সংবাদ শিরোনাম
কসবায় সাইদুর হত্যার রহস্য উন্মোচন ; ঘাতক চাচা গ্রেফতার

কসবায় সাইদুর হত্যার রহস্য উন্মোচন ; ঘাতক চাচা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সাইদুর রহমান (১৯) নামে এক যুবককে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) প্রেস ব্রিফিং করে সংবাদমাধ্যম কে নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে রাত ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাঞ্চনমুড়ি গ্রামের সিএনজি চালক সাইদুর রহমান নিখোঁজ হয়। পরে বিভিন্ন স্থানে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে দুদিন পর ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে নিখোঁজ সাইদুরের মা কসবা থানায় নিখোঁজের ঘটনায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন। ডায়েরি নং-১৩২৫, তারিখ-৩১/১২/১৯ ইং।

পরে জিডির সূত্র ধরে কসবা থানার এসআই (নিরস্ত্র)/মোঃ আনোয়ার হোসাইন অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন। নিখোঁজের আত্মীয়-স্বজনও চারদিকে খোঁজাখুজি শুরু করে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে গত ০২ জানুয়ারি ২০২০ ইং তারিখ সকাল সাড়ে ৯টায়  কসবা পৌরসভাস্থ কাঞ্চনমুড়ি এলাকার ড্রেজার মাঠের পরিত্যক্ত বাথরুমের সেপ্টি ট্যাংকির ভিতরে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মৃতদেহের একটি হাত দেখা গেলে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পেয়ে কসবা থানা পুলিশ এবং জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোঃ আলমগীর হোসেন পিপিএম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃত দেহটি সেপ্টি ট্যাংকি হইতে উত্তোলন করে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে নিখোঁজ মোঃ সাইদুর রহমানের লাশ সনাক্ত করে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্ত শেষে লাশটি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। লাশটির মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন এবং গলায় বাম পাশ থেকে ধারালো অস্ত্রের কাটা চিহ্ন ছিল।
পরে নিহত সাইদুরের মা মোছাঃ হনুফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কসবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কসবা থানার মামলা নং-০৩, তারিখ ০২ জানুয়ারি ২০২০ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।

মামলা দায়েরের পর হত্যার রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে কসবা থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের টিম যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামী মোঃ রানা (২০), পিতা-দানু মিয়া, মাতা-হোসনেয়ারা বেগম, সাং-কাঞ্চনমুড়ি, থানা-কসবা, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে গতকাল ১২ জানুয়ারি ২০২০ ইং তারিখে কসবা থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারকৃত রানার কাছ থেকে নিহত সাইদুর রহমানের ব্যবহৃত একটি Vivo Y81 মডেলের এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করেন পুলিশ। ধৃত আসামী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা এবং লাশ গোপন করার কথা স্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে আসামীর দেখানো তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার ঘটনার ব্যবহৃত ক্ষুরটি কাঞ্চনমুড়ি সাকিনের ড্রেজার মাঠের পরিত্যক্ত বাথরুমের সেপ্টিক ট্যাংকির ভিতর হতে এবং নিহত মোঃ সাইদুর রহমান এর ব্যবহৃত মানিব্যাগটি কসবা পৌরসভাস্থ জনতা টাওয়ার সংলগ্ন ড্রেন হতে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক রানা আরও জানায় ,  নিহত সাইদুর আর তার বাড়ী পাশাপাশি। সাইদুর তার সম্পর্কে ভাতিজা হয়। সাইদুর তাকে কাকা বলে ডাকতো। তারা সমবয়সী বিধায় একসাথে চলাফেরা করতো। সাইদুর সিএনজি ড্রাইভার। সময় পাইলেই তারা একসাথে সিগারেট খায় ও জুয়া খেলে। জুয়াতে প্রায় সময় সাইদুর জিততো। এলাকায় চুরি এবং মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে সে (রানা) এলাকা ছেড়ে চলে আসে। সে শীতলপাড়ায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো এবং সেখানে কন্ট্রাক্টারের সাথে থাকতো। মাঝে মধ্যে গোপনে গোপনে নিজ বাড়ী কাঞ্চনমুড়ি যেতো। গত ২৯/১২/১৯খ্রিঃ অনুমান ০৫.০০ ঘটিকার দিকে সে সীমান্ত কমপ্লেক্স এর সামনে পৌর সিএনজি ষ্টেশনে যায়। সেখানে গিয়ে সাইদুরকে তার সিএনজির পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। তখন সাইদুর তাকে দুটি সিগারেট আনতে বলে। সে টাকা দিতে বললে সাইদুর মানিব্যাগ বের করে তাকে ১০ টাকা দেয়। ঐ সময় সাইদুরের মানিব্যাগে সে অনেক টাকা দেখে। ৪/৫ মাস পূর্বে সাইদুর একটি দামি মোবাইল সেট কিনে। তার সাথে থাকা টাকা ও মোবাইলের প্রতি তার খুব লোভ হয়। সে টাকা ও মোবাইল নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি করতে থাকে। এমন সময় সে সাইদুরকে প্রস্তাব দেয় যে, রাতে একটা লোক ৫০০ পিচ ইয়াবা নিয়ে আসবে এবং নোয়াগাঁও পৌছে দিলে তাদেরকে ৪,০০০/- টাকা দিবে। তখন সাইদুর সিএনজি দিয়া পৌছানোর কথা বললে সে বলে, সিএনজি লাগবে না; তারা ড্রেজার মাঠ হইতে কোনাকুনি  হেটে নোয়াগাঁও নিয়ে যাবে। তারা  সিএনজি ষ্টেশনে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে এবং সিগারেট খায়। পরে সাইদুর জানায় যে, সে সিএনজি বাড়িতে রেখে ৭.৩০ ঘটিকার সময় কাঞ্চনমুড়ি ড্রেজার মাঠে আসবে। এ কথা বলে সে বাড়ীতে চলে যায়। সে সাইদুরকে অনুমান ৭.৩০ ঘটিকার দিকে মাঠে আসার জন্য ফোন দেয়। পরে তারা দুইজনে ড্রেজার মাঠে মিলিত হয়।  মাঠে তারা কিছুক্ষন কথা বলে। পরে সাইদুর তার প্রেমিকার সাথে প্রায় ১৫/২০ মিনিট কথা বলতে থাকে। সে তাকে মারার জন্য পথ খোঁজতে থাকে। মাঠের পাশে একটি লাউয়ের মাচা ছিল যাতে বাঁশের খুটি ছিল। সাইদুর কথা বলার ফাঁকে সে একটি বাঁশের খুটি তুলে। সাইদুর কথা বলতে বলতে পিছনে ফিরলে সে তার মাথার পিছনে জোরে আঘাত করলে বাঁশটি ভেঙ্গে যায় এবং সাইদুর মাটিতে বসে পড়ে। তখন সে সাইদুরকে ঝাপটে ধরে এবং তার গলায় থাকা মাফলার দিয়ে গলায় পেচাইয়া ধরে। সাইদুর তখন বাচার জন্য চেষ্টা করলে ক্ষুর দিয়ে তার গলায় পোচ মারে। সাইদুর নিস্তেজ হয়ে যায়। সাইদুর এর মোবাইল এবং ম্যানিব্যাগ সে নিয়ে নেয়।  সাইদুর এর লাশ মাঠের পাশে মাদ্রাসার পরিত্যক্ত বাথরুমের সেপ্টিক ট্যাংকিতে টেনে এনে ফেলে দেয়। সাথে ক্ষুরটিও ঐ ট্যাংকিতে ফেলে দেয়। সেখান থেকে শীতলপাড়া এসে সাইফুল কন্ট্রক্টদারের সাথে ঘুমাইয়া পড়ে। শীতলপাড়া এলাকায় কন্ট্রাক্টদারের সাথে সে কাজ করতে থাকে। গত ০১/০১/২০২০খ্রিঃ তারিখ সন্ধায় ট্রেনে কুমিল্লায় তার আপন ভাই সুজনের নিকট যায়। সেখানে সে দুই দিন ছিল। সেখান থেকে তার পুরাতন কন্ট্রাক্টদারের সাথে কুমিল্লা দাউদকান্দি গিয়ে কলেজ ভবনের কাজ করে।গতকাল ১২-০১-২০২০ খ্রিঃ সন্ধ্যায় কসবা থানাধীন শীতলপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ তাকে সাইদুর এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সহ গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আসামীর দেখানো মতে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ক্ষুরটি কাঞ্চনমুড়ি  সাকিনের ড্রেজার মাঠের পরিত্যাক্ত বাথরুমের সেপ্টিক ট্যাংকির ভিতর হতে এবং নিহত মোঃ সাইদুর রহমান এর ব্যবহৃত মানিব্যাগটি কসবা পৌরসভাস্থ জনতা টাওয়ার সংলগ্ন ড্রেন হতে উদ্ধার করা হয়। 
আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইন্স ড্রীলশেডে  উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। এসময় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।          

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com