালেন জামানত

বিজয়নগরে যেসব কারনে হারলেন আ’লীগ প্রার্থীরা।। একজন হারালেন জামানত

স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
গেল ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ইং রোজ রবিবার সারাদেশে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কঠোর তৎপরতায় কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই পুরো উপজেলা জুড়ে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিলো বেশ চোখে পড়ার মতো। যা বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের এমন সরব উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫ টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকী ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এতে করে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যাদেরকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে তারাই মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়। না হলে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বিজয়ী হওয়াটা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। এ মন্তব্য গুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের। ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ খুঁজতে কথা হয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে। পাশাপাশি কথা সাধারন নাগরিকদের সাথেও।
এদিকে ৫ টি ইউনিয়নে পরাজিত হওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে দুই ইউনিয়নে দুইজন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩ নম্বর হয়েছেন। তারা হলেন- বুধন্তী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ ইফতেহারুল ইসলাম শামীম, ইছাপুরা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আমিন। এ দুটি ইউনিয়নে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্য বিদ্রোহী প্রার্থীরাই। এ ইউনিয়ন দুটিতে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী ছায়িদুল ইসলাম (চশমা প্রতীক) ৭৩৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অপর বিদ্রোহী প্রার্থী মাহবুব আলম পান (ঘোড়া প্রতীক) ৪১৯৪ ভোট, আর আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইফতেহারুল ইসলাম শামীম পান মাত্র ১৪২৬ ভোট। বুধন্তী ইউনিয়নে মোট বৈধ ভোটার ছিলো ১৯ হাজার ১শত ৯৫ ভোট। কাস্টিং ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোটও পাননি আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। এতে তার মনোনয়নের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

নৌকা প্রতীকের বিজয়ী চেয়ারম্যানগন।

অপরদিকে একই উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউল হক বকুল (আনারস প্রতীক) ৩৫৪৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অপর বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ আক্তার হোসেন (ঘোড়া প্রতীক) ৩৩৫৬ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। আর আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিন (নৌকা প্রতীক) ১০৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। ইছাপুরা ইউনিয়নে মোট বৈধ ভোট কাস্টিং হয়েছে ৭৯৫৮ ভোট।
এদিকে অপর তিনটি ইউনিয়ন চম্পকনগর, পত্তন ও বিষ্ণুপুরে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীদের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। যার ফলে কিছুটা হলেও কোল (মানসম্মান) রক্ষা হয়েছে।
চম্পকনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নিখাঁদ ভদ্রলোক। এক কথায় তিনি একজন ভালো মানুষ। এর প্রমাণ তার ধারাবাহিক একের পর এক সফলতা। হামিদুল হক চম্পকনগর ইউনিয়নের সাটিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি তার ওয়ার্ডে দুইবার সিলেকশন মেম্বার। একবার নির্বাচিত মেম্বার থাকাকালীন এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান (রহিম আলী) মারা যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এ ইউনিয়নের উপনির্বাচনে হামিদুল হক পূনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর টানা দুইবার তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে পুনরায় তৃতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অল্প ভোটে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পরাজিত হন।

বিজয়ী বিদ্রোহী চেয়ারম্যানগন।

এদিকে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান রতন দলীয় প্রতীকে দুইবার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। একটানা দুইবারে ১০ বছর তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজ এলাকায় গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় পক্ষপাতিত্ব অবস্থান নেওয়ায় এলাকায় তার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী গ্রুপ তৈরি হয়। এছাড়া তার ইউনিয়নের ভাটি এলাকার একমাত্র লক্ষীমোড়া, বড়পুকুরপাড় ও মনিপুরে নামমাত্র যাওয়া আসা থাকলেও দক্ষিন লক্ষীমোড়া, গোয়ালখলা, মাশাউড়া, চাউড়াখলা শাহপুর, বঙ্গেরখলা, নহারমোড়া ও পারেঙ্গাবাড়ি এলাকায় তার পা পড়েনি। যে কারণের এসব এলাকার ভোটাররা তার প্রতি অসন্তুষ্ট। অপরদিকে ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ইং নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের পূর্বে গণসংযোগকালে নির্বাচনী এক সভায় কামরুজ্জামান রতনের একটি বক্তব্যের জেরধরে পত্তন ইউনিয়নের পুরো ভাটি এলাকার নাগরিকদের মধ্যে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঐ সভায় রতন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সামসুল ইসলাম ভুইয়ার আনারস প্রতীকের নাম উল্লেখ করে বলেন, “যদি আনারসটা না বাইর হইতো তাহলে আমার মনিপুর, বড়পুকুরপাড়, লক্ষীমুড়া ও গোয়ালখলায় ফেক-কাদা দিয়ে যাইতে হতো না। রতনের এ বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা মূহুর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। যে বক্তব্যে ভাটি এলাকার মানুষকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে মনে করেন ঐ এলাকার মানুষজন। আর রতনের এ বক্তব্যকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও ভাটি এলাকার একমাত্র প্রার্থী তাজুল ইসলাম ভাটি এলাকার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন এবং নির্বাচনে এর সুফলও পান তাজুল ইসলাম। তিনি ঘোড়া প্রতীকে ৬২০৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামরুজ্জামান রতন পান ৫৮৬৯ ভোট।

চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের একটি চিত্র।

অপরদিকে, উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আল মামুনকে পরাজিত করে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল উদ্দিন ভুইয়া (চশমা প্রতীক) বিজয়ী হন। এ ইউনিয়নে বাসিন্দারা জানান, জামালের ব্যক্তিগত দোষত্রুটি থাকলেও তিনি ইউনিয়নের সবর্ত্র রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও মসজিদের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি বিষ্ণুপুরে অনেক কাঁচা রাস্তা পাকা করেছেন। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি জামাল উদ্দিন ভুইয়া সকল মানুষের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারেন। মানুষের প্রয়োজনে নিজের সাধ্যমতো পাশে থাকারো চেষ্টা করেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকে তিনি প্রতিটি ভোটারের ঘরে ঘরে ঘুরেছেন। আর বলেছেন উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা। কিন্তু আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন এর উপর ভরসা করে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ পথসভা করেছেন। এ ইউনিয়নের অনেক পাড়া মহল্লায় তিনি যেতেও পারেননি। তিনি মনে করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী তিনি। দলের প্রতীকও তিনি পেয়েছেন। সুতরাং ডোর টু ডোর না গেলেও হবে। এসব কারনেই ভোটারদের পাশে টানতে পারেননি আল মামুন। সাধারণ মানুষ মনে করেন অনেকটা আত্ম-অহংকারের কারনেই তিনি বিজয়ী হতে পারেননি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com