স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
জাতীয় সমাজসেবা দিবস উপলক্ষে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শাহআলমকে সমাজসেবা সম্মাননা দেয়া হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট কমিটির সকল নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতেই দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার। তিনিজানান, গত ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবসে সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ দৌলা খাঁন এ সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন মোঃ শাহআলমের হাতে।
বুধবার (০৬ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আল-মামুন সরকার এই দাবি করেন।
মত বিনিময় সভায় আল-মামুন সরকার আরো বলেন, শাহআলমকে সম্মাননা দেয়া নিয়ে কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় বিরুপ সংবাদ ছাপা হয়েছে।এসবের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্যই আজকে সাংবাদিকদের সাথে এই মত বিনিময় সভা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে শাহআলম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস থাকাকালে ভয়াবহ বন্যার সময় শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র গুলিতে জেলা প্রশাসন ও প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃক প্রতিদিন খাদ্য বিতরনের ২০ সদস্যের কমিটির টীম লিডার হিসেবে সমাজসেবা কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৪ সালে ইউনিসেফ পরিচালিত বস্তি উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেন। মোঃ শাহআলম ১৯৯৬ সাল থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সমাজকর্মী। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, সমাজসেবা সম্মাননা দেয়ার জন্য গঠিত কমিটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমাজকল্যান সংসদের চেয়ারম্যান ও শহর সমাজসেবা প্রকল্পের প্রজেক্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি ( আল-মামুন সরকার) ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। কমিটির সকল সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে সম্মাননার জন্য শাহআলমের নাম প্রস্তাব করা হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও অবহিত করা হয়। এর পরই গত ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবসে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান শাহআলমের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
মতবিনিময় সভায় আল মামুন সরকার আরো বলেন, এই সংবাদটি একটি অনলাইন পোর্টালে ছাপা হওয়ার পর জেলা প্রশাসক রহস্যজনক কারনে সমাজসেবার উপ-পরিচালককে শাহআলমকে সম্মাননা দেয়ার কারন ব্যাখ্যা করার জন্য চিঠি দেন ও গনমাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে চলেন।
আল-মামুন সরকার প্রশ্ন রেখে বলেন, সমাজসেবা সম্মাননা প্রদানের দিন সকালে স্থানীয় অবকাশের সামনে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ দৌলা খান মোঃ শাহআলমকে নিয়ে হিজড়া ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক শাহআলমের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন। তাহলে কি শাহআলম সকালে ভালো ছিলেন, বিকেলেই খারাপ হয়ে গেলেন?
আল-মামুন সরকার আরো বলেন, করোনা ভাইরাস ভাইরাসের কারনে লকডাউনের সময় হতদরিদ্রদের দেয়ার জন্য ওএমএসের কার্ডধারীদের তালিকায় শাহআলমের পরিবার ও স্থানীয় ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের পরিবারের কয়েকজনের নাম উঠে। কিন্তু ওই কার্ডধারীদের মধ্যে ওএমএসের চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই কার্ড নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হওয়ায় তালিকা সংশোধন করে দুই পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেয়া হয় ও স্বচ্ছতার জন্য ১০ নং ওয়ার্ডে থাকা ডিলারশীপ বাতিল করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে শাহআলম ডিলারশীপ ফেরত পেলে রাষ্ট্রপক্ষ এ ব্যাপারে আপিল করে। আগামী ১৬ এপ্রিল এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই শাহআলমকে সমাজসেবা সম্মাননা নিয়ে কোন বির্তকের অবকাশ নেই। সংশ্লিষ্ট কমিটির সকলের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তের আলোকে শাহআলমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলো।
এদিকে এর আগে মতবিনিময় সভায় মোঃ শাহআলম তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে শাহআলম বলেন, তিনি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকের পাশাপাশি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক (সেক্রেটারী), ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক, জেলা রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক, সুইড ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, কাউতলী শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কাউতলী ঈদগাহ মাঠের সাধারন সম্পাদক ও কাউতলী কবরস্থান কমিটির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস ছিলেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাসুদুল হাসান তাপস বলেন, মোঃ শাহআলম সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষিত একজন সমাজকর্মীর পাশাপাশি তিনি আমাদের শিশু পরিবার ব্যবস্থাপনা কমিটিরও সদস্য। এছাড়া আমাদের শিশু পরিবার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। তবে তার ওএমএস ডিলারশীপ বাতিলের তথ্যটি আমাদের জানা ছিল না।
মতবিনিময় সভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খান খোকন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ভূইয়া, জেলা নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি হাজী সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply