স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ঢাকা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ও চট্রগ্রামের হাটহাজারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি হামলা ও ৫ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর গুজবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছেন কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা।
তাদের ব্যাপক তাণ্ডব ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে অচল করে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এতে আশিক (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। তবে কোথায় কিভাবে সে মারা গেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত আশিক জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকার মোঃ সাগর মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল ৩ টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এলাকায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাংচুর, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪ টায় রেলওয়ে স্টেশনের কন্ট্রোল প্যানেল (সিগনাল) সহ কয়েকটি কক্ষে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করেন বিক্ষুব্ধরা। সন্ধ্যা ৬ টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬ টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এসময় রেলওয়ে স্টেশনের কয়েকটি কক্ষে আগুন জ্বলছিলো।
অপরদিকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের হামলায় পৃথক স্থানে তিন পুলিশ ও দুই সাংবাদিকসহ ৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ডেইলি স্টার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মাসুক হৃদয় (৩৫), একুশে টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মীর মোঃ শাহীন (৪) এবং জেলা শহরের পীরবাড়ি পুলিশ লাইনে বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মহিউদ্দিন (২৫), পুলিশ সদস্য সোহেল (২২) ও পুলিশ সদস্য নুরে আলম (৩৫) আহত হয়। এদের মধ্যে আলম নামে এক পুলিশ সদস্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সোয়েব আহমেদ জানান, বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে রাত পৌণে ৯ টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়েছেন। আটকা পড়া ট্রেনের মধ্যে নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর উপকুল এক্সপ্রেস নরসিংদীর মিথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশনে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর মহানগর এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলি এক্সপ্রেস আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকাগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস হরষপুর ও ঢাকাগামী আন্তঃনগর মহানগর গোধুলি কসবা ও চট্রগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস দৌলতকান্দি। এতে চরম ভোগান্তি ও দূর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
বিক্ষোভকারী জেলা প্রশাসকের বাসভবন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সার্কিট হাউস, পৌরসভার ভবন, টিএনটি অফিস, সদর মডেল থানা, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ ভাষা চত্বর, শিল্পকলা একাডেমি, পৌর আধুনিক সুপার মার্কেট ও পৌরমুক্তমঞ্চ এলাকায় ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
সন্ধ্যার পর থেকে পুরো শহর জুড়ে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে বিজিবির কয়েকটি গাড়ি শহরে টহল দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুর রহিম এ প্রতিবেদককে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চেষ্টা করছেন এবং মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করারও চেষ্টা চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ শওকত হোসেন জানান, এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তবে কিভাবে বা কিসের আঘাতে সে মারা গেছে তা এখনও জানা যায়নি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply