মোঃ আব্দুল হান্নান,নাসিরনগর প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সালীশের রায় শুনে ব্রেইনষ্টোক করে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন নুর মিয়া নামে ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ।
গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নাসিরনগর উপজেলার চাপড়তলা ইউনিয়নের খান্দুরা গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
সম্প্রতি নাসিরনগর উপজেলার চাপড়তলা ইউনিয়নের খান্দুরা গ্রামের সবুর হোসেনের পুত্র মোঃ আপ্তুর হোসেনের ২ টি গরু চুরি হয়। চুরির রাতে নুর মিয়ার ছেলে মোঃ হিরাজ মিয়া (২৩) বিদেশ যাবার উদ্দেশ্যে জেলার কসবা উপজেলার কসবা গ্রামের মোঃ ফাহাদ মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেখানেই রাত্রিযাপন করেন।
এদিকে গরু চুরির ঘটনার তারিখ ও সময়ে বাড়িতে না থাকার পরও হিরাজ মিয়ার বৃদ্ধ পিতাকে এলাকার চিহ্নিত জুয়ারি মোঃ মলাই মিয়া উপস্থিত সালীশকারক ও সর্দার মাতাব্বরগনের সামনে বেইজ্জতি করে চেয়ার থেকে নামিয়ে মাঠিতে বসতে দেয়। পরে গরু চুরির বিষয়ে ৮০ বছরের বৃদ্ধ নুর মিয়াকে সেখানে নিয়ে উপস্থিত করে সালীশকারকদের কাউকে কোন কথা বলতে না দিয়েই ২ লক্ষ টাকা জরিমানার দাবী করেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনসুর আহমেদ ভুইয়া।
এসময় নিজের নির্দোষ পুত্রকে গরু চোর বানিয়ে ৫ দিনের স্থানীয় চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদসহ গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মাতাব্বর বৃদ্ধের নিকট থেকে ভয়ভীতি প্রর্তশন করে ১৫০ টাকার অলিখিত ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে সালীশে নগদ ২ লক্ষ টাকা দাবী করার সাথে সাথেই ব্রেইনষ্টোক করে মাঠিতে পড়ে গিয়ে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এ ঘটনায় বৃদ্ধ নুর মিয়া এ প্রতিনিধিকে জানান, সালীশে বসে আমার নির্দোষ ছেলেকে চোর বানিয়ে গ্রামের চিহ্নিত জুয়ারী মোঃ মলাই মিয়া উপস্থিত সালীশকারক, সর্দার মাতাব্বরগনের সামনে বেইজ্জতি করেন।
নুর মিয়ার মেয়ে আফিয়া খাতুন, ছেলে হিরাজ মিয়া ও নুর মিয়ার বিয়াইসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার তারিখ ও সময়ে নুর মিয়ার ছেলে হিরাজ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেখানেই রাত্রিযাপন করেন। তারপরও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ ও প্রভাবশালী সর্দারদের এমন অন্যায় আবদার ও রায়ের কথা শুনে ব্রেইনে মারাত্বক আঘাত পেয়ে ব্রেইনষ্টোক করেন বৃদ্ধ নুর মিয়া। এসময় তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপস্থিত লোকজন নাসিরনগর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর আধুনিক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক খন্দকার মোঃ আব্দুল কাইয়ুম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নুর মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বাসিন্দা মোঃ ফাহাদ মিয়া জানান, ঘটনার তারিখ ও সময়ে হিরাজ মিয়া আমার বাড়িতে বেড়াতে এসে রাত্রিযাপন করেন। কিন্তু তাকে কিভাবে চুরির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হলো। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন ফাহাদ।
এ বিষয়ে চাপরতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনসুর আহমেদ ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করে অলিখিত ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি যুবলীগ নেতা নাজিম, গরুর মালিক আপ্তুর হোসেন ও সর্দার মলাই মিয়া অলিখিত ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার কথা স্বীকার করেন।একজন চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ কত টাকা জরিমানা করতে পারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মনসুর বলেন, আমি জানি সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা।তাহলে আপনি ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান মনসুর বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তির জন্য এমন রায় করতে হয়।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply