সংবাদ শিরোনাম
মুন্সীগঞ্জের হাসপাতালে চলছে করােনার বিরুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধ

মুন্সীগঞ্জের হাসপাতালে চলছে করােনার বিরুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধ

মােঃ আল মামুন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি  

‘আমরা আমাদের সাধ্যমত সর্বােচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের কাজে কােন গাফলতি নেই, যতটুকু আছে তা দিয়েই আন্তরিকভাবেই কাজ করছে মুন্সীগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগ। আমরা চাইনা একজন মানুষও মারা যাক, কােন ডাক্তারই চায়না। যদি আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয় তাহলে আমরাও জনসাধারণকে সুরক্ষিত রাখতে পারবাে। সরকারী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের সাহায্য করুন। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী এই মহামারী দক্ষিন এশিয়াতে ২ বছর থাকতে পারে। আমাদের অবশ্যই বাস্তবমুখী পরিকল্পনা দরকার।’
মুঠােফানে এভাবেই দৃঢ়ভাবে নিজের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছিলেন আইসােলেশনে থাকা ডাঃ মৃদুল কুমার দাস প্রিন্স। মুন্সীগঞ্জ করােনা ওয়ার্ডে ১০ দিন দায়িত্ব পালন শেষে নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিন আইসােলেশনে থাকতে হচ্ছে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স আর সংশ্লিষ্টদের। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তারা সেবা দিচ্ছেন করােনা রােগীদের এবং চালু আছে হাসপাতালের অন্য সেবাও বলে জানালন এই সম্মুখ যােদ্ধা।
ডাঃ মৃদুল জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মতো গত ২২ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের পূর্বপাশে নব নির্মিত ভবন (যা আনুষ্ঠানিক উদ্বােধন হয়নি) মুন্সীগঞ্জের করােনা ওয়ার্ড চালু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মােতাবেক রােস্টার ও রােটেশনের মাধ্যমে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়দের মাধ্যমে দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। প্রথমদিকে ছয় তলা ভবনের ২য় ও ৩য় তলায় করােনা রােগীদের জন্য ওয়ার্ড ও কেবিনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। রােগীর চাপ বাড়লে সেবার পরিসর আরাে বাড়ােনার পরিকল্পনাও আছে।
মুন্সীগঞ্জে করােনা ওয়ার্ডে প্রথম দফায় দায়িত্ব পালন করছেন ডাঃ মৃদুল কুমার দাস, ডাঃ আসাদুজ্জামান, ডাঃ মাে. তাজুল ইসলাম, ডাঃ মাে.বিদ্যুৎ হােসেন। সাথে ছিলেন চারজন স্টাফ নার্স ও দুইজন এমএলএসএস।১ম দফায় দায়িত্বরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স করােনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। ঐ টিমের সবাই সরকার নির্ধারিত ভবনে কােয়ারেন্টিনে আছেন।
দ্বিতীয় দফায় কাজ করছেন ডাঃ আরাফাত, ডাঃ সম্পা, ডাঃ শিমুল, ডাঃ ফাতেমা এবং ৪জন নার্স ও ২ জন এমএলএসএস। ঘুরে এভাবেই আবার ১ম টিম দায়িত্ব পালন করবে। 
করােনার সম্মুখ যােদ্ধারা বললেন কিছু কষ্টের কথা- ‘দেখুন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমরা দায়িত্ব পালন করতে পিছপা হচ্ছিনা। কিন্তু আমাদের জন্য সরবরাহকৃত নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলাে আমরা ব্যাবহার করতে পারিনি। সেগুলাে আমাদের কাছে মানসম্পন্ন মনে হয়নি। নিজেরা অন্য মাধ্যম থেকে পিপিই ও মাক্স সংগ্রহ করে দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে বা আক্রান্ত হলে মানুষকে সেবা দিবাে কিভাবে ? শ্বাস কষ্টের চিকিৎসা দেয়ার সরঞ্জাম আমাদের এখানে নেই। মধ্যম অবস্থার রােগীদের আমরা এখানে চিকিৎসা দিতে পারছি। জরুরী রােগীদের রেফার্ড করে দিতে হচ্ছে। আমাদের ডাক্তার যথেষ্ট নেই তাই সেবা দিতে হলে আমাদের আগে সুস্থ থাকতে হবে।
গতকাল (৮ মে) পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জে চিকিৎসক, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ২৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এদের অধিকাংশকেই বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যাদের এখানে চিকিৎসা সম্ভব না তাদের রেফার্ড করা হচ্ছে। বর্তমানে করােনা ওয়ার্ডে ৭ জন রােগী ভর্তি আছেন। 
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মােঃ শাখাওয়াত হােসেন জানান, আমরা খুব বিপদে আছি। মুন্সীগঞ্জ ঝুকিপূর্ন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার এবং বেশ কয়েকজন সিনিয়র নার্স কােয়ারেন্টিনে আছেন। দুইজন অ্যাম্বুল্যান্সে ড্রাইভার ও তিন কর্মচারী ও একজন নার্সের করােনা পজেটিভ। আমার নিজেরও স্বাস্থ্য স্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। সকলের কাছে অনুরােধ সবাই যেন সরকার নির্দেশিত স্বাস্থবিধি মেনে চলে। আমাদের জন্য দােয়া করবেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com