সংবাদ শিরোনাম
ইউএনও ইরফান উদ্দিন’র নামে করা মিথ্যা মামলা খারিজ।। বাদী ও আইনজীবীকে আদালতের তিরস্কার ব্যতিক্রমী পথচলা : কোর্ট রোডে যন্ত্রণার মাঝেও দোয়া; আল আমীন শাহীন কমলগঞ্জে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা। কমলগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা সদস্য নিহতের ঘটনায় সিএনজি চালক আটক কসবায় কলেজ ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেছে।। ছাত্রদল নেতা আটক ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে মাদক মামলার যাবতজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা ইকরাম নিহত।। আটক-১ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে দুই যুবকের মৃত্যু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরু বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় দু’জন আহত নবীনগরে ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে অটোরিকশা চালক নিহত

হ্যাপী আজও লজ্জা পায়! ;এইচ.এম. সিরাজ

হ্যাপী আজও লজ্জা পায়! ;এইচ.এম. সিরাজ

স্কুল পাশ দিয়ে তখনকে সবেমাত্রই কলেজে অবতীর্ণ হয়েছি। মনের খোলা আকাশে সদায়ই উড়ে বেড়ায় রঙিন ঘুড়ি। সবকিছুতেই যেনো বিশেষ চাকচিক্যতা। যাকে বলে ‘চোখে রঙিন চশমা’। অন্যদিকে ‘অমুকের পুত কলেজ পড়ে’! নিকটজন এবং আত্মীয়-স্বজনদের মুখে এমনতর আনন্দ সম্বোধনে অনেকটা আমোদিত-ই হতাম। ছুটিতে গ্রামে গেলেই মায়ের কাছে জানতে পারতাম ভিন্নখানে বেড়াতে যাবার আহবানের কথা। আমার মামার বাড়ি এবং একমাত্র খালার বাড়ি নিজ গ্রামেই। তাই বেড়ানোর আসল মজা আমার কাছে অনেকটাই ছিলো ফিকে। এরপরও বেড়ানোর আনন্দ বলতে দুই বোনের বাড়ি। অপরদিকে এক বোনের বাড়ির গ্রামেই ফুফুর বাড়ি। ফলে ওই দুই গ্রাম ব্যতীত অন্য কোথাও আমার খুব একটা যাওয়াই হতো না। তাও আবার বেশিরভাগই যাওয়া হতো নেহায়েত পারিবারিক প্রয়োজনেই।
কোনো এক ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধের কথা। সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। তদানীন্তনকালে বেশ চুটিয়েই সংগঠন করতাম। শিল্প-সাহিত্যের পাশাপাশি বহু সামাজিকতার ঠিকা নিয়েছিলাম বললেও হয়তোবা অত্যুক্ত হবে না। সেবার বাড়িতে যাবার সময়ে সাথে নেয়া ব্যাগে অন্য সবকিছুর সাথে পরম যতনেই রাখা ছিলো একটি কার্ড। ইংরেজি নববর্ষ অত্যাসন্ন। পুরাতনকে বিদাই জানাতে এবং নতুনকে বরণে আয়োজনের খামতি রাখতে চাইবেন না কেউই। নতুন বছরকে উদযাপন করা হবে নানাবিধ আঙ্গীকে। নববর্ষের এমনি একটি অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র হিসেবেই কার্ডটি পাওয়া। এনালগ সেকালে কার্ডের ছিলো খুবই সমাদর। এজন্যই হয়তো এর বদৌলতে বিড়ম্বনাটাও একটু বেশি-ই হয়েছিলো!
চকচকে কার্ডটার উপরে কেবলই লিখা ছিলো ‘হ্যাপী নিউ ইয়ার’। এছাড়া আর কিচ্ছুটিই নয়। অবশ্য ভেতরে সবিস্তারে সবকিছুই ছিলো লিপিবদ্ধ। এদিকে আমাদের বাড়িতে জনৈকা আত্মিয়া বেড়াতে এসেছিলেন ওনার দুই মেয়েকে নিয়ে। তিনার বড় মেয়েটি আবার আমার ব্যাপারে ছিলো… যাকে সোজা বাংলায় বলে ‘তলে তলে তালতলাগামী’। বিষয়টি অতীব গোপনীয় এবং কনফিডেনসিয়াল হলেও তার পিঠাপিঠি ছোট বোনটি কিন্তু ঠিকই জানতো। সে যাই হোক, সত্যিকারার্থেই অবকাশকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে তাদের বেড়াতে আসা এবং ঠিক একই সময়ে শহর থেকে আমার বাড়ি যাওয়াটা যেনো ‘ওর’ কাছে ছিলো অনেকটা ‘বসন্ত বাতাস’। যদিও তখনকে ইংরেজি ডিসেম্বর মাস, প্রকৃতি তখনও ছিলো শিতের বুড়ির দখলেই।
