স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডিব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার (কাজী) মাওলানা আবুল কালামের সহকারী আল আমিন এর সহযোগীতায় জোরপূর্বক এক গৃহবধূকে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের উত্তর শেরপুর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় কাজী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
জানা যায়, গত ২০১৫ ইং সনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের হতদরিদ্র মুজিবুল হকের মেয়ে হাদিসা আক্তারের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার উত্তর শেরপুর গ্রামের মোঃ তাজুল ইসলামের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলামের ইসলামী শরাশরিয়ত মতে ৭ লাখ টাকা দেন মোহরাণা ধার্য্যে কাবিননামা রেজিস্ট্রি করে শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের কিছুদিন পর থেকে হাদিসার স্বামী সাইফুল ইসলাম বিভিন্ন সময় মারধোর ও অত্যাচার নির্যাতন করেন। পরে সাইফুল ইসলাম কিছু না বলেই মালয়েশিয়া চলে যান। মালয়েশিয়া যাওয়ার পর থেকে হাদিসার স্বামী সাইফুল কোন রকম যোগাযোগ বা ভরণপোষণ করেনি। এদিকে গত দুইতিন বছর আগে সাইফুল মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে পূনরায় বিয়ে করে সংসার করলেও হাদিসার কোন খোঁজখবর ও ভরণপোষণ না করায় অসহায় গৃহবধূ নিরুপায় হয়ে স্বামী সাইফুল ইসলাম সহ পাঁচ জনের নামে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে হাদিসার স্বামী সাইফুল ইসলাম নিজে ও বিভিন্ন লোকজন দিয়ে মামলা তুলে নিতে মোবাইল ফোনে মারধোরসহ খুন করে ফেলার হুমকিধামকি দিয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২১ অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে হাদিসা নামে ঐ গৃহবধূকে কাবিনের ৭ লাখ টাকার মধ্যে ৫ টাকা পরিশোধের কথা স্বামী সাইফুল ইসলাম এর পৌর এলাকার শেরপুরে নিয়ে আসেন। গৃহবধূ হাদিসা বিষয়টি নিষ্পত্তির স্বার্থে তার প্রতিবেশী এক চাচাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরে হাদিসার স্বামী সাইফুল ইসলাম, জনৈক নাজির মিয়া সহ কয়েকজন মিলে গৃহবধূ ও তার চাচাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কথা মতো সকল কাগজপত্রে স্বাক্ষর না করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে গৃহবধূ ও তার চাচা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে তাদের কথা মতো নিকাহ রেজিস্টার এর সহকারী আল আমিন এর দেখানো তালাকনামার কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। পরে গৃহবধূ ও তার চাচা সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন। এবং তার সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে এর বিচার দাবী করেন।
গৃহবধূ হাদিসা আত্তার জানান, তাকে ও তার চাচাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্ট্যাম্প, সাদা কাগজ ও তালাকনামায় স্বাক্ষর করানো ও প্রতারণার অভিযোগ করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার (কাজী) মাওলানা আবুল কালামের সহকারী আল আমিন কোন মন্তব্য না করেই এ প্রতিবরদকের কল কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার (কাজী) মাওলানা আবুল কালাম এ প্রতিবেদককে জানান, জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে কিনা আমি সেটা জানিনা। তবে এরকম একটি ঘটনা আমি শুনেছি, মেয়েকে কাবিনের বিপরীতে যে টাকা দেওয়ার কথা ছিলো তা মেয়েটিকে দেয়নি। আমি এই তালাকনামা রেজিস্ট্রি করিনি এটা আমি রেজিস্ট্রি করবো না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ আইনজীবী মোঃ ওসমান গনি বলেন, গৃহবধূকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার দায়ে নিকাহ রেজিস্ট্রি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। এর জন্য এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে নিকাহ্ রেজিস্টার এর এমন প্রতারণার বিচার দাবী আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভোক্তভোগীরা।
এদিকে, ছেলে পক্ষের সাথে যোগসাজশে জোরপূর্বক তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার প্রতারণার অভিযোগ এর আগেও কাজী আবুল কালামের বিরুদ্ধে উঠেছিল। ঐসময় ঐ ঘটনায় কাজীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়েছিল।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply