সময়নিউজবিডি রিপোর্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের গৌরমন্দিরে ঘুমন্ত অবস্থায় লিটন ঘোষ-(৪৮) নামে এক ব্যক্তির গলা থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে থানায় নিয়ে হাজির হওয়া লবু লাল দাস-(৫০) একজন ঠান্ডা মাথার খুনী।
এলাকাবাসী জানায়, এ ঘটনার আগেও সে আরো দুটি খুন করেছিলো, তবে পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় আগে একটি খুনের মামলা আছে।
এদিকে লিটন ঘোষ হত্যা ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই স্বপন চন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় লবুু লাল দাসকে একমাত্র আসামী করা হয়। পরে বুধবার সকালে খুনী লবু লাল দাসকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, লবু লাল দাস একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। সে ভারতে অবস্থানকালে তার স্ত্রীকে হত্যা করে দেশে চলে আসে। দেশে এসে রাজু দাস নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের দায়ে কিছু দিন জেল হাজতে ছিলো।২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি লবু লাল দাস তার চাচা, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মতিলাল দাসকে খুন করে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মহিতোষ লাল দাস বাদি হয়ে লবু লাল দাসকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় কয়েক বছর কারাবাস করে বছর দুয়েক আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, লবু লাল দাস এবং লিটন ঘোষ দুজনেই মাদকসেবী ছিলেন। দু‘জনই ভবঘুরে প্রকৃতির। নাসিরনগর বাজারে তারা ঘুরাঘুরি করতো। বাজারের দোকানীদের ফুট-ফরমাশ করতো।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় নাসিরনগরের গৌরমন্দিরের নাট মন্দিরে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় লিটন ঘোষের গলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তার মাথা ব্যাগে করে থানায় গিয়ে হাজির হন লবু লাল দাস।
নিহত লিটন ঘোষ কিশারগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর এলাকার মতি ঘোষের ছেলে। তিনি নাসিরনগর সদরের ঘোষ পাড়ায় বোনের বাড়িতে থেকে কাজ করতেন। ঘাতক লবু লাল দাস নাসিরনগর উপজেলা সদরের পশ্চিম পাড়ার পরমানন্দ দাসের ছেলে।
এ ব্যাপারে নাসিরনগরের দাস পাড়ার বাসিন্দা ও লবু লাল দাসের প্রতিবেশী পিটু দাস, সুভাস দাস, ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস, উত্তম দাস ও অমৃত লাল দাস বলেন, ২০১২ সালে লবু লাল দাস তার চাচা মতিলাল দাসকে খুন করে ভারত চলে যায়। ভারত গিয়ে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করতে থাকে। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর তার স্ত্রীকে খুন করে আবার দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে আসার পর মতিলাল দাসকে খুনের দায়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গত বছর দুয়েক আগে সে কারাগার থেকে বের হয়ে আসে। এর পর থেকে সে নাসিরনগর বাজারেই থাকতো এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করতো।
তারা বলেন, মতিলাল দাসকে খুন করার জন্য পঞ্চায়েত বসে লবু লাল দাসকে সমাজচ্যুত করা হয়। সে জন্য কারাগার থেকে বের হয়ে লবু আর দাস পাড়ায় যেত পারতোনা।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নাসিরনগর থানার ওসি তদন্ত কবির আহমেদ বলেন , হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তিনি বলেন, নিহত লিটন ঘোষ এবং খুনী লবু লাল দাস দু’জনই মাদকসেবী ও ভবঘুরে ছিলেন। লিটন মাঝে মাঝে কুলিয়ারচর থেকে নাসিরনগর বোনের বাড়িতে আসতেন। সপ্তাহখানেক থেকে আবার চলে যেতেন। লবু ও লিটনের মধ্যে তেমন সম্পর্কও ছিলোনা। তিনি বলেন, লবু লাল দাস এর আগে আরো দুটি খুন করেছেন এমনটি লোকজন বলাবলি করলেও নাসিরনগর থানায় আগের একটি খুনের মামলার রেকর্ড আছে। ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি লবু লাল দাস তার চাচা মতিলাল দাসকে খুন করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, খুনের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনরর চেষ্টা চলছে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply