সংবাদ শিরোনাম
অদম্য মেধাবী; কমলগঞ্জে অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর

অদম্য মেধাবী; কমলগঞ্জে অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর

শাব্বির এলাহী কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
শুধুমাত্র টাকার অভাবে দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেধাবী এ দুই শিক্ষার্থীর নাম জান্নাতুল কারিমা ঋতু ও বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রী। দুজনই মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা। দুইজনই হতে চায় ডাক্তার। পারিবারিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তাদের সেই স্বপ্ন পূরন হওয়াটা এখন অবাস্তব হয়ে দাড়িয়েছে। জান্নাতুল কারিমা ঋতুর বাবা পেশায় কৃষক ও মা গৃহিনীর কাজ করেন। এ দিকে বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রীর বাবা ছাত্র পড়িয়ে জীবন পার করে দিয়ে বর্তমানে বেকার হয়ে আছেন ও মা ছোট একটা সরকারী চাকরী করেন। মায়ের চাকরির টাকা দিয়ে চলে পুরো সংসার ও তাদের পড়াশোনার খরচ। জান্নাতুল কারিমা ঋতু খুব হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। মা বাবা কষ্ট করে এ পর্যন্ত পড়িয়েছেন। সে জেএসসিতে ৪.২৮ এসএসসি পরীক্ষায় ২০২০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে কমলঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাশ করে। কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়ে থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে। কিন্তু পারিবারিক অবস্থা খারাপ থাকার কারনে ভর্তি বা পড়ালেখা করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। বাবা কৃষি কাজ করে পরিবার চালায়, মা সারাদিন বাড়ির কাজ করেন। পরিবারে ৬জন সদস্য, বাবার কৃষি কাজের উপর সবকিছুই চলে। তিনি আর পেরে উঠতে পারে না বলে জানান এ প্রতিবেদককে। সে হতে চায় ডাক্তার কিন্তু অর্থের অভাবে সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রীর পরিবার তার মায়ের উপর ভরসা করে চলছে। পিতা ঝুলন চক্রবর্তী দীর্ঘ ৩৫ বছর বিনা পারিশ্রমিকে ছাত্র ছাত্রীদের পড়িয়ে জীবন পার করেছেন। বর্ষার মা এর উপর‌ই তার পড়ালেখার ভরসা। মায়ের সামান্য আয়ে চলতো তাদের ৮ সদস্যের সংসার। তার মাঝে পড়ালেখার খরচ। ছোটকাল থেক‌ই বর্ষার স্বপ্ন ডাক্তার হবার। ফ্রীতে মানুষের সেবা দেবার। কিন্তু আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারনে ভর্তি বা পড়ালেখা বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
আলাপকালে জান্নাতুল কারিমা ঋতু জানায়, ‘আমি খুব গরিব পরিবারের সন্তান। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। ডাক্তার হয়ে মানুষকে ফ্রী চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো। সবাই তো স্বপ্ন দেখে, আমিও দেখলাম, কিন্তু আমার স্বপ্ন এমন যে তা পুরন হওয়ার নয়। ঋতু আরো বলেন, আমি ডাক্তার হতে চাই, আমায় পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিন। সরকারি বা বেসরকারি ও বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা চাই। আপনারা আমায় সহযোগীতা করুন।’
অন্যদিকে বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রী জানায়, আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। স্যাররা যখন ক্লাসে বলতেন তুমি কি হবা? উত্তরে বলতাম স্যার আমি ডাক্তার হবো। আজ যখন একটা পর্যায়ে আসলাম এখন সেই স্বপ্ন বাস্তব হবে কিনা সন্দেহ আছে। বাবা বেকার মা ছোট একটা পদে সরকারি চাকরি করেন। মায়ের আয়ের উপড় আমাদের সংসার চলে। কত বড় আমাদের একটা পরিবার। কিভাবে মা সংসার বা আমার পড়াশোর খরচ বহন করবে। সেটা নিয়ে চিন্তায় এখন দিন পার করছি। চেয়েছিলাম ডাক্তার হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবো। অসহায়দের পাশে থাকবো। আমি সকলের সহযোগীতা চাই। আমার স্বপ্ন পূরন করতে সরকারি বেসরকারি সকলের কাছে সহযোগীতা কামনা করছি।আমাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিন।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে অদম্য দুই মেধাবী ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের মা বাবা বাড়ির উঠোনে বসে আছেন। মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলে উত্তীর্ণ হওয়ায় চোখে মুখে হাসি থাকলেও দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন মেয়েদের ভর্তির টাকা নিয়ে। কিভাবে জোগার করবেন ভর্তির টাকা। নিজের ভিটে-বাড়ি, জমিজমাও নাই যে বিক্রি করবেন।
জান্নাতুল কারিমা ঋতুর বাবা ফখর উদ্দিন জানান, মেয়েটা ছোট থেকেই মেধাবী। যার কারণে ওর লেখাপড়ায় কোন ভাটা পড়ুক তা চাইনি। কষ্ট করেই পড়িয়ে যাচ্ছি। কিভাবে যে তার ভর্তি ফি জোগাড় করবো কোনো কুল কিনারা পাচ্ছি না। যদি কেউ সহযোগিতায় আসতেন, তাহলে মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হতো।
অশ্রুভরা চোখে আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রীর বাবা ঝুলন চক্রবর্তী জানায়, ‘মেয়েকে কখনো অভাব বুঝতে দেইনি। আমি বিনা পারিশ্রমিকে ৩৬টা বছর ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে জীবন পার করেছি। আমার স্ত্রী ছোট একটা পদে সরকারি চাকরি করে। তার বেতন দিয়ে আমাদের সংসার ও তার পড়াশোনার খরচ চালাতো। আমার মেয়েটা অনেক মেধাবী। ওর স্বপ্ন অনেক বড় চিকিৎসক হয়ে মানুষের পাশে থাকবে। কিন্তু অর্থের অভাবে আমার মেয়েটার এ স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে না যায়। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমি আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সহযোগীতা চাই।’
আলাপকালে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ জানান, ‘অদম্য মেধাবী দুই শিক্ষার্থী সেরা পুরষ্কার তাদের মা-বাবার পাশাপাশি আমাদের দিয়েছে। সেটা ভাগ্যের বিষয়। আমি আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগীতা করার সেটুকু করবো। এখন ভর্তিসহ লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। সমাজের বিত্তশালীদেরকে অনুরোধ করবো এ দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com