আমি বরাবরই ছিলেম অনেকটা বাউণ্ডুলে প্রকৃতির। ঘর-বাইর সবকিছুই আমার কাছে ছিলো প্রায় একাকার। অবশ্য এখনও খুব একটা বদলে গেছি, এমনটাও নয় কিন্তু। সেবার সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামে গিয়ে বাড়িতে ঢুকে যথারীতি সাথের ব্যাগটাকে কোনোরকমে ঘরে রেখেই বেড়িয়ে গেলাম। এবাড়ি থেকে ওবাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছিলাম নেহায়েতই আনমনে। গ্রাম, গ্রামের মানুষকে ফেলে শহরে থাকতে গিয়ে যেনো হাপিয়ে ওঠতাম কিংবা ম্যালা দিন পর নিকটজনদের কাছে পেয়ে আনন্দে একরকম আত্মহারা হয়ে ওঠলাম। অপরদিকে আমার ব্যাগ হাতড়াতে গিয়ে ‘ওর’ দৃষ্টি পড়লো সেই কার্ডটিতে। যাকে বলে,- ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়’ আরকি। প্রথম শব্দটা দেখেই সে যেনো হলো বজ্রাহত! কারণ সবে সাত ক্লাশে পাঠরত ওর ছোটবোনটির নামটি যে ছিলো ‘হ্যাপী’। আর কার্ডেও লিখা ‘হ্যাপী…! সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলো না যে, আমি তারই ছোট বোনের–!
শেষতক ওর বেসুমার চাপাচাপিতেই হ্যাপীসমেত ওর মাকে বেড়ানোতে ইস্তফা দিতেই হয়। বাড়ি যেতে যেতে বিনা কারণে হ্যাপীকে তিন-তিনবার বড়বোনের মার পর্যন্ত হজম করতে হয়। ছ’মাস পর ওর বিয়ের সময় হ্যাপীকে পুরো বিষয়টিই সে খুলে বলেছিলো। হ্যাপী তখন দারুণ লজ্জা পায়, এমনকি কষ্টও। কারণ আমার প্রতি ওর আসক্তির বিষয়টা হ্যাপী বেশ ভালোমতোই জানতো। কেননা, হ্যাপীর মাধ্যমেই তো সে প্রথমবার বিষয়টি আমাকে করেছিলো অবহিত। কথাটির জবাবে হ্যাপীর মাধ্যমে এবং সরাসরিও আমি তাকে পড়ালেখায় মনোযোগী হতেই বলেছিলাম। আমার ওই ‘পড়ালেখায় মনোযোগী হও’ কথাটিকেই সে সম্পূর্ণ ‘পজেটিভ’ ভেবে নিয়েছিলো। মানে আমি তার প্রস্তাবটি ষোলআনা-ই মেনে নিয়েছি, আমি তারই হবো, এমনকি হয়েই গেছি- এরকমটাই ছিলো তার হিসেব। অপরদিকে তার পিঠাপিঠি ছোট বোন হ্যাপীও এক্কেবারে মনেপ্রাণেই আমাকে তার বোনের হবু——-!
যার মাধ্যমে নিজের মনের কথা আমায় বলেছিলো, সেই হ্যাপীকেই প্রতিপক্ষ ভেবেছিলো তার-ই বড় বোন! আর এই মনগড়া বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে সেদিনের মজার বেড়ানোটা করেছিলো এক্কেবারে বরবাদ! উল্টো ছোট বোন হ্যাপীকে মেরেওছিলো তিন-তিনবার। মিছিমিছি মনগড়া ভাবনা ভেবে আমাকে নিয়ে দু’বোনেরই আশায় গুড়ে বালি দিলো। অথচ ‘হ্যাপী নিউ ইয়ার’ খচিত কার্ডটা যে স্রেফ নববর্ষের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র ছিলো সেইটিও বুঝতে চায়নি, এমনকি পড়েও দেখেনি। হ্যাপী আজও বিষয়টি নিয়ে লজ্জা পায় এবং দারুণ মজাও করে। গতকাল হ্যাপী তার ছেলের পরীক্ষার ফলাফলের খবর জানানোকালেও এমনটাই বললো।
পাদটিকা:
হয়তোবা এই কারণেই কি না, আমি আজও কাউকেই ‘হ্যাপী নিউ ইয়ার’ খুব একটা জানাতে পারি না!
লেখক: এইচ.এম. সিরাজ, কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নির্বাহী সম্পাদক- দৈনিক প্রজাবন্ধু, গ্রন্থাগার সম্পাদক- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (সকাল ৮:২৬)
  • ১৩ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
  • ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com
Translate »